গত ৩৬ বছর হল মুম্বইয়ে বসবাস করছি। এখানকার আকাশে শরৎকালের সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় না। পথের ধারে হাওয়ায় হেলেদুলে কাশ ফুলেরা খেলাও করে না। গাছের নীচে শিউলিরা সাজিয়ে দেয় না ফুলের চাদর। শুধু ক্যালেন্ডার জানান দেয় যে, দুর্গাপুজো কবে আসছে। তার মধ্যে সপ্তাহান্ত রয়েছে কি? কারণ প্রবাসে দশেরা মানে শুধু বিজয়া দশমীতে এক দিন ছুটি। তাই যদি আর দু’-এক দিন বেশি ছুটি পাওয়া যায়, তা হলে আনন্দের শেষ থাকে না!
মুম্বইয়ে বেশ কিছু বাঙালি সঙ্গীতকার ও তারকা থাকার ফলে এখানে বেশ কয়েকটি ভাল পুজো হয়। কলকাতার মতো অলিতে-গলিতে দুর্গাপুজো হয় না বটে, কিন্তু পুজোকে ঘিরে যে যার অঞ্চলে আনন্দে মেতে থাকেন। এখানে আসার পর থেকে যে কয়েকটি পুজোতে অংশ নিই, তার মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ মুম্বইয়ে নবীনগরের পুজো ও ‘বম্বে দুর্গাবাড়ি’র পুজো।
জুলাই মাস থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর সাপ্তাহিক বৈঠক। সঙ্গে চলতে থাকে পেট পুরে খাওয়াদাওয়া। পুজোর বিরাট কর্মকাণ্ড সামলাতে বেশ কয়েকটা কমিটি তৈরি হয়— যেমন পুজো কমিটি, প্রতিমা কমিটি, সাহিত্য শাখা, ভোগ কমিটি, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, কমিউনিকেশন কমিটি ইত্যাদি। স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়া কলকাতা থেকেও কিছু শিল্পীদের নিয়ে আসা হয়। বাচ্চারা আর তাদের মা-মাসিরা দিনরাত এক করে সপ্তাহান্তে ঝাঁপিয়ে পড়েন রিহার্সাল নিয়ে। প্রতি বছর বম্বে দুর্গাবাড়ির নাটক দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। স্টেজ তৈরি, পোশাকের ব্যবস্থা, সব কিছু সুনিপুণ ভাবে করেন এই পুজোর নাট্যকমিটির সদস্যরা।
আরও পড়ুন: ক্লিভল্যান্ডে দুর্গাপুজো হয় চার্চে
পুজোর দিনগুলোয় খুব সকাল থেকেই পুজো কমিটির সদস্যেরা মণ্ডপে হাজির হন। সদস্যেরা নিজেরাই মায়ের ভোগ রাঁধেন। ভোগ অর্পণ করার পরে সকলের জন্য তৈরি প্রসাদের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় আসলভোগ। রোজই সাড়ে তিন থেকে চার হাজার অতিথির সেবা করা হয় মণ্ডপ-সংলগ্ন লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরে।
আরও পড়ুন: ঘরছাড়ারাই বোঝে, ঘরে ফেরার কী যে আনন্দ!
পুজোর কয়েক দিন সব পুজো মণ্ডপের বাইরেই নানা আকর্ষক স্টল বসে যায়। যার সিংহভাগই দখল করে নেয় কলকাতার নামিদামী খাবারের দোকানগুলি। শাড়ির দোকান ও হস্তশিল্পের দোকানও থাকে। শাঁখা-পলা, সিদুঁর, আলতা যা মুম্বইয়ে সহজে মেলে না, সে সবও মণ্ডপের বাইরের দোকানে মেলে। মুম্বইয়ের প্রতিটি এলাকাতেই পুজো হয়। তবে দূরত্বের কারণে ও যানবাহনের বাহুল্যে সব ক’টি দেখা সম্ভব হয়ে ওঠে না। নবরাত্রিও পালন করেন অনেকে সব মিলিয়ে উৎসবের আনন্দে ঝলমল করে বাণিজ্যনগরী। কেটে যায় পুজোর চার দিন। আসে বিজয়দশমী। ঢাকে বেজে ওঠে চেনা তাল— ‘ঠাকুর থাকবে কত ক্ষণ, ঠাকুর যাবে বিসর্জন।’ শূন্য মণ্ডপে মিলন-সন্ধ্যায় সবাই সবাইকে আলিঙ্গনে বেঁধে প্রার্থনা করেন— ‘পরের বছর আবার এসো মা।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy