ইলিশ আর চিংড়ি। লড়ালড়ি চিরকালের। কিন্তু দুটি মাছই অধিকাংশ পেটুক বাঙালির কাছে অতি প্রিয়। এই প্রতিবেদনে থাকছে দুটি মাছের দুটি রেসিপি। দাঁড়ান, দাঁড়ান তার আগে একটু গপ্পো শুনিয়ে নিই। তার শেষেই দিচ্ছি রেসিপি।
ইস্টবেঙ্গল আর মোহনবাগানের মধ্যে শতাব্দী প্রাচীন ফুটবল-মহাযুদ্ধের আরেকটা নামই তো ইলিশ বনাম চিংড়ির লড়াই। ঠিক যেমনটা বাঙাল বনাম ঘটি লড়াই। কিন্তু অগুনতি মানুষ আছেন যাঁরা চিংড়ি-ইলিশ, দু’টোই খেতে সমান ভালোবাসেন। আবার এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা ইস্টবেঙ্গল সমর্থক, কিন্তু চিংড়ি খান চেটেপুটে, ইংলিশ ছুঁয়েও দেখেন না! উল্টোটাও ঠিক। মোহনবাগান সাপোর্টার, অথচ খাবারের পাতে ইলিশ পেলে আনন্দে আটখানা, চিংড়িতে অ্যালার্জি!
উদাহরণ? স্বয়ং চুনী গোস্বামী। মনে প্রাণে মোহনবাগানী। কিন্তু সব মাছের মধ্যে সবচেয়ে ভালবাসতেন ইংলিশ খেতে। চিংড়ি? ছুঁয়েও দেখতেন না। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় আবার ঠিক উল্টো। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমর্থক। তবে চিংড়ি ভীষণ প্রিয় মাছ।
ওই যাহ্, চিংড়ি মাছ লিখতে গিয়ে মনে এল, ইলিশ-ভক্তরা চিংড়িকে মাছ-ই মনে করে না। চিংড়ি-প্রিয়দের খোঁচা মেরে বলেন, চিংড়ি তো জলের পোকা!
এর পাল্টা হিসেবে বলা যায়, কাঁচা ইংলিশ মাছের গন্ধে বা ইলিশ ভাজার গন্ধে অনেকে সেই জায়গা ছেড়ে পালান! প্রয়াত প্রবাদপ্রতিম কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বর্গীয় স্ত্রী আরতি একবার কথা প্রসঙ্গে ফাঁস করেছিলেন, তিনি ইলিশ মাছ ভাজলে পিকে নাকি বাড়ির রান্নাঘর থেকে যে ঘরটা সবচেয়ে দূরে, সেখানে থাকতেন। পিকে-র চির প্রতিদ্বন্দ্বী কোচ অমল দত্ত আবার ইলিশ-চিংড়ি, দুটোই খেতে পছন্দ করতেন। প্রয়াত অমলের অন্যতম প্রিয় শিষ্য সমরেশ চৌধুরী যেন খাবার ব্যাপারেও গুরুর অনুগামী! সাতাত্তরের লিগে পিকে-র সেই গরমাগরম মোহনবাগানকে দু'গোলে হারিয়ে শীতল করে দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল অমলের ইস্টবেঙ্গল। চোখজুড়নো গোল করেছিলেন সমরেশ, ময়দানের পিন্টু চৌধুরী। বাড়িতে ডেকে কোচ তাঁর প্রিয় ফুটবলারকে খাইয়েছিলেন। মেনুতে ইলিশ-চিংড়ি, দুই-ই ছিল। খেতে খেতে পিন্টু বলেছিলেন— ‘অমলদা, ইলিশের মাথা আর চিংড়ির খোলাগুলা নাই? বৌদিরে কন না, কচুশাক দিয়া ইলিশের মাথার চচ্চড়ি আর চিংড়ির খোলাগুলা পেঁয়াজ-রসুন-লঙ্কা চটকাইয়া কড়া কইরা ভাজতে। উফ্, দুটারই যা স্বাদ না খাইতে!’
তবে ইংলিশ ও চিংড়ির সাধারণত যে পদগুলো খেয়ে থাকেন সবাই, তার বাইরের দু’টি পদের রন্ধন প্রণালী রইল এখানে।
স্মোকড ইংলিশ
উপকরণ
ইংলিশ মাছ - ৪ টুকরো
হলুদ গুঁড়ো - ১ চা-চামচ
টকদই - ৩ টেবিল চামচ
কালোজিরে - আধ চা-চামচ
সরষের তেল - ৪ টেবিল চামচ
নুন - স্বাদ মতো
কাঁচা লঙ্কা - আন্দাজ মতো কয়েকটা
ঘি - ১ টেবিল চামচ
কাঠকয়লা - ২ টুকরো
প্রণালী -
১. জ্বলন্ত গ্যাস ওভেনের ওপর চাপানো শুকনো কড়াইয়ে তেল ঢালুন। তেল গরম হলে কালো জিরে ফোড়ন দিন।
২. মধ্যে দিন সামান্য হলুদ গুঁড়ো, নুন। জল ঢেলে ফুটতে দিন।
৩. ফুটে উঠলে নুন-হলুদ মাখানো ইলিশ মাছ দিয়ে দিন তাতে। ওপরে কয়েকটা কাঁচা লঙ্কা ছড়িয়ে দিন।
৪. চাপা দিয়ে ফুটতে দিন।
৫. আঁচ কম করে ঢাকনা খুলে ওপর থেকে ফ্যাটানো টক দই ঢেলে দিন।
৬. ছোট একটা বাটিতে জ্বলন্ত কাঠকয়লা রেখে তার ওপর ঘি ঢেলে সেই বাটি কড়াইয়ের ঠিক মাঝখানে বসান।
৭. মিনিট পাঁচেক ওই ভাবে রেখে তারপর বাটিটা তুলে নিন।
৮. কড়াই থেকে গরম গরম স্মোকড ইলিশ পরিবেশন করুন।
আম-চিংড়ি
উপকরণ
চিংড়ি - ২৫০ গ্রাম
সরষে বীজ - ২ চামচ
কাঁচা আমের রস - ৩ চামচ
কাঁচা লঙ্কা - ৪টে
সরষের তেল - ১ চামচ
লঙ্কা গুঁড়ো - আধ চামচ
হলুদ গুঁড়ো - ১ চামচ
নুন - স্বাদ অনুযায়ী
চিনি - ১ চামচ
নারকেলের টুকরো - ৪টে
নারকেলের দুধ - ১ কাপ
প্রণালী
১. চিংড়িগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করুন।
২. মিক্সিতে সরষের বীজ, কাঁচা লঙ্কা, নারকোলের টুকরো ও অল্প জল মিশিয়ে পেস্ট বানান।
৩. কড়াইতে তেল গরম করুন। তাতে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ভেজে নিন। এবং চিংড়িগুলো দিয়ে দিন। আঁচ কমিয়ে ভাজুন।
৪. মাছের রং খয়েরি হয়ে উঠলে তাতে আমের রস, নুন মেশান। ভালো করে নাড়তে থাকুন।
৫. আমের রসের গন্ধ হালকা হয়ে এলে তাতে আগে তৈরি রাখা পেস্ট ঢেলে দিন। মেশান।
৬. হালকা আঁচে সব ভালো করে নাড়তে থাকুন।
৭. এরপর তাতে নারকেলের দুধ ও চিনি মিশিয়ে আবার নাড়তে থাকুন।
৮. অল্প পরে কড়াইটা চাপা দিয়ে দিন।
৯. পাঁচ মিনিট পর উনুনের আঁচ বন্ধ করুন।
১০. আম-চিংড়ি রেডি। গরম ভাতে পরিবেশন করুন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy