দিনকাল সব বদলে গেল। ছোটরা স্কুল-খেলা ফেলে যা-ও বা এই ক’মাস পুজোর আশায় দিন গুনেছে, সে গুড়ে আপাতত বালি। ঘরের মধ্যে দাপাদাপি আর একঘেয়ে নিষ্পাপ ভিডিও গেমস, মাঝে মাঝে মাস্ক খুলে টুলে জানালা দিয়ে পাড়ার প্যান্ডেলের দিকে তাকিয়ে এত দিন তা-ও দু গ্রাস ভাত খেয়েছে। এ বার কিন্তু ভাবতেই হবে তাদের নিয়ে। তার পরে আছে এটা খাব না, সেটা খাব না। অভিভাবকেরাও লজেন্স বেশি খাওয়াতে চান না দাঁতে পোকা ধরবে। তবে নিজেদের সুগার থাকলে না হয় খাবেন না, কিন্তু বাচ্চার জন্য গ্লুকোজ খুবই প্রয়োজনীয়। শহরে এমনিতেই কমে আসছে ছানার মিষ্টি আর বাইরের গুলো খাওয়াতে না চাইলে বাড়িতেই বানাচ্ছেন অনেক। মুশকিলটা সেখানেই। সারা লকডাউন রসগোল্লা, মালপো, লেডিকেনি বানিয়ে একঘেয়ে হয়ে গেলে বানাতে পারেন নতুন স্বাদ ও চেহারার কিছু আমিষ মিষ্টি। এটা খাব না, সেটা খাব না করা বাচ্চাও চিকেন, প্রন পেলে দেখবেন চেয়ে চেয়ে খাচ্ছে। এগুলো বানানো হাতি-ঘোড়া কিছু সমস্যার নয়, জিনিসপত্র ঘরেই থাকে বেশির ভাগ। না থাকলে এক বারে বাজার করে নিন, বাকি দিনগুলো কাটুক মিষ্টিতে সৃষ্টিতে।
প্রথমে বানিয়ে ফেলা যাক মিষ্টি শিঙাড়া। আজকালকার ব্র্যান্ডেড মিষ্টির দোকানে মিষ্টি সিঙ্গাড়া খুব একটা বানায় না। ছোটবেলায় শুনতাম বিক্রি না হওয়া সমস্ত মিষ্টি চটকে বানানো হয় এর পুর। সে সব সম্ভবত গুজব, ভাল ক্ষীরের শিঙাড়া খেলে তার প্রতি কণা এখনও জিভে লেগে থাকে, খেয়ে মুখ ধুতে ইচ্ছে করে না বিলকুল। এ বার পুজোয় আমরা বানাব আমিষ মিষ্টি শিঙাড়া। পুর হবে খোসা ছাড়ানো চিংড়ি, ছানা, নারকেল, ছোট এলাচ ও গুড়ের ছোট ছোট টুকরো দিয়ে, দিতে পারেন কিসমিসও। চিংড়িতে সামান্য লবণ পড়বে, গায়ে হলুদের মতো মাখিয়ে দেবেন বিয়ের অনেক আগে। লবণ দিতে পারেন তখনও, যখন ময়দায় ময়ান দিয়ে তৈরি হবে শিঙাড়ার খোল। ঝাল শিঙাড়ায় সেমন ময়দায় অনেকে কালো জিরে দেন, এখানে দিতে পারেন মৌরি। ভিতরের পুর কিন্তু আলাদা রান্না করতে হবে না। হাত দিয়ে মিশিয়ে সিঙাড়ার খোলে ভরে ভেজে তুলুন সাদা তেলে। আগে থেকে একটা পাত্রে চিনি ক্যারাম্যালাইজড করে রাখতে হবে। ভাজা শিঙাড়ার তেল ঝরিয়ে ভাল করে লাগিয়ে দিন চিনির পালিশ। পরিবেশন করবেন ঠান্ডা করে। তবে এই শিঙাড়া বেশি দিন রাখা যায় না। দুই দিনের মধ্যে খেয়ে নেওয়াই ভাল। ইদানীং কলকাতার অবাঙালি দোকানে দেখবেন নানাবিধ শিঙাড়া পাওয়া যায়। ভিতরে চাউমিন দেওয়া শিঙাড়া ছোট বড় অনেক দোকানেই পাবেন। জৈন শিঙাড়া অর্থাৎ আলু ছাড়া শিঙাড়া অবধি দেখেছি বিক্রি হচ্ছে হাওড়া শহরে ব্যাতাইতলা বাজারে। এ সবের থেকে ঢের সোজা এই ননভেজ শিঙাড়া বানানো। খেতেও একেবারে মনকাড়া।
আরও পড়ুন: রেস্তরাঁর মতো ডেজার্ট বানান বাড়িতেই
প্রাচীন ফিলিপিনো জলখাবার তুরনে ইদানীং নতুন টুইস্ট এসেছে। তুরন বানানো হয় পাকা কলা দিয়ে। কাঁঠালি-চাঁপার মতো ছোট্ট ছোট্ট মিষ্টি কলা এর মূল উপাদান। তুরন হচ্ছে ডিপ ফ্রায়েড ব্যানানা রোল। একে দেখবেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনেক মেনুতে লেখা থাকে ব্যানানা ল্যাম্পিয়া নামে। এই ল্যাম্পিয়া এক ধরনের র্যাপ, যা সেখানকার বাজারে সহজে কিনতে পাওয়া যায়। ঘরে আমিষ র্যাপ বানানো যায় চিতল মাছ বা চিকেনে সামান্য প্রাণিজ ফ্যাট মিশিয়ে। আমরা পুজো আচ্চার দিনে অত ঝামেলায় যাব না, ব্যবহার করব চিকেন সালামি। এই ব্যানানা রোল তেলে ভেজে খাওয়া আজকাল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ কমিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা গ্রিলারে বা কাঠ কয়লায় সেঁকে খান, এতেও পড়ে ক্যারাম্যালাইড চিনির পালিশ। আমরাও তেলে ভাজব না। ঘরে আগুনে সেঁকতে পারলে একটা মিনি হোমযজ্ঞ-সন্ধিপুজো টাইপের ফিলিং আনা যাবে। আমরা গ্রিলড ব্যানানা সালামি র্যাপ বানালে সেই সালামির দুই পিঠে লাগাব মধু। সালামি যেহেতু প্রসেসড মিট, তাই এই রান্নায় আলাদা করে লবণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। গ্রিল হয়ে যাওয়ার পরে গোলমরিচের গুঁড়ো উপরে ছড়িয়ে দিতে পারেন। তবে সালামি যখন কিনবেন, প্লেন সালামি কিনবেন। একটা কলায় লাগাবেন একটা বা দুটো সালামি, তার আয়তন বুঝে। কাঠের টুথপিক ব্যবহার করতে পারেন কলায় আটকে থাকার জন্য। সালামির গায়ে জাফরি কাটতে পারেন, অন্য ডিজাইনও আঁকতে পারেন। তবে ডিজাইন করার পরে মধু লাগানো বেশ ঝামেলার। ছিঁড়ে ছিঁড়ে যেতে থাকে। কাজেই দুই-চার বার বানিয়ে আগে এক্সপার্ট হয়ে যান, সে সব তোলা রইল ভাইফোঁটার জন্য। ফিলিপিনোরা বিশেষ উৎসবে তুরন কাঁঠাল দিয়েও বানায়, সে সব চান্স অবশ্য আপাতত পাচ্ছেন না।
ইতালিয়ান সুইট সসেজ ইউরোপে খুব জনপ্রিয়। আমাদের দেশে সে সব কালচার নেই। সে সসেজ খুব কটকটে মিষ্টি না হলেও বেশ ফুরফুরে মিষ্টি। মাংসের সঙ্গে মেশানো হয় চিনি, মৌরি, এমনকি মৌরি ফুলের পরাগরেণুও। তাইল্যান্ডে দেখেছি ব্যাটারে ডোবানো তেলে ভাজা সসেজ বিক্রি হচ্ছে রাস্তায় কাঠিতে গেঁথে। সেগুলো অনেক বেশি মিষ্টি। সসেজ বানানোর মূল ঝক্কি হচ্ছে ব্লাডারের মধ্যে ভরা। আমাদের চেনা পরিচিত অনেক সসেজ কারিগর অবশ্য কেজিপ্রতি পারিশ্রমিকে উপাদান কিনে দিলে তৈরি করে দেন। কিন্তু আপনাদের এর মধ্যে তার জন্য দৌড়োদৌড়ি করতে হবে না। অন্য একটা তাই স্ন্যাকস ট্রাই করুন- ড্রাই ফিশ স্টিক। এটা শুঁটকি মাছ রান্না নয়, মাছের মিষ্টি রান্নার শুঁটকি বলতে পারেন। যে কোনও এক কাঁটার বড় মাছ দিয়ে করা যায়। টুনা দিয়ে করা খুব সহজ। কাঁটা বাদ দিয়ে চাকা চাকা করে কাটা মাছ সামান্য লবণ ও ভিনেগার দিয়ে সিজনড করে নিন ঘণ্টাখানেক। ঘন পুরু ফুটন্ত চিনির রসের মধ্যে এ বার মাছের চাকাগুলো ফেলে নাড়তে হবে সাবধানে, যাতে মাছ না ভেঙে না যায়। চিনির রস শুকিয়ে গা-মাখা হয়ে গেলে নামিয়ে নিতে হবে। একটা থালায় বিট নুন, আমচুর গুঁড়ো, চিলি ফ্লেক্স নিজেদের স্বাদ অনুসারে নিন। চিনির সিরা পুরো শুকিয়ে আসার আগে থালার মিশ্রণের উপরে এক একটা টুকরো ফেলে তার শেপ ঠিক করুন ও দুই দিকে মিশ্রণ বারে বারে মাখিয়ে তন্দুর বানানোর বড় বাঁশের কাঠিতে গেঁথে রোদে শুকোতে দিন। এই ড্রাই ফিশ স্টিক অনেক দিন পর্যন্ত রাখতে হলে এয়ারটাইট মোটা প্লাস্টিকের মধ্যে সুন্দর করে বেঁধে রাখুন। শুঁটকি মাছ যারা গন্ধের জন্য খান না, তাঁরা অবশ্যই এটা ট্রাই করতে পারেন। আর ছেলেপুলে মিট জার্কির মতো দেখবেন সারাক্ষণ ঘুরছে ফিরছে, আর মুখ চালাচ্ছে!
ছবি সৌজন্য: লেখক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy