— ছবি সংগৃহীত
ঘটনাটা গত বছরের। জুনের কোনও এক রাতে স্বামীর সঙ্গে খেতে বসেছিলেন ঘাদা ওয়েসিস। আদতে লেবাননের বাসিন্দা ওই তরুণী সৌদি আরবের একটি প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমের মহিলা সাংবাদিক। এক সহকর্মী ফোন করে তাঁকে তখনই টুইটার দেখতে বলেন। চমকে ওঠেন ঘাদা। তাঁর ফোনে তোলা কিছু ব্যক্তিগত ছবি ফাঁস হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ছবি তো হু হু করে শেয়ার হয়েইছে, সেই সঙ্গে তাঁর চরিত্র নিয়ে যাবতীয় কুরুচিকর মন্তব্যও।
পশ্চিমী দুনিয়ায় মেয়েদের খোলামেলা ছবি শেয়ার হওয়া খুব স্বাভাবিক নজরে দেখা হলেও সৌদি আরবের মতো অতিরক্ষণশীল কোনও দেশের মহিলার ছবি এ ভাবে ছড়িয়ে পড়ায় তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয় ঘাদাকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি একজন স্বাধীন, উদারপন্থী মানুষ। তাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ আমায় আক্রমণ করতে দু’বার ভাবে না। আমার লেখা নিয়ে সমালোচনা হয়, সেটা এক কথা। কিন্তু এ ভাবে আমার ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি শেয়ার হয়ে যাওয়ায় আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। মনে হয়েছিল যে কেউ চাইলে আমার শোওয়ার ঘর বা শৌচাগারে ঢুকে পড়তে পারে!’’
যে ছবি একমাত্র তাঁর ফোনে ছিল, কখনও কোনও সামাজিক মাধ্যমে তিনি সেই ছবি শেয়ারই করেননি, সেই ছবি গোটা দুনিয়া কী করে দেখে ফেলল, তা ভেবে প্রথমে বিস্মিত হয়েছিলেন ঘাদা। পরে বুঝতে পারেন হ্যাক করা হয়েছে তাঁর মোবাইল ফোন। আরও পরে জানতে পারেন, আরও অনেক সাংবাদিকের মতোই তাঁর ফোনেও আড়িপাতা হয়েছে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে।
ঘাদা অবশ্য একা নন। সরকার বা প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করা মধ্য এশিয়ার একাধিক মহিলা সাংবাদিক বা মানবাধিকার কর্মীকেই এই ধরনের হেনস্থার মুখোমুখি হতে হয়েছে গত কয়েক বছরে। তাঁরা তখন প্রতিবাদ করলেও কেউ শোনেননি তাঁদের কথা। উল্টে ঘাদার মতো একনিষ্ঠ সাংবাদিককে যৌনকর্মী বলতেও পিছপা হয়নি তাঁর দেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। এখন ইজ়রায়েলি সংস্থার তৈরি এই স্পাইওয়্যারের কথা জানাজানি হওয়ার পরে মন খুলে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন ঘাদার মতো মহিলারা।
বরাবরই সৌদি সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন ঘাদা। তাঁর ধারণা, সেই জন্যই সৌদি সরকারের বিরাগভাজন হন তিনি। সৌদি আরবের বিদেশ মন্ত্রক এ বিষয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চায়নি। তবে আমেরিকার ফ্লরিডার এক আদালতে সৌদি যুবরাজ, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির শাসক মহম্মদ বিন জ়ায়েদ ও ফ্লরিডার দুই টুইটার ব্যবহারকারীর বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরেই মামলা করেছিলেন ঘাদা। অভিযোগ, তাঁর ফোনে আড়ি পেতে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছে। আমেরিকার ডিজিটাল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘাদার ফোনে পেগাসাস ব্যবহার হয়েছিল