ইরাকের লড়াইয়ে বিপাকে দিল্লি

তেল সঙ্কটের আশঙ্কায় ভারতের অর্থ মন্ত্রক

ইরাকের আইএসআইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিমানহানা চালাতে আমেরিকাকে অনুরোধ করল প্রধানমন্ত্রী নুরি অল-মালিকির সরকার। আজ দেশের প্রধান তেল শোধনাগারে হামলা চালাল আইএসআইএস জঙ্গিরা। পাশাপাশি রাজধানী বাগদাদের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে বাকুবা শহরও ইরাকি সেনাবাহিনীর হাতছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম চড়ার সম্ভাবনায় চিন্তিত নরেন্দ্র মোদী সরকার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৪ ০২:৫২
Share:

রণসজ্জা। জঙ্গিদের রুখতে তৈরি শিয়া মহিলা। বুধবার নজাফে। ছবি: এএফপি।

ইরাকের আইএসআইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিমানহানা চালাতে আমেরিকাকে অনুরোধ করল প্রধানমন্ত্রী নুরি অল-মালিকির সরকার। আজ দেশের প্রধান তেল শোধনাগারে হামলা চালাল আইএসআইএস জঙ্গিরা। পাশাপাশি রাজধানী বাগদাদের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে বাকুবা শহরও ইরাকি সেনাবাহিনীর হাতছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে, বিশ্ববাজারে তেলের দাম চড়ার সম্ভাবনায় চিন্তিত নরেন্দ্র মোদী সরকার।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী নুরি-অল মালিকির শিয়াপ্রধান সরকারের সঙ্গে সুন্নি আইএসআইএসের সংঘর্ষে ইরাকে ভাঙন ধরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বাইজি তেল শোধনাগার সূত্রে খবর, আগেই সেখানে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে, উত্তর ইরাকের বড় অংশে তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বিদেশি কর্মীদেরও। স্থানীয় কর্মীরা অবশ্য বাইজিতেই রয়েছেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আজ ভোরে শোধনাগারের মূল দু’টি প্রবেশপথ দিয়ে হামলা চালায় আইএসআইএস জঙ্গিরা। পরে শোধনাগারের ৭৫ শতাংশ এলাকাই তাদের দখলে চলে যায়। ইরাকি সেনা অবশ্য দাবি করেছে, জঙ্গিদের হটিয়ে দেওয়া গিয়েছে। এখন পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে।

বাগদাদের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে বাকুবাতেও সেনাবাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের প্রবল সংঘর্ষ চলছে। বাকুবা জঙ্গিদের দখলে গেলে বাগদাদ রক্ষা করা মালিকি সরকারের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আনবার প্রদেশের রাজধানী রামাদির দিকেও জঙ্গিরা বেশ কয়েক কদম এগিয়েছে। সংবাদ সংস্থার খবর, বিমান হানা চালাতে আমেরিকার কাছে অনুরোধ জানিয়েছে বাগদাদ। সেই অনুরোধ পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে আমেরিকাও।

বহু ক্ষেত্রে ইরাকি সেনারা পক্ষ বদল করে আইএসআইএস জঙ্গিদের পক্ষে যোগ দেওয়ায় বিপদ বেড়েছে মালিকির। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে ইরাকে আল-কায়দার বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে লড়েছিল বেশ কিছু সুন্নি গোষ্ঠী। কিন্তু মালিকি সরকার সরকারি চাকরি-সহ সব ক্ষেত্রে শিয়াদের গুরুত্ব দিয়েছে বলে দাবি ওই গোষ্ঠীগুলির। তাই এখন আইএসআইএসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তারা।

তাই আজ প্রধানমন্ত্রী মালিকি সুন্নি ও কুর্দ সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে টেলিভিশনে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ডাক দিলেও তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে এই পরিস্থিতিতে মালিকির পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা শিয়া সম্প্রদায়।

শিয়া ধর্মগুরু গ্র্যান্ড আয়াতোল্লা আলি-সিসতানির ডাক মেনে গত কয়েক দিন ধরেই দলে দলে অস্ত্র হাতে লড়াইয়ে যোগ দিতে নেমেছেন শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। আর আইএসআইএসের দখলে থাকা এলাকা থেকে পালাচ্ছেন ওই সম্প্রদায়ের শরণার্থীরা। নির্মম ভাবে হাজার হাজার শিয়াকে মারার কথা গর্বিত ভাবে প্রচার করেছে আইএসআইএস। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে এই ধরনের প্রচারের ক্ষেত্রে তারা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে বলে মেনে নিচ্ছেন মার্কিন গোয়েন্দারাই। আজ বাগদাদের শিয়াপ্রধান এলাকায় বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন ৭ জন। রাজধানীর রাস্তায় পাওয়া গিয়েছে সুন্নি ধর্মগুরুর দেহ। গোষ্ঠী মেরুকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে বসরাই গোলাপের দেশে।

মার্কিন সামরিক সূত্রে খবর, জঙ্গিরা শেষ পর্যন্ত বাগদাদ দখল করতে পারবে না বলে আশা পেন্টাগনের কর্তাদের। কারণ, রাজধানী রক্ষার জন্য মোতায়েন সেনা ও শিয়া যোদ্ধাদের ফৌজ মালিকি সরকারের অনেক বেশি অনুগত বলে জানিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা।

জটিল পরিস্থিতিতে মালিকিকে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে ইরান। আজ ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি বলেছেন, “কারবালা, নজাফ, কাধিমিয়া, সামারার মতো শিয়া ধর্মস্থান রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে ইরান।” সুন্নি জঙ্গিদের মোকাবিলায় আগেও অল-মালিকি সরকারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল শিয়া ইরান। মালিকি সরকার রীতি মতো প্যাঁচে পড়ায় এ বার তারা তেহরানের হাত ধরতে আরও বেশি আগ্রহী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইরাকের পরিস্থিতি বুঝে ইরানের সঙ্গে সমীকরণ বদলানোর ইঙ্গিত দিয়েছে ব্রিটেন ও আমেরিকা। তেহরানে বন্ধ ব্রিটিশ দূতাবাস ফের খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লন্ডন।

তবে সরাসরি ইরাকে হস্তক্ষেপ করা নিয়ে এখনও মনস্থির করতে পারেনি পশ্চিমী দুনিয়া।

জঙ্গিদের রুখতে ইরাকের মাটিতে মার্কিন বাহিনী পাঠানো হবে না বলে অবশ্য ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন। তবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে বিমানহানা চালানোর কথা ভাবছে আমেরিকা। পেন্টাগন সূত্রে খবর, ইয়েমেনে চালকহীন ড্রোন বিমান থেকে আল-কায়দা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে হামলা চালানো হয়েছিল। ইরাকে সেই ধরনের অভিযানের কথা ভাবা হচ্ছে। বাগদাদে মার্কিন দূতাবাস রক্ষার জন্য অবশ্য অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছে ওয়াশিংটন। প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য পারস্য উপসাগরে তৈরি রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ।

বাইজি তেল শোধনাগারে হামলার পরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়া নিয়ে নতুন ভাবে হিসেব নিকেশ শুরু হয়েছে। নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম বাজেটের আগে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নয়াদিল্লি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, তেলের দাম বেশ কয়েক মাস ব্যারেল প্রতি ১২০ ডলারের কাছাকাছি থাকতে বলে মনে করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে রাজকোষ ঘাটতি ও আর্থিক বৃদ্ধির উপরে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। তেল কেনার ক্ষেত্রে সৌদি আরবের পরে ভারতের অন্যতম ভরসা ইরাকই। আজ ইরাকে লড়াইয়ের জেরে পড়েছে শেয়ার বাজার। কমেছে ডলারে টাকার দামও।

ইরাকে পরিস্থিতি কী মোড় নেয়, সে দিকেই তাকিয়ে উদ্বিগ্ন নয়াদিল্লি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement