মেয়ে লিসার সঙ্গে বৃদ্ধ চার্লস। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।
সুখ হোক বা দুঃখ। জীবনের কোনও স্মৃতিই তাঁর মনে নেই। এমনকী তিনি যে কথা বলতে জানেন, ভুলতে বসেছেন সেটাও। তবু প্রিয় পুষ্যি যখন সামনে আসে, ভোলার অসুখ ভুলে কথা বলতে শুরু করেন সেই বৃদ্ধই।
বৃদ্ধের নাম চার্লস সাসের। নিবাস নিউ মেক্সিকোর আলবারকারকিউ। চার্লসের মেয়ে লিসা অ্যাবেটা সম্প্রতি একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন ইউ টিউবে। সেখানেই দেখা গিয়েছে কী ভাবে অ্যালঝাইমার্সে সব ভুলে যাওয়া চার্লস তাঁর পোষা কুকুরকে দেখে কথা বলে উঠছেন।
লিসা জানিয়েছেন, বছর পাঁচেক আগে তাঁর বাবার অ্যালঝাইমার্স ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে সব কিছু ভুলতে শুরু করেন চার্লস। এক সময় কথা বলতেও ভুলতে শুরু করেন বৃদ্ধ। “চোখের সামনে নিজের বাবাকে এই অবস্থায় দেখতে খুব কষ্ট হত। বাবা তো সব ভুলে যাচ্ছিলেনই। এক সময় দেখলাম তিনি কথাটাও আর বলতে পারছেন না। আমার ইচ্ছে ছিল, বাবার সঙ্গে কাটানো সুন্দর কিছু সময় ক্যামেরা বন্দি করে রাখি। সেই সুযোগ এক দিন আচমকাই পেলাম,” বললেন লিসা। তিনি জানিয়েছেন, এক দিন হঠাৎই চার্লসের আচরণে বদল লক্ষ করেন তাঁরা। বাড়ির কুকুর রস্কো যে মুহূর্তে চার্লসের কাছে এসে দাঁড়াচ্ছে, ঠিক তখনই কথা বলছেন বৃদ্ধ। এক দম সেই ভাবে, ঠিক যে ভাবে আগে বলতেন।
কী আছে সেই ভিডিওতে? লিসার পোস্টটি শুরু হয়েছে, তাঁরই কথা দিয়ে। “আমার বাবা অ্যালঝাইমার্স অসুখে ভুগছেন। তিনি তাঁর কথাও হারাতে বসেছেন। কিন্তু দেখুন, আমাদের বাড়ির কুকুর রস্কোকে দেখে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী হয়।” এ বার দেখা যায়, বৃদ্ধের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ছাই রঙা এক বিশাল আকারের কুকুর। আর তাকে দেখেই চার্লস বলে ওঠেন, “ও তুমি! তোমার হাতে ওটা কী?” কথার সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটির পিঠে হাতও বোলান চার্লস। আর মালিকের আদর পেয়ে রস্কোও স্বভাবমতো তার লেজ নাড়তে শুরু করে। তার পরই চার্লস আবার বলে ওঠেন, “আমি যে কেন তোমার যত্ন নিতে পারি না। এ বার থেকে আমি তোমায় দেখব, আর তুমি আমায়।” ভিডিওটি ইতিমধ্যেই চার লক্ষ পঁচিশ হাজার বার দেখা হয়েছে। ভিডিও পোস্টের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অনলাইন দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে লিসা রীতিমতো অভিভূত। তাঁর কথায়, “আমার ছেলের সাহায্যে অনলাইনে ভিডিওটি পোস্ট করেছিলাম। তখনও ভাবিনি, এত লোক এটির প্রশংসা করবেন।” তবে বাবাকে নিয়ে এত কথা বলেও নিজের মাকে কৃতিত্ব জানাতে ভোলেননি লিসা। তাঁর কথায়, “মা যে ভাবে আমাদের পরিবারকে বেঁধে রেখেছেন, তাতে সব কৃতিত্ব ওঁকেই দিতে হবে।”
বর্তমানে আমেরিকার ৫২ লক্ষ মানুষ অ্যালঝাইমার্সে ভুগছেন। যাঁদের মধ্যে ৬৫ বছরের নীচে রয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় কুড়ি হাজার। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এই রোগ সারাতে শুধু পোষ্যই নয়, গানও খুব সদর্থক ভূমিকা পালন করে থাকে। গান শুনেও অনেক অ্যালঝাইমার্স রোগী কিছু ক্ষণের জন্য নিজের ভুলে যাওয়া স্মৃতি ফিরে পান। চার্লসের ক্ষেত্রে বাড়ির পোষা কুকুর রস্কো সেই ভূমিকাটাই পালন করেছে।