রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার প্যারিসে। ছবি: পিটিআই
প্যারিসে আইএসের হানার পরে সেখানেই জলবায়ু সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দিতে আসায় সোমবার রাষ্ট্রনেতাদের প্রশংসা করলেন বারাক ওবামা। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘‘যারা আমাদের পৃথিবীকে ধ্বংস করতে চায় তাদের দেখাতে হবে আমরা এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।’’ ব্যাপক ভাবে বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। কখনও অকাল বৃষ্টি তো কখনও বর্ষার দেখাই নেই। কোথাও বন্যা তো কোথাও খরা। সময়ে আসছে না শীত। যার প্রভাব পড়ছে কৃষিক্ষেত্রেও। আবার জলহাওয়ার ভোলবদলে বাড়বাড়ন্ত ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়াদের। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগের প্রকোপও! দুই বাংলার এই আবহাওয়ার চরিত্র বদল, ঋতুচক্রে পরিবর্তন এবং সুন্দরবন-সমস্যা, এই প্রথম বার রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের অন্যতম দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয় হতে চলেছে বলে মনে করছেন ভারতের পরিবেশবিদরা। সোমবার থেকে প্যারিসে শুরু হচ্ছে সম্মেলন। আদৌ কি পথ দেখাতে পারবে প্যারিস? সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন গবেষকরা।
সবিস্তারে দেখতে ক্লিক করুন
সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিরা ওই প্রসঙ্গগুলি তুলবেন বলে জানা গিয়েছে। সুন্দরবনের পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে যে সব সংস্থা গবেষণা এবং আন্দোলন করছে, তারা ‘সবুজ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছে। ঋতুচক্রে বদল, সুন্দরবন ও কৃষির সমস্যা নিয়ে ওই মঞ্চের পক্ষ থেকেই একটি দাবিপত্র তৈরি করা হয়েছে। সবুজ মঞ্চের পক্ষ থেকে নব দত্ত বলছেন, ‘‘বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে ভারতীয় উপমহাদেশে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবন। দেরিতে আসা বর্ষা এবং তা দীর্ঘায়িত হওয়ার জন্য ভুগছেন দুই বাংলার কৃষকেরাই। কিন্তু এ সমস্যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে তেমন গুরুত্বই পাচ্ছে না। আমরা চাই বিষয়গুলি আন্তর্জাতিক স্তরেও গুরুত্ব পাক।’’
নববাবু বলেন, কলকাতা থেকে ওই সম্মেলনে যোগ দিতে যে পরিবেশবিদরা যাচ্ছেন, তাঁদের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে দাবিপত্র। তা ছাড়া, বিভিন্ন দেশ থেকে অন্তত তিন হাজার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ওই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। তাঁদের কাছেও দাবিপত্রটি ই-মেলে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সম্মেলনে বিষয়টি তুলবেন বলে আশাবাদী সবুজ মঞ্চ। তা ছাড়া বাংলাদেশ থেকেও এমনই একটি প্রতিবেদন জমা পড়েছে বলে শোনা গিয়েছে।
কী কী সমস্যায় ভুগছে সুন্দরবন?
প্যারিসে আইএসের হানার পরে সেখানেই জলবায়ু সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দিতে আসায় সোমবার রাষ্ট্রনেতাদের প্রশংসা করলেন বারাক ওবামা।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘‘যারা আমাদের পৃথিবীকে ধ্বংস করতে চায় তাদের দেখাতে হবে আমরা এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।’’ ছবি: এএফপি
সুন্দরবন নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন, তাঁদের অনেকেই বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে সমুদ্রে ঢেউয়ের উচ্চতা বাড়ছে। প্রতিনিয়তই নতুন নতুন এলাকা চলে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরের গ্রাসে। গত অর্ধ-শতাব্দীতে গোটা কলকাতার মাপের ভূখণ্ড চলে গিয়েছে সমুদ্রগর্ভে। তাতে নষ্ট হচ্ছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। আর সেই সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য। গবেষকদের একটি বড় অংশ দেখেছেন, যতই ম্যানগ্রোভের জঙ্গল নষ্ট হচ্ছে, তত সুন্দরবনের কোর এলাকা (যে এলাকা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বিচরণভূমি)-র মাটিতে নুনের পরিমাণ বাড়ছে। সুন্দরীর মতো ম্যানগ্রোভ এর ফলে আর বাঁচতে পারছে না। এ ছাড়া গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের প্রকৃতিও বদলে যাচ্ছে। তা মুখে রুচছে না হরিণ-সহ তৃণভোজী প্রাণীদের। ফলে তাদের সংখ্যা কমছে। যার প্রভাব পড়ছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যাতেও। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞানের গবেষক-অধ্যাপক সুগত হাজরা বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনে সব চেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা সুন্দরবনের। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সুন্দরবনের প্রসঙ্গ ওঠা উচিত। সঙ্কট কাটাতে চাই রাষ্ট্রপুঞ্জের অর্থসাহায্য।’’
সুন্দরবন-গবেষকদের অনেকেই আবার চিন্তিত কলকাতার ভবিষ্যৎ নিয়ে। কেন?
এক গবেষকের মন্তব্য, যে নতুন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ জন্ম নিচ্ছে, তারা আকারে খর্বকায়, ডালপালাও অনেক কম। ওই ম্যানগ্রোভ ঘূর্ণিঝড়ের সামনে দাঁড়াতে পারছে না। এক গবেষকের আশঙ্কা, ‘‘এ ভাবে চলতে থাকলে এক দিন ঘূর্ণিঝড়ের মুখে কলকাতার অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। কারণ, ডালাপালাযুক্ত উঁচু সুন্দরী গাছের জঙ্গল ঘূর্ণিঝড়কে রুখে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু গাছ বেঁটে ও ডালপালাহীন হলে ঝড়ের মুখে তারা সহজেই আত্মসমর্পন করে। ফলে কলকাতা, খুলনার মতো শহরগুলির উপর সরাসরি আঘাত করতে পারবে বড় ধরনের ঝড়।’’