চল্লিশ বছর ধরে ডায়েরির পাতায় আটকে থাকা একান্ত গোপন অনুভূতিগুলো এ বার দেখতে পাবেন তামাম ব্রিটেনবাসী। দ্বিধা তাই রয়েই যাচ্ছে লেখকের। কিন্তু তা-ও নিজের সব রচনা, পাণ্ডুলিপি ব্রিটিশ লাইব্রেরিকে সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক হানিফ কুরেশি। সাধারণ মানুষ থেকে গবেষক, প্রত্যেকেই যাতে তাঁর জীবনকাহিনি জানতে পারেন, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত। ২০১৪ সালের শেষ দিকে লাইব্রেরির রিডিং রুমে সে সব সংগ্রহের দেখা মিলবে বলে খবর।
কিন্তু তা-ও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না ব্রিটেনের এই প্রবল জনপ্রিয় লেখক। এবং তাঁর চিন্তার মূল কারণ ডায়েরিগুলিই। তাঁর লেখার যে সংগ্রহ ব্রিটিশ লাইব্রেরি পেয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ৫০টি ব্যক্তিগত ডায়েরি এবং নোটবুক। হানিফের বয়ানে, “ডায়েরির মূল বিষয়ই হল এক বার লিখে ফেললে তা আর বদলানো যায় না।” আর স্বাভাবিক ভাবেই এমন কিছু অনুভূতি, ঘটনা বা স্বীকারোক্তিই ডায়েরির পাতায় উঠে আসে, যা কি না বেশ গোপন। সে সব লেখা যদি সকলের ধরাছোঁয়ার মধ্যে এসে যায়, তাতে লেখকের সমস্যা বাড়ে বইকী। ঠিক এটাই হতে চলেছে ‘দ্য বুদ্ধ অব সাবার্বিয়া’-র স্রষ্টার সঙ্গে। ডায়েরির পাতা উল্টোতে উল্টোতে এক্কেবারে শুরুর লেখাটি পড়লে হাসিই পাবে। সেখানে বছর পনেরোর হানিফ লিখেছেন, “অপেক্ষা করুন আর দেখুন কী হয়। আমার থেকে সফল কেউ হবে না।” আবার কোথাও পনেরো বছরের কিশোরের সগর্ব স্বীকারোক্তি, “আজ টিভি দেখার মতো ফালতু কাজ না করে যদি সে সময় কাজের কাজ করতাম, তা হলে ব্যাপক সাহিত্য সৃষ্টি করে ফেলতাম।” ডায়েরি থেকে স্পষ্ট, সালটা ১৯৭০।
তার প্রায় চুয়াল্লিশ বছর পর সে সব উল্টে দেখে কী বলছেন হানিফ? আত্মপক্ষ সমর্থনে তাঁর সলজ্জ যুক্তি, “একটাই বাঁচোয়া যে ১৪ বছরের প্রত্যেক কিশোর-কিশোরীই নিজের ডায়েরিতে বিখ্যাত হওয়ার গল্পই লেখে। আমি সত্যি সত্যি খুব ছোট থেকে লেখক হতে চাইতাম।” তাঁর পরেই ছোট্ট অথচ বিনয়ী সংযোজন, “এখনও হতে চাই।”
পনেরো বছরের হানিফের সঙ্গে আজকের হানিফের ফারাক কি শুধু এটাই? না। কারণ ইতিহাস বলছে, তার পর একের পর এক সম্মান-পুরস্কার নিজের ঝুলিতে পুরেছেন এই লেখক। হয়ে উঠেছেন হলিউডের সফল চিত্রনাট্যকার। ‘মাই বিউটিফুল লন্ড্রেট’, ছবির চিত্রনাট্যের জন্য অস্কারে মনোনয়ন পান। আবার ব্যাপক সাফল্যের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনের ওঠানামাও দেখেছেন তিনি গত চার দশকে। সে সবের হাত ধরেই এসেছে পরিবর্তন।
আর তাঁর মতো প্রথিতযশা লেখকের পরিবর্তনের সেই কাহিনিই তুলে ধরতে এই সংগ্রহ নিজেদের জিম্মায় নিল ব্রিটিশ লাইব্রেরি। ডায়েরির পাশাপাশি সেখানে থাকবে হানিফের বিভিন্ন লেখার পাণ্ডুলিপি। থাকবে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত তাঁর শেষ উপন্যাস ‘দা লাস্ট ওয়ার্ড’। ব্রিটিশ লাইব্রেরির মডার্ন লিটারারি ম্যানাস্ক্রিপ্টের প্রধান কিউরেটর র্যাচেল ফসের মতে, “হানিফ কুরেশি আধুনিক সাহিত্যের অন্যতম এক স্বর। এই সংগ্রহ তাঁর জীবন এবং কাজের গুরুত্ব বুঝতে ব্যাপক সাহায্য করবে।”
লেখক কী ভাবছেন? “আমার লেখার সংগ্রহ নিতে ব্রিটিশ লাইব্রেরি যে উদ্যোগ শুরু করেছে, তাতে আমি অভিভূত। ...আশা করব এটি যেন দর্শকদের বৃহত্তর অংশের কাজে লাগে।” তবে একই সঙ্গে হানিফের ইচ্ছা, যদি কখনও তাঁর সন্তানরা তাঁর লেখার ব্যাপারে উৎসাহী হয়, তা হলে ব্রিটিশ লাইব্রেরি অন্তত সেই উৎসাহ মেটাতে পারবে।