জন্ম থেকে বড় হওয়া কলকাতায় হওয়ার সুবাদে বাকি আর জন বাঙালির মতো আমার জীবনেরও অনেকটা জুড়ে শারদীয়ার বসবাস। ঠাকুর বায়না দেওয়া থেকে শুরু করে কলাবউ স্নান, অষ্টমীর অঞ্জলি, সন্ধিপুজোর প্রদীপ জ্বালানো, অথবা দশমীর সিঁদুর খেলার পরে আউটরামঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের মনখারাপ-এই সবটাই ছোট থেকে জীবনের অপরিহার্য অংশ ছিল। একটা সময়ে ভাবতেও পারতামনা দুর্গাপূজো কলকাতার বাইরে, আমার পাড়ার বাইরে কোনও দিন কাটাব! অথচ বিবাহ সূত্রে আজ পাঁচ বছর হল আমি ক্যালিফোর্নিয়ার বেএরিয়ার বাসিন্দা। উমার মতো প্রতি শরতে আমারও বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করে। উপায় হয়ে ওঠেনা।
তবে বে এরিয়ায় আমেরিকার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক দুর্গাপুজো হয়। বোধহয় আধ ডজনেরও বেশি। পুজোয় ঘুরব আর শাড়ি পরবনা, হয় নাকি? আমার বাক্সবন্দি শাড়ি গুলো বছরের এই সময়টায় তাই একটু হলেও আলোর দেখা পায়। এখানে পুজোর ক’দিন বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করে, আড্ডা দিয়ে, ফুডস্টল থেকে বাঙালি খাবার খেয়ে আর পুজোক কমিটির আয়োজিত অনুষ্ঠানের গানের সুরে সময়টা বড্ড ভাল কাটে। তবে কর্ম ব্যস্ত জীবনের প্রয়োজন বুঝে এখানের পুজোর নিয়মকানুনও অনেক সময়ে পাল্টে যায়। এ দিককার অনেক পুজোই তিথির বদলে অফিসের ছুটি মেনে হয়। অর্থাৎ সপ্তমী থেকে দশমী চার দিনের পুজো শুক্রবার বিকেল থেকে শুরু করে রবিবার শেষ হয়ে যায়। তাই কলকাতায় হয়তো যখন অষ্টমীর অঞ্জলি চলছে, এখানে আমরা দশমীর সিঁদুর খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
প্রতিমাকে সিঁদুরদান অনুষ্ঠান থাকলেও, সিঁদুর খেলার আয়োজন এ বার থাকছেনা।
আরও পড়ুন: ভার্চুয়াল পুজো কাটবে করোনা-ময় জার্মানিতে
আরও পড়ুন: করোনা ঘাড়ে নিয়েই ভার্চুয়াল আগমনী বার্মিংহামে
এবছর করোনা পরিস্থিতিতে বেএরিয়ার সব পুজোই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও বিধিনিষেধ মেনে হচ্ছে।অতিমারীর কারণে নিয়ম কানুনে অনেক বদলও হয়েছে। যেমন- অনেক পুজোয় অষ্টমীর অঞ্জলিও প্রতিমা দর্শনের অনলাইন সুবিধা, পুজোর ভোগের প্রিঅর্ডার ও নির্দিষ্ট সময়ে সংগ্রহের ব্যবস্থা থাকছে। দশমীর পরে প্রতিমাকে সিঁদুরদান অনুষ্ঠান থাকলেও, সিঁদুর খেলার আয়োজন এ বার থাকছেনা। সর্বোপরি এ বছর পুজোয় সর্বক্ষণ মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। তবু সময়ের তালে তাল মিলিয়ে নিউনরমাল পুজোতেও আশা করি ক’দিন আমরাও আনন্দেই কাটাব। বাড়ি থেকে অনলাইনে অষ্টমীর অঞ্জলি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা আর বাঙালি খাবার। আমার কাছে এবছর শারদীয়ার অর্থ এটাই। সবাই সুস্থ থাকুন, সুস্থ রাখুন।
ছবি সৌজন্য: লেখক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy