Donald Trump Volodymyr Zelensky Clash

ক্ষমা চাইব না, তবে ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত সম্ভব: জ়েলেনস্কি, পাশে দাঁড়ালেন ইউরোপের রাষ্ট্রনেতারা

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প এবং জ়েলেনস্কির বাদানুবাদের পর ইউরোপের একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জ়েলেনস্কি জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইবেন না।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৫ ০৮:৪৫
Share:
Donald Trump and Volodymyr Zelenskyy

(বাঁ দিকে) ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করা সম্ভব, হোয়াইট হাউসের বিতণ্ডার পর এমনটাই জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। তবে ট্রাম্পের কাছে তিনি ক্ষমা চাইতে নারাজ। শুক্রবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর আমেরিকার সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ়কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। সেখানেই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইবেন কি না, নিজের আচরণের জন্য দুঃখপ্রকাশ করবেন কি না। জ়েলেনস্কি সাফ ‘না’ বলে দিয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে যা হয়েছে, তা যে দুই দেশের সম্পর্কের পক্ষে ভাল নয়, মেনে নিয়েছেন জ়েলেনস্কি। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের বাদানুবাদ উভয় পক্ষের জন্যই খারাপ। ট্রাম্প যদি ইউক্রেনকে সাহায্য না-করেন, তবে রাশিয়ার আক্রমণ ঠেকানো আমাদের পক্ষে মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে। তবে আমি নিশ্চিত, এই সম্পর্ক মেরামত করা সম্ভব। কারণ, এটা শুধু দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে সম্পর্কের বিষয় নয়। এটা দুই দেশের মধ্যেকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক। আমি সব সময় আমাদের দেশের মানুষের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ জানাই।’’

Advertisement

শুক্রবার (স্থানীয় সময়) ট্রাম্প এবং আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্সের সঙ্গে বৈঠক করেন জ়েলেনস্কি। একটি খনিজ চুক্তির বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কথাবার্তা হয়। ওই চুক্তি স্বাক্ষর করার কথা ছিল জ়েলেনস্কির। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা ক্রমে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে পরিণত হয়। ট্রাম্প প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেন, জ়েলেনস্কি লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন। তিনি সমঝোতার পথে হাঁটতে চাইছেন না। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের জন্যও জ়েলেনস্কিকেই দায়ী করেছেন ট্রাম্প। জ়েলেনস্কিও অনড় মনোভাব নিয়ে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বৈঠকে ছিলেন। ভান্সের সঙ্গেও তাঁর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। শেষে বাতিল হয়ে যায় চুক্তি। জ়েলেনস্কি হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে আসেন।

হোয়াইট হাউসে পোশাক নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে জ়েলেনস্কিকে। এক সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কেন আপনি স্যুট পরেননি? আমেরিকার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক দফতরে এসেছেন স্যুট না পরে?’’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে খানিক ব্যঙ্গ করেই এর পর তিনি বলেন, ‘‘আপনার আদৌ স্যুট আছে তো?’’ জ়েলেনস্কি তৎক্ষণাৎ জবাব দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘এই যুদ্ধ শেষ হলে আমি নিশ্চয়ই স্যুট পরব। হয়তো আপনার মতো, হয়তো তার চেয়েও ভাল কিছু পরব।’’ উল্লেখ্য, এর আগে জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করার সময়েও স্যুট পরেননি জ়েলেনস্কি।

Advertisement

এই বৈঠকের পর ইউরোপের একাধিক দেশের রাষ্ট্রনেতা মুখ খুলেছেন। তাঁরা জ়েলেনস্কি এবং ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। আমেরিকার সঙ্গে ইউরোপের যে সমস্ত দেশের বন্ধুত্ব রয়েছে, মূলত তাঁরাই জ়েলেনস্কিকে সমর্থন করেছেন। ট্রাম্প আমেরিকার কুর্সিতে বসার পর থেকে এই মিত্র দেশগুলি আতঙ্কিত। তাদের ধারণা, জ়েলেনস্কিকে চাপে রেখে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকেই জয়ী ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে ট্রাম্পের। হোয়াইট হাউসে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বেনজির বাদানুবাদের পর একযোগে তাই ইউরোপের রাষ্ট্রনেতারা মুখ খুলেছেন।

ইউক্রেন শান্তি চায়: জার্মানি

ট্রাম্প-জ়েলেনস্কি সংঘাতের পর জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ স্কল্‌জ় বলেন, ‘‘ইউক্রেনের মানুষ শান্তি চান। শান্তি কত জরুরি, তা ওঁদের চেয়ে বেশি কেউ জানেন না। সেই কারণেই আমরা সকলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির দাবি করে আসছি। জার্মানি এবং ইউরোপের উপর ভরসা রাখতে পারে ইউক্রেন।’’

রাশিয়াই আগ্রাসী, লড়ছে ইউক্রেন: ফ্রান্স

ফান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ পর্তুগালের সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘‘রাশিয়া আগ্রাসী, ইউক্রেনের মানুষ সেই আগ্রাসনের শিকার। আমরা তিন বছর আগেও ইউক্রেনকে সাহায্য করতে এবং রাশিয়ার উপর বিধিনিষেধ চাপাতে সম্মত হয়েছিলাম। এখনও তা-ই করতে চাই। আমরা বলতে আমি আমেরিকা, সমগ্র ইউরোপ, জাপান, কানাডা— সকলের কথাই বলছি। ইউক্রেন নিজের সম্মানের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য এই যুদ্ধ করছে।’’

ভেদাভেদ নয়, একজোট হতে হবে: ইটালি

ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেন, ‘‘পশ্চিমি শক্তির মধ্যে যে কোনও ভেদাভেদ আমাদের আরও দুর্বল করে তোলে। আমেরিকা, ইউরোপের মধ্যে অবিলম্বে আলোচনা প্রয়োজন। আমাদের সামনে যে চ্যালেঞ্জ এসেছে, কী ভাবে তার মোকাবিলা সম্ভব, তা নিয়ে কথা বলা দরকার। ইউক্রেনের মাধ্যমে আমাদের সেই চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছে। কয়েক বছর ধরে আমরা ভাল ভাবেই সেই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছি। আগামী দিনে ইটালি তার বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সামনে এই আলোচনার প্রস্তাবই রাখতে চায়।’’.

প্রকাশ্যে ঝামেলা! জিতছে ক্রেমলিন: ডেনমার্ক

ডেনমার্কের বিদেশমন্ত্রী লার্স লোক্কে রাসমুসেন বলেন, ‘‘ইউক্রেনের পেটে তো ঘুষি মারা হল! বন্ধুদের মধ্যে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে হবে। কিন্তু সেটা এ ভাবে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে হলে এক জনই জিতে যান। আর তিনি ক্রেমলিনে বসে আছেন।’’

ইউক্রেন, ভয় পেয়ো না: ইউরোপীয় কমিশন

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেইয়েন বলেন, ‘‘ইউক্রেনের মানুষের সাহসকে সম্মান জানাই। কঠোর হোন, সাহসী হোন, ভয় পাবেন না। প্রেসিডেন্ট, আপনি একা নন। আমরা শান্তির জন্য আপনার পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাব।’’

ইউক্রেনের পাশে আছি: মলডোভা

মলডোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া স্যান্ডু বলেন, ‘‘সত্যিটা খুব সহজ। রাশিয়া ইউক্রেনকে আক্রমণ করেছিল। রাশিয়াই এখানে আগ্রাসী। ইউক্রেন নিজেদের স্বাধীনতার জন্য লড়ছে। আমরা সকলে ইউক্রেনের পাশে আছি।’’

পাশে আছি: স্পেন

স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো স্যাঞ্চেস সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘ইউক্রেন, স্পেন তোমার পাশে আছে।’’

আগ্রাসনের ইতি চাই: নেদারল্যান্ডস

নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ বলেন, ‘‘নেদারল্যান্ডস ইউক্রেনকেই সমর্থন করে। আমরা স্থায়ী শান্তি চাই। যে আগ্রাসন রাশিয়া শুরু করেছে, ইউক্রেনের মানুষের জন্য, ইউরোপের মানুষের জন্য আমরা সেই আগ্রাসনের ইতি চাই।’’

ইউক্রেন একা নয়: পোল্যান্ড

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাক্স সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘জ়েলেনস্কি, ইউক্রেনের বন্ধুগণ, আপনারা একা নন।’’

ইউক্রেনের পাশে আছি: চেক প্রজাতন্ত্র

চেক প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট পিটার প্যাভেল লিখেছেন, ‘‘আমরা ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াচ্ছি। সময় এসেছে, ইউরোপের কিছু করে দেখানো উচিত।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement