পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানেই এ বার পুজোর চাঁদা নিয়ে তাগাদা শুরু করেছিস?!... কণ্ঠস্বরে মৃদু উষ্মা পৃথার। তার বান্ধবী তথা বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবারতিও চুপ থাকার পাত্রী নয়। সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠল— এই বিশাল কর্মযজ্ঞের খরচের কোনও ধারণা আছে? সেই মহালয়া থেকে শুরু, তার জন্যও হল ভাড়া করে অনুষ্ঠান, খাওয়া-দাওয়া... আনন্দমেলার জন্যও তো আলাদা জায়গা... তোরা তো এসে মজা করে সব রন্ধন-পটীয়সীদের জিভে জল আনা খাবার দিয়ে পেট-পুজো করবি।
পৃথা: শুনেছি পুজো-প্রাঙ্গনটা সরকারের কাছে সামান্য ভাড়ায় পাস্! সত্যি, ভাবতে বেশ ভাল লাগে, সিঙ্গাপুর সরকার জাতীয় সংহতি রক্ষার জন্য কত খরচ করে!
দেবারতি: আর এই মাঠে কয়েক হাজার বর্গফিট এলাকা পুরো শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত করার ব্যবস্থা! সেই জন্যই তো এত সব সুন্দরীদের প্রসাধনের প্রলেপন স্বেদনে বিগলিত হয় না!
আরও পড়ুন:আমাদের ডোম্বিভিলি এখন প্রবাসের মাটিতেও এক টুকরো বাংলা
পৃথা: আর তুইও তেমনি বিনা স্বেদনে ধুনুচি নাচ নাচিস, ফ্যাশন শোয়ে র্যাম্পওয়াক করিস।
দেবারতি: এনজয় করিস কি না? রিহার্সাল শুরু করে দিয়েছি। গতবার যখন পঞ্জাবি ভাংড়া আর কলকাতার বাউল গানের ব্যবস্থা হয়েছিল, তখন কৃশাঙ্গী বা পৃথুলা অনেকেরই দোদুল্যমান কটি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
পৃথা: এবার কোন শিল্পী আসছেন?
দেবারতি: ওটা সারপ্রাইজ।
পৃথা: তুই না! তবে বাচ্চাদের নাটক আর নৃত্যনাট্যটি কিন্তু জমে যাবে। আমার মেয়েটাকে নিয়ে রেগুলার রিহার্সালে যাচ্ছি। এই ভাবেই প্রবাসী নতুন প্রজন্ম বাংলা সংস্কৃতিকে একটু জানুক, বুঝুক। আর ভোগ রান্না! প্রতি দিনই মহিলারা মাকে যে ভোগ রেঁধে দেন, অমন স্বাদ কিন্তু কোনও খাবারেই পাই না। অপূর্ব লাগে যখন সবাই ভোর থেকে রান্না করে একই রকম শাড়ি পরে মাকে ভোগ নিবেদন করেন। তুই কবে রাঁধছিস? অষ্টমীতে?
দেবারতি: হ্যাঁ। জানিস এ বার কলকাতা থেকে মঙ্গল ঘট আর স্বস্তিক এপ্লিক করা শাড়ি আনিয়েছি ভোগ রান্নার জন্য।
আরও পডুন:ভক্তিভরে পুজো দেব, পেটপুজোতেও খামতি নেই আমাদের সান দিয়েগোয়
পৃথা: ২০১৫ সালে কারা যেন সন্তানের কৃতিত্বের মানসিক পূরণে ফাইবারের মূর্তি দান করেছিলেন, এ বারও কি সেই মূর্তি?
দেবারতি: হ্যাঁ। কুমোরটুলি থেকে শিল্পী এসে ফাইবারের মূর্তিরই আবার নব অলংকরণ করছেন, তার সাথে ডাকের সাজ। আর কলকাতা আর্ট কলেজের শিল্পীর নেতৃত্বাধীনে ডেকরেশন টিম জবরদস্ত কাজ করে চলেছে। এ বারের থিম পুরোন কলকাতা। ঢাকি আর পুরোহিতমশাইয়ের প্লেনের টিকিটও বুক করা হয়ে গিয়েছে।
পৃথা: বাহ্। সিঙ্গাপুরের পুজো কিন্তু একদম দিন-ক্ষণ মেনে ষোড়শোপচারে হয়। কুমারীপুজোও বাদ নেই।
দেবারতি: তা হলেই বল, এই অক্লান্ত পরিশ্রম করে যদি স্বীকৃতি না পাই, কেমন লাগে! তবে জানিস, সব দুঃখ ভুলে যাই যখন পুজোর উদ্বৃত্ত অর্থ কোনও অনাথাশ্রম বা বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছে দিয়ে মানুষগুলোর চোখের দিকে তাকাই।
পৃথা: হ্যাঁ রে, এটা এসোসিয়েশনের দারুণ উদ্যোগ। আসলে সবার উপরে তো মানুষই সত্য। আনন্দময়ী মা এ ভাবেই আমাদের চিত্ত বিকশিত করুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy