আমার পুজো মানেই সবুজ ঘেরা প্রকৃতি, পাহাড়ের খাঁজে জমে থাকা ধোঁয়া, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া-যায় মেঘ, ঝরনা আর আঁকাবাঁকা নদী, পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে বয়ে যাওয়া জলস্রোত, চা শ্রমিকের পিঠের ঝুড়ি থেকে ভেসে আসা কাঁচা চা পাতার গন্ধ।
আমার বাড়ি শিলিগুড়িতে। প্রত্যেক বছর পুজোতে বাড়ি যাই। কারণ আমার ক্লাসমেট এবং বন্ধুরা সবাই শিলিগুড়ির। এখন হয়েছে কি, আমি ক্লাস টেনের পরেই শিলিগুড়ি ছেড়ে দিয়েছি। বেঙ্গালুরু চলে গেছিলাম। আমার বাকি বন্ধুরা টুয়েলভ শেষ করে বা কলেজ শেষ করে বাইরে গিয়েছে। এক জন মাত্র বন্ধু কলকাতায় থাকে। বাকিরা কেউ গুরুগ্রাম, কেউ বেঙ্গালুরু, কেউ দিল্লি। সবাই চাকরি করছে। একমাত্র পুজোর সময়ই আমাদের রিইউনিয়ন হয়। সে জন্য পুজোর সময় উইদাউট ফেল আমরা বন্ধুরা শিলিগুড়ি ফিরবই। অন্য কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্রশ্নই নেই।
আমাদের বাড়ির আশপাশেই পাহাড়, নর্থ বেঙ্গলের সবুজ প্রকৃতি। এত সুন্দর! বাড়ি ফেরা মানেই আমাদের আউটিং। অন্যদের জন্য এটাই টুরিস্ট স্পট। অন্যান্য জায়গা থেকে পর্যটক আসেন। আমরা বন্ধুরা প্রত্যেক বছর একই শিডিউল মেনে চলি। আমরা প্রায় প্রতি দিন সকাল এগারোটার দিকে গাড়িতে উঠে পড়ি। চার/পাঁচ দিনের জন্য গাড়ি বুক করাই থাকে। তার পর সবাই মিলে গাড়ি করে হু...উ...স। কোনও দিন দার্জিলিঙের দিকে তো কোনও দিন কার্শিয়াং তো কোনও দিন মিরিক। কোনও দিন বা গরুমারা ফরেস্টে বুনো গন্ধের মুখোমুখি বা মূর্তি নদীর স্বচ্ছ্ব জলে পা ভেজানো। কোনও দিন সামসিং পাহাড়ে কমলালেবুর জঙ্গলে, কোনও দিন রকি আইল্যান্ডে মন্দিরে ঘণ্টা বাজানোর মতো ঘণ্টা পোকার শব্দ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা।
প্রতি দিন একটা করে রুট ঠিক করে নিয়ে সেই রুট ধরে ধরে ঘুরি। সন্ধেয় ঘরে ফিরে কোনও এক বন্ধুর বাড়ি— যেখানে আমরা একান্তে আড্ডা দিতে পারি। একটাই সমস্যা, কোথাও যদি আমাকে লোকে চিনে যায় তো ভিড় হয়ে যায়। এমনিই আমি ভিড় থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। সে জন্য কোনও অনুষ্ঠান বাড়িতে হয় তাড়াতাড়ি যাই বা লেট করে যাই। এটা ছোট থেকেই। এমন নয় যে এই প্রফেশনে আসার পর এ রকম করছি।
আরও পড়ুন: পুজোয় এ বার দুবাই যাব, অঙ্কুশও থাকবে: ঐন্দ্রিলা সেন
শপিং ছোটবেলায় করতাম। বড় হয়ে যাওয়ার পর সে রকম করে শপিং করি না। হয়তো কখনও ইচ্ছে করল দু’-তিনটে সেট কিনে নিলাম। ছোটবেলায় পুজোর সময় আত্মীয়স্বজন জামাকাপড় দিতেন। এখন দেওয়ার আগেই ‘না’ করে দিই। মা-বাবাকেও স্ট্রিক্টলি বারণ করা আছে। তবু মা কিছু না কিছু কিনবেই। আর দাদা-বউমণি জোর করে পোশাক দেবেই। শপিং করার ক্ষেত্রে আমি একেবারে জিরো। অন্যদের জন্যও ঠিকঠাক কিনতে পারি না, ভয় হয় পছন্দসই কিনতে পারব কি না। তাই সবাইকে টাকা দিয়ে দিই।
আমি খেতে খুব ভালবাসি। ভীষণ ফুডি। সে জন্য পুজোর আগে রোগা হওয়ার জন্য প্রচণ্ড ওয়ার্কআউট করি। কারণ বাড়ি গিয়ে সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তিন মাসের ওয়েট পুট অন করে আসি। ওই ক’দিনে তিন-চার কিলো ওয়েট বেড়ে যায়। মা আজ অবধি বুঝতে পারল না যে আমার রোগা থাকা দরকার! এত এত ভাত দেবে, এমনকি আমি যদি দালিয়াও খাই সেটাও এত পরিমাণে দেবে যে দালিয়া খাওয়ার কোনও মানেই থাকবে না। ব্রাউন রাইস খেলেও সেই একই অবস্থা হয়। তো যাই হোক, মা তো মা-ই। বুঝতে চায় না। থালা ভরে ভাত দেবে। মাকে বলি, আমি এমন কোনও পেশার নই যে এত খেলেও প্রচুর খাটাখাটনি হবে বলে রোগাই থাকব। এ দিকে পুজোর সময় কোনও বন্ধুর বাড়ি গেলে তাদের মায়েরাও জোর করে খাওয়াবে। যেখানে যাব অন্তত মিষ্টি খেতেই হবে। আর বন্ধুদের সঙ্গে আউটিং মানেই ফাটিয়ে খাওয়া। ধাবা বা রেস্তরাঁতে রুটি, তড়কা, চিকেন... যা যা ভাল লাগে, খেতে ইচ্ছে হয়— সব।
আরও পড়ুন: আমি, ঐন্দ্রিলা আর বিক্রম হয়তো পুজোয় একসঙ্গে বেরব : অঙ্কুশ
গত দু’বছর ধরে আমি সিঙ্গল। কিন্তু পুজোতে যে একটু পছন্দ করব কাউকে, একটু মেয়ে দেখব সে উপায় নেই। সবাই আমার দিকেই এমন তাকিয়ে থাকে যে কাউকে ভাল লাগলেও ভাল করে দেখতে পারি না। ফোন নম্বর চাওয়ার তো প্রশ্নই নেই। স্কুল লাইফে অনেক কিছু করা যেত। এখন খুব সমস্যার। ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছু করা যায় না। ইমেজ বলে একটা ব্যাপার আছে না! হা হা হা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy