দফতরে অবরুদ্ধ খালেদা, অশান্তির মুখে ঢাকা

গণতন্ত্রের পক্ষে-বিপক্ষের তাল ঠোকাঠুকিতে ফের উত্তপ্ত বাংলাদেশের রাজধানী শহর। বিরোধী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে শনিবার রাত থেকেই তাঁর গুলশনের দফতরে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। ঢাকায় মিটিং-মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সীমান্ত রক্ষী বিজিবি-র বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেনাদেরও। এর মধ্যেই ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় অন্তত ১০টি বাস ও গাড়িতে আগুন দিয়েছে বিরোধী দলের কর্মীরা।

Advertisement

কুদ্দুস আফ্রাদ

ঢাকা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৬
Share:

বিরোধী নেত্রীর বাড়ির রাস্তায় পুলিশ। ছবি: এএফপি।

গণতন্ত্রের পক্ষে-বিপক্ষের তাল ঠোকাঠুকিতে ফের উত্তপ্ত বাংলাদেশের রাজধানী শহর। বিরোধী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে শনিবার রাত থেকেই তাঁর গুলশনের দফতরে কার্যত অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। ঢাকায় মিটিং-মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সীমান্ত রক্ষী বিজিবি-র বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেনাদেরও। এর মধ্যেই ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় অন্তত ১০টি বাস ও গাড়িতে আগুন দিয়েছে বিরোধী দলের কর্মীরা।

Advertisement

বিএনপি বয়কট করায় গত নির্বাচনে কার্যত অনায়াসে জিতে ক্ষমতায় এসেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামি লিগের জোট। সেই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে ঢাকায় ‘গণতন্ত্রের বিজয়’ উপলক্ষে জনসভার ডাক দিয়েছিল সরকারি দল। আবার এক বছর ঘরে বসে থাকার পর এই নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্রের লজ্জা’ বলে বর্ণনা করে ঢাকার সর্বত্র বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিলেন বিএনপি-জামাতে ইসলামি জোটের নেত্রী খালেদা জিয়া। পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু শনিবার রাতেই পুলিশের গাড়ি খালেদার গুলশনের দফতর ঘিরে ফেলে কড়া পাহারা বসায়। পল্টনে বিএনপি-র দফতর থেকে দলের মুখপাত্র রুহুল কবীর রিজভিকে অসুস্থ অবস্থায় তুলে এনে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। সকালে ঢাকার সর্বত্র অনির্দিষ্ট কালের জন্য সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গ্রেফতারের ভয়ে বিএনপি নেতারা প্রায় সকলেই গা-ঢাকা দেন। তবে বিএনপি অনুগত সাংবাদিকের একটি দলকে বিকেলে খালেদার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়। খালেদা তাঁদের মাধ্যমে ঘোষণা করেন, ‘বেআইনি’ সরকারের নিষেধাজ্ঞা না-মেনে সোমবার ঢাকায় তিনি সভা করবেন। সন্ধ্যার পর শুরু হয় একের পর এক গাড়িতে আগুন লাগানো। তবে শাসক দল তাদের সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে।

সরকার কেন এমন পদক্ষেপ করল? বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বিএনপি ও জামাত সোমবারের বিক্ষোভ কর্মসূচির মাধ্যমে ঢাকা জুড়ে নাশকতা চালিয়ে সরকার উচ্ছেদের চক্রান্ত করেছিল। জেএমবি, হুজি ও আলফার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে মিলেই এই চক্রান্ত হয়েছিল। সরকার পক্ষের নেতা-মন্ত্রীদের ওপর হামলা ও ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানোও এই চক্রান্তের অঙ্গ ছিল। গোয়েন্দাদের দাবি, তাঁরা জানতে পেরেছিলেন, খালেদা জিয়া শনিবার রাতেই ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢুকে পড়ে সেখান থেকে সরকার ফেলার কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন এমনটাই ছিল পরিকল্পনা। এ জন্য রাতেই প্রেস ক্লাবে গোপনে প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। প্রেস ক্লাবের গায়েই কেন্দ্রীয় সচিবালয়। গোয়েন্দাদের দাবি, সেখানে জন সমাবেশ ও অবস্থান করে অরাজকতা সৃষ্টির সঙ্গে রাজধানীর অন্যত্র নাশকতা চালানো ছিল পরিকল্পনার অঙ্গ।

Advertisement

পুলিশ দাবি করেছে, খালেদাকে আদৌ আটক বা অবরুদ্ধ করা হয়নি। গোয়েন্দা দফতরের কাছ থেকে নাশকতার খবর পাওয়ার পর তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে মাত্র। একই কারণে সব দলের মিটিং-মিছিলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পাহারা বাড়ানোর পাশাপাশি বিজিবি-কেও মোতায়েন করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, আগেভাগে মাঠে নেমে তাঁরা এই চক্রান্ত রুখেছেন। ঢাকামুখী যানবাহনেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

কিন্তু তা-ও সোমবার অশান্তির আশঙ্কা যাচ্ছে না ঢাকাবাসীর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement