মাস চারেকের ব্যবধানে দু’-দু’টো বিপর্যয়।
প্রথম ধাক্কাটা এসেছিল ৮ মার্চ। কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিং যাচ্ছিল মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স-এর বোয়িং ৭৭৭ বিমান এমএইচ-৩৭০। ভারত মহাসাগরের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝ আকাশে উধাও হয়ে যায় আস্ত বিমানটি। আজও খোঁজ মেলেনি বিমানের ২৩৯ জন আরোহীর, পাওয়া যায়নি বিমানের ধ্বংসাবশেষও। গত কাল মালয়েশীয় বিমান সংস্থারই আর একটি বোয়িং ৭৭৭ বিমান, এমএইচ-১৭ ক্ষেপণাস্ত্র হানার মুখে পড়ল।
পরপর এই দু’টো ঘটনায় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে মালয়েশীয় বিমান সংস্থার ভবিষ্যৎ নিয়েই। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, এর পর থেকে ওই সংস্থার বিমানে চড়তে এক রকম ভয়ই পাবেন যাত্রীরা। একটা বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে তার আর্থিক ক্ষতি বিমান সংস্থাকেই বহন করতে হয়। কিন্তু পরপর একই ধরনের ঘটনা, একই বিমান সংস্থার সঙ্গে ঘটতে থাকলে যাত্রীদের একটা বড় অংশ মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সংস্থার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাওয়াটা আর্থিক ক্ষতির থেকেও বেশি চিন্তার কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমএইচ-৩৭০ নিখোঁজ হওয়ার সময়ই যাত্রীদের আত্মীয়-পরিজনদের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল মালয়েশীয় বিমান সংস্থার কর্তৃপক্ষকে। আত্মীয়দের অভিযোগ ছিল, নিখোঁজ যাত্রীদের সম্পর্কে কখনওই যথাযথ তথ্য দিতে পারেনি সংস্থাটি। যাত্রীদের পরিজনেরা তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে পর্যন্ত গিয়েছিলেন। এ বার যাতে সেই পরিস্থিতি না হয়, সে জন্য আগে থেকেই মালয়েশীয় বিমান সংস্থাকে সতর্ক হতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
১৯৪৭ সালে পথ চলা শুরু। প্রথমে দেশীয় পরে, আন্তর্জাতিক স্তরে বিমান পরিষেবা শুরু করে এই সংস্থা। রোজ বিশ্বের ৮০টি শহরে প্রায় ৩৭ হাজার যাত্রী পাড়ি দেন তাদের উড়ানে। যাত্রী পরিষেবার জন্য বিভিন্ন সময় একাধিক পুরস্কারও পেয়েছে। কিন্তু সেই সুসময়ে এখন ভাটার টান। অনেকেই বলছেন, এমএইচ-৩৭০ নিখোঁজের আগে থেকেই লোকসানে চলছিল বিমান সংস্থাটি। অপেক্ষাকৃত সস্তার বিমান সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারছিল না তারা।
এই অবস্থায় পরপর দু’টি বিপর্যয় সামাল দেওয়ার মতো পরিকাঠামো বিমান সংস্থার আছে কি? উল্টো মতও আছে অবশ্য। সান ফ্রান্সিসকোর একটি সংস্থার বিশেষজ্ঞ হেনরি হার্টেভেল্ড মনে করেন, মাথা তুলে দাঁড়ানোর যথেষ্ট সুযোগ আছে মালয়েশীয় বিমান সংস্থার সামনে। তাঁর মতে, সংস্থার প্রধানকে অবিলম্বে সরিয়ে তাঁর জায়গায় অন্য কাউকে বসালে ভাল হয়। এমএইচ-৩৭০ নিখোঁজের সময় সংস্থার তরফে যে যে ভুলগুলো করা হয়েছিল, সেগুলো শুধরে নিয়ে নিহত যাত্রীদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোটাও আস্থা ফেরাতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করছেন আর এক বিশেষজ্ঞ টেড গেভিন।