নেপিদয়ে আলোচনার পরে শেখ হাসিনা ও মনমোহন সিংহ। মঙ্গলবার। ছবি: এ এফ পি।
মায়ানমারের রাজধানী নেপিদয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎকারে তিস্তা চুক্তি না হওয়ার প্রসঙ্গটি নিজেই উত্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। হাসিনার আর্জি মেনে বাড়তি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও বাংলাদেশকে দেবে দিল্লি। আবার, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের সঙ্গে মনমোহন বৈঠক করলেও রাষ্ট্রপুঞ্জে মানবাধিকার-প্রস্তাবে কলম্বোর পক্ষে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন না।
ঢাকা সফরে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসার পরেও তিস্তার জলের ভাগ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিটি না-হওয়ায় তিনি যে দুঃখিত, ঘনিষ্ঠ মহলে তা বেশ কয়েক বার জানিয়েছেন মনমোহন। এ দিন একান্ত বৈঠকে মনমোহন নিজেই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, তিস্তা চুক্তির বিষয়টি খুবই কঠিন ছিল। ঘরোয়া স্তরে ঐকমত্যের অভাবে সেটা করা গেল না। তবে, হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই সমস্যা সমাধানে দিল্লি খুবই আন্তরিক ভাবে প্রয়াস চালাচ্ছে।
বিমস্টেক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে এসে প্রতিবেশী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এ দিন প্রায় ২৫ মিনিট মুখোমুখি বৈঠকে বসেন মনমোহন। বিদ্যুৎ-সমস্যায় নাজেহাল বাংলাদেশেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিচ্ছে ভারত। এ জন্য মনমোহনকে ধন্যবাদ জানান হাসিনা। তিনি বলেন ত্রিপুরার পালটানা থেকে আরও অন্তত ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেলে তাঁদের সুবিধা হয়। মনমোহন জানান, যত শীঘ্র সম্ভব পালটানা থেকে বাংলাদেশকে অতিরিক্ত ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। প্রবল বিরোধিতার মধ্যেও স্থলসীমা চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি ভারত সরকার সংসদে পেশ করেছে। এ জন্যও মনমোহনকে ধন্যবাদ দেন হাসিনা।
নির্বাচনে জিতে ইউপিএ ফের ক্ষমতায় এলেও তিনি যে আর প্রধানমন্ত্রী হবেন না, মনমোহন ইতিমধ্যেই তা ঘোষণা করেছেন। সেই হিসেবে বিমস্টেকের এই শীর্ষ বৈঠক তাঁর শেষ বিদেশ সফর। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন মনমোহন। তিনি নিজে এই বিষয়টি দেখভাল করতেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বাংলাদেশ সংক্রান্ত নানা বিষয় দেখভাল করা অফিসার পঙ্কজ সারনকে ঢাকায় হাইকমিশনার নিযোগ করেছেন মনমোহন। বরাবর তিনি বলে এসেছেন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নই জঙ্গিবাদের কবল থেকে মুক্ত করতে পারে বাংলাদেশকে, এবং দিল্লি এ বিষয়ে ঢাকাকে সর্বতো ভাবে সাহায্য করতে তৈরি। নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ঢাকাও যে ভাবে ভারতকে সাহায্য করে এসেছে, তা নজিরবিহীন। নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, তাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার নেতারা এই বিমস্টেক বৈঠকে থাকলেও মনমোহন বাড়তি গুরুত্ব দেন হাসিনাকে।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের সঙ্গেও এ দিন বৈঠকে বসেন মনমোহন। কিন্তু ঘরোয়া রাজনীতির কথা মাথায় রেখে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনে শ্রীলঙ্কা-বিরোধী প্রস্তাবে ভোট না দেওয়ার কোনও আশ্বাস তাঁকে দিলেন না। বৈঠক শেষে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরুদ্দিন বলেন, “ভারত-শ্রীলঙ্কা এ বিষয়ে যোগাযোগ রেখে চলবে।”
এডিএমকে, ডিএমকে-সহ প্রায় সব তামিল দলই রাষ্ট্রপুঞ্জে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার পক্ষে। আগামী কাল লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে গেলে বিষয়টিকে আরও বড় করে প্রচারে আনতে চলেছেন তারা। আজ রাজাপক্ষের সঙ্গে মনমোহনের বৈঠকটিও ঘরোয়া রাজনীতিতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।
পাশাপাশি কংগ্রেস এটাও মনে করে, নির্ধারিত ওই বৈঠক না করলে যে বার্তা যেত, তা-ও খুব একটা ইতিবাচক হত না। শুধুমাত্র তামিল আবেগকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক থেকে পিছিয়ে আসাটা মনমোহনের ভীরুতা বলে তুলে ধরত বিজেপি। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জে শ্রীলঙ্কা সরকারের পক্ষে ভোট দিয়ে দক্ষিণ ভারতের দলগুলিকে খেপিয়ে তুলতেও চায় না কংগ্রেস।