বিগত ১৫ বছরধরে নবি মুম্বইয়ের ভাশিতে বসবাসের সুবাদে নবি মুম্বই বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের দুর্গাপুজার সঙ্গে যুক্ত আছি। ১৯৮১ সালে শুরু হওয়া এই পুজো বর্তমানে দেশের অন্যতম বড় উদযাপন হিসেবে পরিচিত। সুবিশাল ব্যবস্থাপনার জন্যই এর খ্যাতি। সুবিশাল ও সুসজ্জিতা প্রতিমা, তিনদিন ধরে দুপুরে ভোগ বিতরণ, সন্ধ্যায় বলিউডের নামজাদা শিল্পীদের নিয়ে আনন্দানুষ্ঠান, পুজো প্রাঙ্গণে বিভিন্ন রকম স্টল, বিজয়ার দিন সিঁদুরখেলা, বিসর্জনের শোভা যাত্রা– সব মিলিয়ে একদম জমজমাট পুজো কাটাই আমরা। সলতে পাকানোর কাজ অবশ্য অনেক দিন আগে থেকেই শুরু হয়। বেশ কিছু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম থাকে এই বিরাট আয়োজনের পিছনে। আগে খোলা মাঠে হলেও গত কয়েক বছর ধরে এখানকার সিডকো এগজিবিশন সেন্টারের বিরাট এসি হলে পুজো অনুষ্ঠিতহচ্ছে।
এবারে অবশ্য সবটাই বদলে গেল। সেই এসি হল আপাতত কোভিড কেয়ার সেন্টার। মাস তিনেক আগে প্রথম দুর্গাপূজার মিটিং ডাকা হল, তবে জুম অ্যাপের মাধ্যমে। সেখানেই সিদ্ধান্ত হল যে, এবারে পুজো হবে বটে, তবে অ্যাসোসিয়েশন প্রাঙ্গণেই। আমাদের অ্যাসোসিয়েশন প্রাঙ্গণ এমনিতে বেশ বড়। কালীমন্দির, অনুষ্ঠানমঞ্চ, মুম্বইতে চিকিৎসা করাতে আসা ক্যানসার রোগী দের ঘর, লাইব্রেরি- সবই আছে। এবার ওই মঞ্চেই পুজো হবে।
বিজয়ার দিন সিঁদুরখেলা, বিসর্জনের শোভা যাত্রা– সব মিলিয়ে পুজো একদম জমজমাট।
আরও পড়ুন: মিলেমিশে উৎসবে মাতা হচ্ছে না সিডনির
পুলিশের নির্দেশিকা এসে গেল। সেই মতো পুজোর প্রস্তুতি, পরিকল্পনা চলল জুম অ্যাপের মাধ্যমেই। এবারের পুজোর ব্যবস্থাপনায় কিছু নিয়ম মানা হচ্ছে- মূর্তি চার ফুটের বেশি বড় হবেনা; পুজো মণ্ডপে পাঁচ জনের বেশি একত্রে থাকতে পারবেন না,কোনও রকম প্রসাদ বিতরণ করা যাবেনা; ভোগ বিতরণের তো প্রশ্নই নেই! মূর্তির কাছাকাছি যাওয়া, ছোঁয়া, পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ।
এবারে ভোগ বিতরণের প্রশ্নই নেই!
অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট থেকে এবং ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সারা দিনই পুজো সম্প্রচার করা হবে। যাঁরা অঞ্জলি দিতে চান, তাঁরা বাড়িতে বসে পুরোহিতের মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গেই মন্ত্র বলবেন, আর পুরোহিত তাঁদের হয়ে দেবীর পায়ে ফুল দিয়ে দেবেন।
আরও পড়ুন: কোভিড-হীন তাইওয়ানে পুজোয় সামিল বাঙালিরা
এভাবেই এ বছর দুর্গাপূজা পালিত হবে। বাঙালির এই প্রাণের উৎসব এভাবে পালন করতে হবে, কোনও দিন কেউ ভেবেছিল? এক অতিমারী এসে এক ঝটকায় সব বদলে দিল। সবাই ভাল থাকলে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আবার আমরা আগের মতো আনন্দ করে উদযাপনে সামিল হতে পারব।
ছবি সৌজন্য: লেখক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy