‘বরাবরের মত লিট্ল ইন্ডিয়ার মাঠে প্যাণ্ডেল বেঁধে বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন সিঙ্গাপুর-এর পুজো জাঁকজমক সহকারে পালিত হতে পারবে।’
‘ধর্মীয় সমাবেশে টিকাকৃত ১০০০ জনের উপস্থিতি অনুমোদিত’-- সিঙ্গাপুরের কাগজে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অষ্টাদশী সৃজার মনে আশার ঝিলিক। তা হলে এ বার নিশ্চয়ই সেই বরাবরের মত লিট্ল ইন্ডিয়ার মাঠে প্যাণ্ডেল বেঁধে বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন সিঙ্গাপুর-এর পুজো জাঁকজমক সহকারে পালিত হতে পারবে। গত বছর কড়া নিয়মকানুনের চক্রে স্থানীয় একটি মন্দিরে ঘট পূজো করেই দুধের সাধ ঘোলে মেটাতে হয়েছিল। তবে দীর্ঘ ৬৫ বছরের বাঙালির দুর্গাবন্দনায় ছেদ পড়েনি। মহিলারা শুদ্ধাচারে নিজেদের বাড়ি থেকেই দেবীর ভোগ রান্না করে নিয়ে গিয়ে উৎসর্গ করেছিলেন। বিজয়ায় সদস্যদের বাড়িতে বাক্স ভর্তি মিষ্টিও এসেছিল। বেরিয়েছিল অনলাইন পত্রিকা, যাতে ছোট বড় সবাই লিখেছিলেন। এ বছরও পত্রিকা বেরোবে, অলঙ্করণের দায়িত্বে আছে সৃজা। পুজোর সুর বাঁধার জন্য আগমনী স্বরূপ শুরু হয়ে গেছে ভার্চুয়াল আড্ডা, ডিজিট্যাল আর্ট অ্যান্ড ওয়েলনেস ওয়ার্কশপ। প্রতিমা তো ওয়্যারহাউসে আছেই, স্থানীয় শিল্পীদের তুলির ছোঁয়ায় সেই মৃণ্ময়ী মায়ের আবার নবরূপে অধিষ্ঠিতা হওয়ার অপেক্ষায় দিন গোনা।
সৃজার বাবা ব্যবস্থাপক সমিতিতে থাকার সুবাদে সে দেখেছে, এ বছর তাঁদের উপর কী গুরুদায়িত্ব! পুজোর অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি প্রস্তুত করতেই সবাইকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ‘পুজো হবে’-- এতগুলি মানুষের মনের এই আশা পূর্ণ করার জন্য বিদেশের কড়া নিয়মতান্ত্রিক সরকারের দ্বারস্থ হয়ে কোনও কিছুতে যাতে ত্রুটি না থাকে আর চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়, সেই প্রচেষ্টা। নিশ্চিত করতে হবে ‘ট্রেস টুগেদার’ অ্যাপে যাতে প্রতি প্রবেশকারীর নথি অন্তর্ভুক্ত হয়। কারণ সেখান থেকেই যে প্রশাসন নিশ্চিত হবে, কোনও দর্শনার্থী এই মারণ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে এসেছেন কিনা।
গত বছর দু’টি বাংলাদেশি সংস্থায় পুজো ছোট আকারে হয়েছিল, সঙ্গে ছিল কড়া নিরাপত্তা-ব্যবস্থা। ভোগ বা প্রসাদ বসে খাওয়া তো দূরের কথা, হাতে হাতে বিলি করাতেও ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা। রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ পুজোই কোনও দর্শনার্থী ব্যতিরেকে সরাসরি সম্প্রচার করেছিলেন। এই বছর পুজোর অনুমতি মিললেও মণ্ডপে প্রবেশাধিকার হবে শর্তসাপেক্ষ, একমাত্র টিকাকৃত এবং এককালীন নির্দিষ্ট সংখ্যক (অবস্থানুযায়ী পরিবর্তনশীল) দর্শনার্থীরাই প্রবেশ করতে পারবেন, আর প্রবেশদ্বারেই স্থাপিত ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা ও মনিটরে সেটি পর্যবেক্ষিত হবে। থাকবেন সরকারের তরফ থেকেও পর্যবেক্ষক। এত বাঙালির মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে মা নিশ্চয়ই আবির্ভূতা হবেন, এই আশা নিয়েই আছেন সবাই।
যত দিন যাচ্ছে, পরিস্থিতির বদলের সঙ্গে নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে। এখনও ভারত থেকে এ দেশে ফিরে আসার পথটি এতখানি জটিল ও কষ্টসাধ্য যে, এপ্রিলে কোভিড যখন দিদিমাকে কেড়ে নিল, সেই থেকে সৃজার মা সেই যে ভারতে গেছেন আর আসতে পারেননি। ছোট্ট সৃজার আশা, মর্ত্যে মা দুর্গার আগমনে এমন কিছু অসাধ্যসাধন হবে, যা রক্তবীজের মতো এই অতিমারি থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করবে আর সে তার মায়ের স্পর্শের উষ্ণতায় নিজেকে সঁপে দেবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy