দুর্ঘটনার দু’দিন পরে খোঁজ মিলল তাঁর। বিমানের ককপিটে বসে রয়েছেন চালক লিয়াও চিয়েন-সুং। নিথর। দু’হাতের মুঠোয় ধরা বিমানের জয়স্টিকটা।
৪১ বছরের লিয়াও ট্রান্সএশিয়ার ‘জিই-২৩৫’-এর চালক। গত বুধবার তাইপেইয়ের সংশ্যান বিমানবন্দর থেকে ওড়ার দু’মিনিটের মধ্যেই গোঁত্তা খেয়ে ভেঙে পড়েছিল যাত্রিবাহী এটিআর ৭২-৬০০ বিমানটি। দুর্ঘটনার পর থেকেই খোঁজ মিলছিল না বিমানের চালক আর সহ-চালকের। তাইপেইয়ের কিলুং নদীতে তল্লাশি চালানোর সময় উদ্ধার হয় লিয়াওয়ের দেহ। উদ্ধারকারীরা জানাচ্ছেন, বিমান নদীতে পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তেও জয়স্টিক আকঁড়ে বসেছিলেন বিমানচালক। যাতে কোনও ভাবে জনবহুল এলাকায় বিমানটি ভেঙে না পড়ে, সেই চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
কালই অবশ্য লিয়াওকে নায়কের আসনে বসিয়েছিল গোটা তাইওয়ান। সে দিন বিমানটি যে ভাবে শহরের বিভিন্ন বহুতলের প্রায় কান ঘেঁষে উড়ে গিয়েছিল, তাতে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বাড়তে পারত বলে মনে করছেন অনেকে। আর তার জন্য বিমানের চালকের উপস্থিত বুদ্ধিরই প্রশংসা করছেন সবাই। উড়ান বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, যে গতিপথে সে দিন ‘জিই-২৩৫’ উড়েছিল, তা বিমানচালকের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। তিনিই জোর করে জনবহুল এলাকায় বিমানটিকে ভেঙে পড়তে দেননি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে দেখে তিনি সোজা বিমানটি নিয়ে গিয়েছিলেন নদীর দিকে। আর তার জন্যই বেঁচে গিয়েছে আরও অনেকগুলি প্রাণ। শহরের কোনও বহুতলের উপর ওই বিমান ভেঙে পড়লে তার ফল কী হত, তা ভেবেই শিউরে উঠছেন তাইপেইবাসী।
বিমানচালকের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন উপচে পড়ছে নানা বার্তা। কেউ তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করছেন। কেই আবার তাঁর জন্য শোকবার্তা পোস্ট করছেন। জিন ওই নামে এক অভিনেত্রী ফেসবুকে লিখেছেন, “আমি বিশ্বাস করি শহরের বহুতলগুলি থেকে বিমানটিকে দূরে নিয়ে গিয়েছিলেন বিমানচালক। উনিই আসল নায়ক।”
লিয়াওর দেহ উদ্ধার হলেও এখনও পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি আট জন যাত্রীর। নিখোঁজদের খোঁজে কিলুং নদীতে এখনও তল্লাশি জারি আছে। তবে খারাপ আবহাওয়া আর প্রবল ঠান্ডার জন্য উদ্ধারকাজে বিঘ্ন হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ট্রান্সএশিয়া কর্তৃপক্ষ। তবে তাইপেইয়ের ‘এভিয়েশন সেফটি কাউন্সিলের’ ডিরেক্টর টমাস ওয়াং জানাচ্ছেন, ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার থেকে যেটুকু তথ্য মিলেছে, তাতে ইঞ্জিনের গোলমালের তত্ত্বই উঠে আসছে। ওয়াং জানিয়েছেন, ওড়ার ৩৭ সেকেন্ডের মাথায় বিমানের ডান দিকের ইঞ্জিন বিপদঘণ্টি বাজিয়েছিল। কিন্তু সেটি বন্ধ হয়ে যায়নি। বা তাতে কোনও ভাবে আগুন ধরেনি। তবে সেটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ সেটি বন্ধ না হলেও তখন কোনও কাজ করছিল না। এর ঠিক ৪৬ সেকেন্ড পরে বিমানের বাঁ দিকের ইঞ্জিনটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বিমানচালক দু’টিকেই পুনরায় চালুর চেষ্টা করেন। কিন্তু লাভ হয়নি। এর ৭২ সেকেন্ড পরেই বিমানটি নদীতে ভেঙে পড়ে।