আশ্বিনের শারদ প্রাতে কাশের দোলায় বেজে উঠেছে আগমনীর সুর। জমিদারী আধিপত্য ও তার প্রাচুর্য্যপূর্ণ সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে অষ্টাদশ শতকের বারোয়ারি আর বিংশ শতাব্দীর শুরুতে উত্তর কলকাতার সর্বজনীন দুর্গাপুজোর মাধ্যমে বাঙালির সর্ববৃহৎ উৎসবের সীমানা সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল। বাঙালির প্রধান উৎসব দুর্গাপুজো যখন বঙ্গদেশের সীমা ছাড়িয়ে পাড়ি দিয়েছে বিদেশে, তখন তার অনুভূতিটাও বেশ অন্য রকম। ষাটের দশকের প্রথমার্ধে লন্ডনে দুর্গাপুজোর সূচনা, এখন তার ব্যাপ্তি ছড়িয়েছে বাকি পাঁচ মহাদেশেও। ব্রিটেনের দুর্গাপুজো বেশ পুরনো হলেও স্কটল্যান্ডের পুজো কিন্তু নবীন। তবু তাদের আন্তরিকতার জুড়ি মেলা ভার।
স্কটিশ অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল আর্টস অ্যান্ড সংস্কৃতি হেরিটেজ সাবাশ্-এর উদ্যোগে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবরাতে শুরু হয় প্রথম দুর্গোৎসব। সেই ২০১৪ থেকে আজ ২০১৯— ছ’বছর ধরে এখানে পুজো অনুষ্ঠিত হয় সাড়ম্বরের সঙ্গে। বনেদিয়ানা, জমিদারি, সাবেকি প্রথার প্রাচুর্য্য ছাড়িয়ে কুমারটুলির একচালার মাতৃপ্রতিমা এডিনবরার পুজো মণ্ডপে অধিষ্ঠিত। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের এক মেলবন্ধন চোখে পড় সাবাশ্-এর দুর্গোৎসবে। তাই বাঙালিদের পাশাপাশি এখানে অবাঙালিদের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। কর্মব্যস্তময় জীবন ফেলে প্রায় প্রত্যেকেই এখানকার পুজোর এক বিশেষ অঙ্গ হয়ে ওঠেন।
কলকাতার মাটি ছাড়িয়ে থিমের পুজো পাড়ি দিয়েছে বিদেশেও। এ বছর এডিনবরার পুজোর বিশেষ আকর্ষণ তাদের থিমের ভাবনা। মণ্ডপ হয়ে উঠছে বাংলার এক ছোট্ট গ্রাম।মণ্ডপ সাজানোর সামগ্রী আনা হয়েছে কলকাতা থেকে। কারণ, এখানে তো ও সবদুর্লভ। শহরের কংক্রিটের জীবন ছেড়ে সবুজের প্রাণ খোলা এক পরিবেশে সেজে উঠছে এডিনবরার পুজো প্রাঙ্গণ।বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিনিজে প্রতিটি বিষয়ের তত্ত্বাবধান করছেন। সবেতেই রয়েছে এক নিপুনতার ছোঁয়া।
বিদেশের বেশির ভাগ দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয় সপ্তান্তের ছুটিতে। কিন্তু প্রতি বছরই এডিনবরার দুর্গাপুজোর শুরু থেকে সমাপ্তি হয় পঞ্জিকা অনুসারে। বোধন, চণ্ডীপাঠ, নবপত্রিকা, অষ্টমীর অঞ্জলি,সন্ধিপুজো হয়ে নবমীতে কুমারী পুজো এবং সবশেষে মায়ের বিদায়বেলার সমস্তটাই সম্পন্ন হয় তার চিরাচরিত নিয়ম মেনে। পাশাপাশি আছে সিঁদুরখেলা আর মিষ্টিমুখ। অশুভর বিনাশ করে আলোর দিশারী আদ্যাশক্তির আর্বিভাব। নারী শক্তির আহ্বায়ক পেনসন কনসালট্যান্ট সুমনাদি, শক্তির অধীশ্বর তন্ত্রধারিকার পাশাপাশি পৌরহিত্যের দায়িত্বেও থাকবেন তিনি।পণ্ডিত তন্ময় মুখোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যে ফিজিসিয়ান গৌরব এ বারের পুরোহিত।
প্রতি বারের মতো এ বারও প্রসাদ ও ভোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে পুজো প্রাঙ্গণে। পুজোর পাঁচ দিন সবাই খাওয়া-দাওয়া করেন এই প্রাঙ্গণেই। এই সময় এডিনবরার পাঁচশো বাঙালি একত্রিত হয়ে এক বৃহৎ পরিবারের অংশ হয়ে উঠেন। মাতৃ আরাধনার পাশাপাশি চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যা, প্রত্যেক বারের মতো এ বারেও অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। গান, নাচ, আবৃত্তি, শ্রুতিনাটক সবই রয়েছে এ বারের বিষয়ে, আর তার জন্য প্রস্তুতিও চলছে বেশ জোরকদমে। বাংলার মাটির সঙ্গে পাঁচ হাজার মাইলের দূরত্বটা কেমন যেন এক নিমেষে উধাও হয়ে যায়। পুজোর যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়াদী এ বারও প্রকাশিত হবে তার বার্ষিক পত্রিকা‘এডিব্লয়ম’তে।
চলতি বছরে এডিনবরা দুর্গোৎসব পা দিল ছ’বছরে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে এক বাড়তি উত্তেজনা। আগামী তিন অক্টোবর থেকে বেলফিলড কমিউনিটি সেণ্টার পর্টোবেলোতে শুরু হতে চলেছে এ বারের দুর্গাপুজো। আর মাত্র কয়েকটি দিন, তারপরেই ঘটবে অপেক্ষার অবসান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy