উত্তাল: মুগাবে-বিরোধী স্লোগান। হারারের রাস্তায়। ছবি: রয়টার্স।
সাদা-কালো, ছেলে-বুড়ো-মেয়ে মিলিয়ে সংখ্যাটা কয়েক হাজার। শহরে এখন হাড়-কাঁপানো শীত। তবু তা উপেক্ষা করেই আজ ভোর-ভোর রাস্তায় নামল হারারে। বাস-লরি বোঝাই করে মানুষ নামতেই থাকলেন। কাতারে কাতারে। আর দেখতে দেখতেই প্ল্যাকার্ডে-প্ল্যাকার্ডে ছয়লাপ হয়ে গেল রাজপথ। স্লোগান উঠল, ‘মুগাবে, আর না।’
প্রথমটায় মনে হয়েছিল ‘বিক্ষোভ মিছিল’। সেনা অভ্যুত্থানের পরে জিম্বাবোয়ের প্রেসি়ডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে ক্ষমতাচ্যুত করতেই একজোট হয়েছে হারারে। কিন্তু খানিক পরেই বোঝা গেল, মুগাবে যে সরছেন তা যেন ধরেই নিয়েছেন একাংশ। আর সে ভাবেই আগামীর ছক কষা চলছে। ভিড়ের মধ্যে থেকে এক জন বেরিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক সেনাকে। কারও হাতে আবার নজরে এল সেনা কম্যান্ডার কনস্ট্যানটিনো চিউয়েঙ্গার ছবি। বছর বাইশের মোফাত তো সাফ বলেই দিলেন, ‘‘এখন এরাই আমাদের নেতা। স্বার্থপর নয়, আমরা চাই নিঃস্বার্থ সরকার।’’
সপ্তাহ খানেক আগেও হারারের বুকে এমন একটা ছবি কল্পনা করা যেত না। অথচ আজ সেখানেই মুগাবে-বিরোধী প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে চোখের জলে ভাসলেন বছর চৌত্রিশের ফ্রাঙ্ক মুতসিন্দিকওয়া। বললেন, ‘‘এমন একটা দিনের অপেক্ষাতেই তো ছিলাম আমরা। ৩৭ বছর পরে আবার আমরা স্বাধীন হলাম।’’ এখনও ইস্তফা দেননি মুগাবে (৯৩)। দফায় দফায় এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সেনাও।
হারারে তবু তাঁর হার নিশ্চিত ধরেই নিয়েছে। মুগাবেকে চাইছে না তাঁর নিজের দলও। কাল বিকেলেই ক্ষমতাসীন জ্যানু-পিএফ দলের ১০টি আঞ্চলিক শাখার মধ্যে অন্তত ৮টি তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং দেশের প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে আহ্বান জানিয়েছে। সন্ধের পরে অবশ্য ১০টি শাখাই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। কূটনীতিকদের একাংশ বলছেন, এর জেরেই রবিবার পদ খোয়াতে পারেন মুগাবে। বিক্ষুব্ধ জনতার একাংশ তাঁকে দেশছাড়াও করতে চাইছেন।
রাতারাতি এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে ‘সেনা-অভ্যুত্থান’-কেই প্রধান বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু সেনা-ই বা হঠাৎ এতখানি সক্রিয় হল কেন?
কূটনীতিকদের একাংশ এর পিছনে চিনের হাত থাকতে পারে বলেও দাবি করছেন। অন্তত জিম্বাবোয়েতে এমন একটা ঘটনা যে ঘটতে চলেছে, বেজিং সেটা হয়তো আগেই জানত। সরকারি সব অফিস কব্জা করার ঠিক আগের সপ্তাহে চিন সফরে গিয়েছিলেন সেনা-কম্যান্ডার চিউয়েঙ্গা। চিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রক গত ১০ নভেম্বর সেই সফরের একটি ছবি পোস্ট করে মাইক্রো-ব্লগিং সাইটে। যাতে চিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে হাসিহাসি মুখে করমর্দন করতে দেখা যায় চিউয়েঙ্গাকে। দু’জনকে বৈঠক করতেও দেখা যায় অন্য একটি ছবিতে। বস্তুত এ সব থেকেই মুগাবে হঠানোর পিছনে চিনের হাত থাকার জল্পনা আরও জোরালো হয়েছে।
অনেকেই বলছেন, বেজিংয়ের তরফে সবুজ সঙ্কেত পেয়েই হারারের দখল নেন চিউয়েঙ্গার নেতৃত্বাধীন জিম্বাবোয়ের সেনা।
কী বলছে বেজিং? সরকারি ভাবে এ নিয়ে মুখ না খুললেও, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেজিং-স্থিত এক কূটনীতিকের দাবি— জিম্বাবোয়ের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বরাবরই ভাল। তাই অহেতুক ডামাডোল তৈরির কোনও প্রশ্নই ওঠে না।