পুজো আসছে। বাঙালির প্রিয় আবেগ আর ভালবাসার নাম দুর্গাপুজো। সে যে দেশেই বাস করুক না কেন, শরতের মেঘ পুজোর বার্তা আনলেই বাড়ির জন্যে, দেশের জন্যে মন কেমন করে ওঠে।শরতের এই মহোৎসবকে ঘিরে কত যে জল্পনা-কল্পনা চলে!
বিদেশে এসেপূজো দেখার ইচ্ছে হল। আমার শহরে বাঙালি কতিপয়। পুজো করবে কে? আমার ননদ দিল ব্রেমেন পুজোর সন্ধান।সে যে কী আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। অঞ্জলি দিয়ে, আরতি দেখে, পুজোর ভোগ পেয়ে মন ভরে গেল। তার পরে লক্ষ্মী পুজোতেও গেলাম।
ইতিমধ্যে কর্মসূত্রে বার্লিনে স্থানান্তরিত হলাম। ৪৫ বছর আগে একজনের ড্রয়িং রুমে বসে প্রথম এখানের পুজোর প্ল্যান হয়। খুব ছোট করেই সেই পুজো শুরু হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। তিথি মেনেই পুজো,পাঁচ দিন ধরে। পরে বয়স্করা নবীনদের পুজোর আয়োজনের ভার দিয়েছেন। নবীন প্রজন্ম ‘বার্লিন সর্বজনীন দুর্গোৎসব’ এর উদ্যোক্তা। নব্বইয়ের দশকে পুজো হত আইচক্যাম্পের স্টুডেন্ট হোস্টেলে।তার পরে হারবিগ স্ট্রাসে ১৪, ১৪০৫৫ বার্লিনে সরিয়ে আনা হল।সেখানেই ২০১৯ অবধি পুজো চলেছে।পুরোহিত আসেন কলকাতার বেহালা থেকে। সব নিয়ম, সব ইচ্ছে বিদেশে মেটানো না গেলেও আন্তরিকতা আর আনন্দের কোনও অভাব নেই। বেশ লাগে সবার সঙ্গে মিলেমিশে ক’টা দিন আনন্দে কাটাতে।
আরও পড়ুন: করোনা ঘাড়ে নিয়েই ভার্চুয়াল আগমনী বার্মিংহামে
তিথি মেনেই পুজো,পাঁচ দিন ধরে।
এ বছর সব কিছুই অন্য রকম। মহালয়ার প্রায় পাঁচ সপ্তাহ পরে পুজো, তা-ও আবার এক ভয়াবহ অতিমারীর আবহে। বিশেষত দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ সামলাতে সমস্ত সম্মেলনের জন্য নিয়ম বেঁধে দিয়েছে জার্মান সরকার:
- ২৫ জন এর বেশী লোক জমায়েত হতে পারবে না।
- সর্দি কাশি বা জ্বর থাকলে অনুষ্ঠানে যোগদান নিষেধ।
- ১.৫ মিটার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
- মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক।
- স্যানিটাইজ করতে হবে।
নিয়ম না মানলে কড়া শাস্তির ভয়। এ দিকে দুর্গাপুজোর অঙ্গ, যেমন শাঁখ বাজানো, উলু দেওয়া- সে সব মাস্ক পরে সম্ভব নয়। তাছাড়া মেলামেশাও তো পুজোর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। সেটাও এই পরিস্থিতিতে সম্ভব নয়। এত সব মেনে কি আর আনন্দ করা সম্ভব!
আরও পড়ুন: পুজোয় এ বার ‘নিউ নর্ম্যাল’ ক্যালিফোর্নিয়া বে এরিয়ায়
তাই প্রায় সকলেই শর্ট নোটিসে পুজো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।এমনকি, কোলন-এর মতো প্রাচীন পুজোও। তা বলে কি দেবী দুর্গা কে আবাহন করব না? অঞ্জলি দেব না? নিশ্চয়ই আবাহন করব। তবে এই অতিমারীর সময়ে এবার ভার্চুয়াল পুজো হবে। আমরা "আপন মনের মাধুরী মিশায়ে" বাড়িতে থেকেই ভার্চুয়াল মাধ্যমে অঞ্জলি দেব, ঠাকুর দেখব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করব। মানুষের জীবন ও নিরাপত্তা উৎসবের ঊর্ধ্বে। সব কিছু ঠিক থাকলে আসছে বছর আবার হবে!
ছবি সৌজন্য: লেখক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy