জলবায়ু নিয়ে সমঝোতার আশায় প্যারিসে বিশ্ব নেতারা

হাজির ১৯৭টি দেশ। বারাক ওবামা, শি চিনফিং, ডেভিড ক্যামরন, নরেন্দ্র মোদী-সহ ১৪৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই উপস্থিত থাকছেন। হাতে দু’সপ্তাহ।। আইএস (ইসলামিক স্টেট) আক্রান্ত প্যারিসের লো বুর্জে বিমানবন্দরে আজ, সোমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে এই মহা আয়োজন জলবায়ুকে নিয়ে। আশা, বিশ্ব উষ্ণায়ণ ঠেকাতে দিশা দেখাবে এই মহাসম্মেলন। পথ দেখাবে এই পৃথিবীকে একটু ভাল রাখার।

Advertisement

রত্নাঙ্ক ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৫ ১৮:১৫
Share:

জলবায়ু সম্মেলন নিয়ে পথে নেমেছে লন্ডনও। ছবি: এএফপি।

হাজির ১৯৭টি দেশ। বারাক ওবামা, শি চিনফিং, ডেভিড ক্যামরন, নরেন্দ্র মোদী-সহ ১৪৭টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানই উপস্থিত থাকছেন। হাতে দু’সপ্তাহ।। আইএস (ইসলামিক স্টেট) আক্রান্ত প্যারিসের লো বুর্জে বিমানবন্দরে আজ, সোমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে এই মহা আয়োজন জলবায়ুকে নিয়ে। আশা, বিশ্ব উষ্ণায়ণ ঠেকাতে দিশা দেখাবে এই মহাসম্মেলন। পথ দেখাবে এই পৃথিবীকে একটু ভাল রাখার।

Advertisement

কিন্তু এই আশার পথে কাঁটা আছে বিস্তর। আছে বিস্তর বোঝাপড়া। আগের বেশ কয়েকটি সম্মেলনের ফলাফল দেখলে আশার আলোটুকু বাঁচিয়ে রাখা বেশ কঠিন। তাই প্যারিসের পথে সাধারণ মানুষের মিছিল নেমেছে, স্লোগান উঠেছে ‘নো প্ল্যানেট বি’। দাবি উঠছে নানা। অভিযোগ উঠছে ধনী দেশগুলির বিরুদ্ধে। শুধু প্যারিস নয়, ছোট ছোট মিছিল হচ্ছে বেশ কয়েকটি শহরেরই। এই তালিকায় আছে লন্ডন থেকে জাতিদাঙ্গা বিধ্বস্ত ইয়েমেনের রাজধানী সানাও।

পড়ুন: পরিবেশ বাঁচাতে প্যারিসে সম্মেলন

Advertisement

জলবায়ু নিয়ে এই সমঝোতা খুবই জটিল। নানা দিক, নানা মত, নানা পথ। এক দিকে উন্নত বিশ্ব। অন্য দিকে উন্নয়শীল বিশ্ব। এতেই নিস্তার নেই, এই উত্তর (উন্নত) ও দক্ষিণ (উন্নয়শীল) বিভাজনের মধ্যেও রয়েছে নানা ফাটল। আছে নানা দল, উপদল। চলতি বছরের অক্টোবরে জার্মানির বন-এ এই সম্মলনের মূল খসড়াটি প্রস্তুত হয়। কিন্তু তাতে অনেক বিষয়েই ঐকমত্যে পৌঁছন যায়নি। ৫০ পাতার সেই সমঝোতাটি তাই বন্ধনীতে ভরা। মানে অনেক বিষয়েই দুস্তর ব্যবধান রয়েছে। সামনের দু’সপ্তাহ ধরে সেই ঐকমত্যে পৌঁছনোর চেষ্টা হবে। তবে আজ বিশ্বনেতাদের আসর। প্রত্যেকের সময়ে তিন মিনিট। তার পরে শুরু মূল সমঝোতার পালা। কূটনীতিবিদ, পরিবেশবিদ, প্রযুক্তবিদেরা সেই পালার অংশ। চুলচেরা, জটিল সে সমঝোতা।

বিশ্ব উষ্ণায়ণ কমাতে এই সম্মেলনে পাখির চোখ করা হয়েছে গ্রিন-হাউস গ্যাসের নিষ্ক্রমণ হ্রাস করাকে। প্রকারান্তরে যার মানে কার্বনের নিষ্ক্রমণ কমানো। এই সমঝোতায় কোন দেশ কতটা কার্বন নিষ্ক্রমণ কমাবে তা ঠিক করার চেষ্টা হবে। সেই পথে অর্থ, প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করার কথা উন্নত বিশ্বের। কী ভাবে, কোন দেশ এই সাহায্য করবে এবং পাবে তা নিয়েই সমঝোতা। এই ভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ণকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বেঁধে রাখার চেষ্টা হবে।

কিন্তু গোল বেঁধেছে বিসমিল্লায়। উন্নয়নের মাপকাঠিতে বেশ পিছিয়ে থাকা ৪৮টি দেশের (লিস্ট ডেভেলপ্ড কানট্রিজ) মতে, এই মাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। তা ছাড়া তাদের দাবি, এমন একটি সমঝোতা হোক যা আইনত সব দেশ মানতে বাধ্য হবে। কারণ, ১৯৯৭-এ কিয়োটোর এমনই সমঝোতায় (কিয়োটো প্রোটোকল) কার্যত কোনও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বুশ তাকে ঠাণ্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এমন আইনত-বদ্ধ সমঝোতা এক কথায় নাকচ করে দিয়েছে আমেরিকা-সহ উন্নত বিশ্ব। তারা আবার প্রশ্ন তুলেছে, এই উন্নত ও উন্নয়নশীলের ভাগাভাগিটাই ভুল। কারণ, এ ক্ষেত্রে ১৯৯২ সালকে মাপকাঠি ধরা হয়েছে, যার সঙ্গে দেশগুলির বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মিল নেই। ফলে কে এই নিষ্ক্রমণ কমানোর প্রক্রিয়ায় কী ভাবে অংশ নেবে তাই স্থির হতে বহু কাঠখড় পুড়বে।

তবে বেশ কিছু ঘোষণা হবে। যেমন ‘মিশন ইনোভেশন’ বলে ভারত, আমেরিকা, ফ্রান্স-সহ ২০টি দেশের একটি দল ঠিক করেছে আগামী পাঁচ বছরে সবুজ-প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ দ্বিগুণ করবে। আবার ফ্রান্স আর ভারত যৌথ ভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চলে থাকা ১৩০টি দেশে সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে সাহায্য করবে।

পিছিয়ে নেই বেসরকারি ক্ষেত্রেও। বিল গেটস, মার্ক জুকেরবার্গ, জেফ বুজস থেকে রতন টাটা, মুকেশ অম্বানির মতো ২৮ জন শিল্পপতি সবুজ-প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিল গেটস তো ইতমধ্যেই এই কাজে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণাও করেছেন। আবার বিশ্ব ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিলিত ভাবে জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড উন্নয়শীল দেশগুলির কার্বন নিষ্ক্রমণ কমাতে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের কথা বলছে।

সামনে কঠিন পথ। দু’সপ্তাহ ধরে সেই পথের দিকেই উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে থাকবে সারা বিশ্ব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement