বারো দিন পার হয়ে গেলেও নিখোঁজ বিমান এমএইচ ৩৭০ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত করে কোনও তথ্যই দিতে পারছেন না তদন্তকারীরা। বুধবার তাঁরা বিমান-রহস্যে একটাই নতুন সূত্র যোগ করেছেন। তাঁদের মতে, এমএইচ ৩৭০ সম্ভবত দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের দিকে উড়ে গিয়েছিল।
আর এ দিনই মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা এবং পরিবহণমন্ত্রী হিশামুদ্দিন হুসেন সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, এমএইচ ৩৭০-এর সিমুলেটর (যেটি পাইলট জাহারি আহমেদ শাহের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল) পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, তার কিছু ফাইল উধাও। আপাতত সেই তথ্য উদ্ধারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছে মালয়েশিয়া।
হিশামুদ্দিন বলছেন, ৩ ফেব্রুয়ারি সিমুলেটর থেকে ওই তথ্য উড়িয়ে দেওয়া হয়। কী এই সিমুলেটর?
প্রতি বিমানের যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্য কম্পিউটারের সাহায্যে সিমুলেটরের মধ্যেই ভরা থাকে। সেটিকে একেবারে বিমানের মতোই দেখতে হয়। আবার কেউ কোনও একটি ঘরকেই বিমানের ককপিট বানিয়ে ফেলেন। জাহারিও বাড়িতে এমন একটি ককপিট বানিয়ে বিমান চালনা অনুশীলন করতেন। সেটাই পরে উদ্ধার করা হয় তাঁর বাড়ি থেকে। কয়েকটি রিপোর্টে আবার দাবি, এক হাজার মিটারের বেশি লম্বা রানওয়ে রয়েছে এমন পাঁচটি বিমানবন্দর সম্পর্কিত তথ্য রাখা ছিল জাহারির সিমুলটরে। তার মধ্যে রয়েছে, ভারত এবং শ্রীলঙ্কার তিনটি বিমানবন্দর, মলদ্বীপের মালের একটি এবং আমেরিকার একটি বিমানবন্দর। তবে জাহারির সিমুলেটর থেকে কী তথ্য উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছুই বলেননি হিশামুদ্দিন।
আগেই দাবি করা হয়েছিল, নিখোঁজ বিমানকে যে-ই ভুল পথে চালনা করে থাকুক, বিমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা কী ভাবে বিকল করা যায়, সে সম্পর্কে ওই ব্যক্তির সম্যক জ্ঞান ছিল। জাহারির সিমুলেটরে রেকর্ড করা তথ্য থেকে বোঝা যাবে, এমএইচ ৩৭০ ওড়ানোর আগে জাহারি নিজেই বিমান ঘুরিয়ে অন্য পথে চালনার বিষয়টি অনুশীলন করে নিয়েছিলেন কিনা। কিন্তু বিমান-রহস্যের জট খোলার আগেই জাহারি সম্বন্ধে কোনও সিদ্ধান্তে না পৌঁছতে অনুরোধ করেছেন হিশামুদ্দিন।
মলদ্বীপের একটি প্রত্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দারা গত কাল দাবি করেছিলেন, বিমান নিখোঁজ হওয়ার পরের দিন সকালে খুব নিচু এলাকা দিয়ে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান উড়ে যেতে দেখেন তাঁরা। যে দাবি আজ আবার উড়িয়ে দিয়েছেন হিশামুদ্দিন। মলদ্বীপে পুলিশ খতিয়ে দেখেছে ওই তথ্য ঠিক নয়। তবে এ দিন একটি তথ্যের উপরে নির্ভর করেই তদন্তকারীরা দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের দিকে এমএইচ ৩৭০ উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। সেটা হচ্ছে, বিমানটি উত্তর করিডরের কোনও দেশের আকাশসীমায় ঢুকেছিল, এমন প্রমাণ মেলেনি। তাই তদন্তকারীদের অনুমান, এমএইচ ৩৭০ ক্রমশ দক্ষিণের দিকে এগিয়েছিল। দক্ষিণ করিডরের একেবারের শেষের দিকেও যেতে পারে। সে কারণেই দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের দিকে ইঙ্গিত করছেন তাঁরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত অস্ট্রেলীয় জাহাজ ও বিমান সেখানে তল্লাশি চালিয়ে উধাও বিমানের কিছুই খুঁজে পায়নি। ওই অঞ্চলে খোঁজ চালাচ্ছে ইন্দোনেশিয়াও।
এ ছাড়াও হিশামুদ্দিন আজ জানান, এমএইচ ৩৭০-এর অধিকাংশ যাত্রীর পরিচয় তাঁরা জানতে পেরেছেন। ইউক্রেন এবং রাশিয়া ছাড়া সব দেশের কাছ থেকেই যাত্রী সম্পর্কিত সব তথ্য হাতে এসেছে। কিন্তু কোনও যাত্রীর সঙ্গে জঙ্গিযোগ বা সন্দেহজনক কিছুর সঙ্গে জড়িত বলে তাঁদের মনে হয়নি। অন্য কিছু দেশের রেডার সম্পর্কিত তথ্য মালয়েশিয়া পেয়েছে। তবে সেগুলি এখনই প্রকাশ করা যাবে না বলে জানান পরিবহনমন্ত্রী। ফলে ১২ দিন পরেও এমএইচ ৩৭০ ঘিরে সংশয়ের কোনও কিনারা হল না। সব ভাসা ভাসা তথ্য শুনে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছে এমএইচ ৩৭০-এর যাত্রীর স্বজনদের।