এই বছরের শুরুতে চিনের ঊহান শহরে কোভিড-১৯ অতিমারির সূত্রপাত এবং তার ফলস্বরূপ চিন সরকারের সমগ্র হুবেই প্রদেশে সামগ্রিক লকডাউন তথা দেশের অন্যান্য অঞ্চলে আংশিক লকডাউনের ফলস্বরূপ আমাদের সমস্ত প্রস্তুতি সত্ত্বেও বেজিংয়ের সরস্বতী পূজা শেষ মুহূর্তে বাতিল করতে হয়। সেই সময় এই মারণ ভাইরাস চিনের মধ্যেই প্রায় সীমাবদ্ধ ছিল। ভারত তথা বিশ্বের অন্যান্য দেশে তখনও ছড়ায়নি। কিন্তু বিগত কয়েক মাসে সারা বিশ্বে এই অপ্রতিরোধ্য ভাইরাস এক অতিমারির আকার ধারণ করেছে। সমগ্র ভারত এখন কোভিড-১৯-এর কবলে। চিন কিন্তু বিগত কয়েক মাসে যথেষ্ট স্বাভাবিক অবস্থায় পৌঁছেছে। বেজিংয়ের পরিস্থিতিও এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। সেই কারণে আমরা এই বছর দুর্গোৎসব আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২০১৬ সালে কয়েক জন প্রবাসী বাঙালি এবং বাংলার সঙ্গে যোগাযোগ থাকা কিছু পরিবার মিলে ‘দ্য বেজিং বংগস’ নামক একটি কমিউনিটি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাংবাদিক শুভম পাল, তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবসায়ী জয়ন্ত নন্দী, শিক্ষাবিদ তনুশঙ্কর চক্রবর্তী, জার্মান অটোমোবাইল সংস্থার আধিকারিক সুকেশ নায়ার, মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মী রঞ্জন দত্ত, বিজ্ঞানের অধ্যাপক দেবাশিস নাথ, বিজ্ঞানী সৌভিক মণ্ডল এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রামাশিস দাসের উদ্যোগে ২০১৮ সালে আমাদের প্রথম দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
গত বছর আমাদের অন্যতম সদস্য এবং ‘দ্য বেজিং বংগস’-এর অন্যতম কাণ্ডারি অর্ঘ্য মিত্রের প্রচেষ্টায় আমরা কুমোরটুলির প্রখ্যাত শিল্পী মিন্টু পালকে দিয়ে চার ফুটের একটি ফাইবারের একচালা মূর্তি বানিয়ে বেজিংয়ে এনে পুজো করেছিলাম। এই বছর ও আমরা সেই মূর্তি দিয়ে ভারতীয় দূতাবাসের প্রেক্ষাগৃহে পুজোর আয়োজন করেছি। অতিমারির কারণে আমাদের গত বছরের পুরোহিত এবং উত্তরবঙ্গের বিশিষ্ট লেখক বিশ্বজিৎ ঝা এবার বেজিংয়ে আসতে পারছেন না। সেই কারণে আমাদের অন্যতম সদস্য এবং গণিতের শিক্ষক শুভঙ্কর রায় পুজো করার দায়িত্ব নিয়েছেন। ভারতে গিয়ে আটকে পড়া সত্ত্বেও বিশিষ্ট তবলাবাদক সরিৎ দাস আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন।
বিগত বছরের মতো এবারও আমাদের মহিলা বাহিনী পুজোর আয়োজনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে। ঋতুপর্ণা আইন, অনিন্দিতা দাস, যোগিতা সইকিয়া, অনঘা নন্দী, রেশমি দত্ত, সোমা মহলানবিশ, রেশ্মিতা নাথ, শতরূপা পণ্ডিত চক্রবর্তী, স্বাতী পারমার, সুদেষ্ণা ভট্টাচার্য প্রমুখ বাঙালি খাবারের আয়োজন সহ পুজোর সমস্ত জোগাড়যন্ত্রের দায়িত্বে। বেজিং-এর প্রসিদ্ধ রেস্তরাঁ ব্যাবসায়ী মেহেরনোশ পাস্তাকিয়া তাঁর তাজ প্যাভিলিয়নের শেফ দিপু বিশ্বাসকে দিয়ে আমাদের জন্যে ষোলোআনা বাঙালি ভুরিভোজের আয়োজন করেছেন। পেটপুজো ছাড়া কি আর দুর্গা পুজো হয়! আমরা কোভিড-১৯-এর দুর্বিষহ দিনগুলোকে পিছনে ফেলে রেখে মায়ের বোধনের জন্যে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: লন্ডনে লকডাউনে দুর্গাপূজো কাটে কেমনে?
(লেখক বেজিং-বাসী বিজ্ঞানের গবেষক)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy