Advertisement
Durga Puja 2022

বহু দেশ ঘুরে তিলে তিলে জমিয়েছি রান্নার এ ভাণ্ডার, বাঁচিয়ে রাখব তাকে

হারিয়ে যেতে দেব না সেই সব মোচার চণকান্ন, কবাব মির্জাফা, ইলিশের ননীবাহার, ইলিশের উল্লাস, চিংড়ির পুরপুরি, সাগর দইয়ের মতো রান্নাগুলিকে।

Subhajit Bhattacharya
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:১৬
Share: Save:

মাটি এসেছিল অনেক আগে। সাথে খড়, বাঁশ আর দড়ি। কাঠামো তৈরি হলো, তার উপরে লাগল মাটির প্রলেপের পর প্রলেপ। এ বার বর্ষা বড় বেশি। প্রদীপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি এক ঠায়, যদি তার শিখায় এতটুকুও তাড়াতাড়ি শুকায় ভিজে পলি...।

শরীর রূপ পায় আগে। তাঁর মুখটা রাখা ছিল উল্টো করে খানিক দূরে। যেন তিনি নিজেই আয়ত নেত্র মেলে দেখছেন নিজের মৃণ্ময়ীরূপ গড়ে তোলা। তাই তো দেখেন তিনি- নিজেই গড়েন নিজেকে, আমাদের মনের মাধুরী হয়ে। মৃৎশিল্পী পালকাকার হাত তো নিমিত্ত মাত্র।

অসুরকে এ বার মরতেই হবে আরও একবার। মহিষাসুরমর্দিনী জাগছেন ওই...। তাঁর রঙ তপ্তকাঞ্চন। লক্ষ্মী-কার্তিক কমলবরণ, সরস্বতী-গণপতি মর্মরমূরতি। হিংসায় অসুর সবুজ, আর চিরস্থিতধী মহেশ্বর বৈরাগ্যে ভস্মাবৃত। আর আমি? মধুময় ধরণীর ধুলির এক বিস্মিত প্রদীপবাহক মাত্র।

আর তার পর মায়ের মুখ লেগেছে গলার ’পরে। ধীরে ধীরে রঙ লাগল গায়ে। কত না যত্নে পালকাকা পাতলা তুলি দিয়ে এঁকেছেন গলার ভাঁজে গাঢ় গোলাপি। মা পরেছেন কত না গহনা, কত না জমকালো বেনারসী শাড়ি। আজ দিকে দিকে রাতজাগা। দীর্ঘ দক্ষিণায়নের নিদ্রা থেকে মা জাগবেন আজ। চার দিকে বাজবে ঢাক-ঢোল-শঙ্খ। চক্ষুদান হবে মায়ের এখন। পালকাকা উঠেছেন মই বেয়ে। থরথর তাঁর হাত। মা, জাগো... জাগো মা...।

ওই বাজে শঙ্খ। ওই বাজে ঘণ্টা। ওই বাজে ঢাক। জাগো, জাগো, জাগো মা- পালকাকা ধীর নিমগ্ন হয়ে যান। সটান হয় তুলি। একটানে দেখি রূপ পায় বাঁ চোখ, ডান চোখের কাজল। তার পর চোখের কালো মণি। সবার মনে হয়, মা চেয়ে আছেন আমার দিকে- একমাত্র আমারই দিকে...। বেজে চলে শঙ্খ, ঘন্টা, ঢাক...। ক্লান্ত ঘর্মাক্ত পালকাকা ঈষৎ কাঁপতে কাঁপতে নেমে আসেন মই বেয়ে। গালে কালো ছিটে, হাতে কালো দাগ, মুখে এক অদ্ভুত তন্ময়তা। শরীরটা ঈষৎ দুলে উঠে বসে পড়ে। জল এগিয়ে দেয় চন্দন। তা হাতে নিয়ে বিড়বিড় করে পালকাকা বলে ওঠেন শ্রী শ্রী চণ্ডীর পংক্তি- “তৃষ্ণারূপেণ সংস্থিতা...।” গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে হঠাৎ।

আজ রাত জাগব। বহু দেশ ঘুরে তিলে তিলে জমিয়েছি রান্নার এ ভাণ্ডার। কেবলমাত্র সেগুলিকে বাঁচিয়ে রাখব, এই ব্রত নিয়ে। হারিয়ে যেতে দেব না সেই সব মোচার চণকান্ন, কবাব মির্জাফা, ইলিশের ননীবাহার, ইলিশের উল্লাস, চিংড়ির পুরপুরি, সাগর দইয়ের মতো রান্নাগুলিকে। আজকের মতোই বহু বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছি সাধনায়। আজ এঁকেছি চোখ। তার পর জাগব তবুও। যখন সামনে এল সে স্বরূপ, যখন বাজল ঢাক-শঙ্খ-ঘন্টা-কাঁসর, যখন দেখলাম আমার কৃত মাতৃমূর্তির স্বরূপ, মনে হল আমি আছি। আমি আছি। আমি থাকব ক্ষুধানিবৃত্তির মধ্যে। মানুষের তৃপ্তির মধ্যে। সৃষ্টির আনন্দের মধ্যে। তৃষ্ণার আগেই যে শ্রী শ্রী চণ্ডী বলে- “ক্ষুধারূপেণ সংস্থিতা”...।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2022 ananda utsav 2022 Food Durga Puja Food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy