বরফের চাদর: তুষারপাতের জেরে নেব্রাস্কার রাস্তায় আটকে পড়েছে একটি ট্রেলর। রয়টার্স
কাঁপছে আমেরিকা। যতটা না শাট ডাউনের জেরে, তার চেয়ে ঢের বেশি শীত-ঝড়ে। ভয়াবহ ঝড় এবং তুষারপাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এরই মধ্যে অন্তত ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় বেহাল রাস্তাঘাট। বর্ষবরণের মরসুমে অথৈ জলে বিমান পরিষেবাও। সূত্রের খবর, শুধু গতকালই দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে অন্তত ৫০০টি উড়ান বাতিল করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের বেশ খানিকটা পরে ওঠা-নামা করেছে প্রায় ৬ হাজার বিমান।
আমেরিকার উত্তরে সমভূমি অঞ্চল থেকে শুরু করে মধ্য-পশ্চিম পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় ঝড়ের গতি খানিকটা শান্ত হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এক ফুটের মতো বরফের আস্তরণ পড়তে দেখা গিয়েছে। তীব্র ঝড় ও তুষারপাতের দোসর আবার বৃষ্টিও। আবহাওয়া দফতরের যেমন পূর্বাভাস, তাতে দক্ষিণ-পশ্চিমের নিউ মেক্সিকো এবং দেশের দক্ষিণ ও পূর্ব প্রান্তের বেশ কিছু রাজ্যে বর্ষবরণের উৎসব মাটি হওয়ার মুখে।
রাস্তাঘাট এতটাই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে যে, উত্তর ডেকোটায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। প্রশাসনের তরফে কাল সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হলেও বিপদ কমেনি। ভারী বৃষ্টিতে দক্ষিণ আমেরিকার কিছু এলাকায় বন্যার পূর্বাভাস রয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, লুইজ়িয়ানায় গত বুধবার সন্ধ্যায় বজ্রপাতে বছর আটান্নর এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। কানসাসে বরফ পড়ে বেশির ভাগ রাস্তাই ভয়ানক পিচ্ছিল হওয়ার কারণে প্রায় রোজই দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার মিনেসোটায় একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছে এক মধ্যবয়সি গাড়িচালকের। এই দুর্ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, ঝড়-বৃষ্টি আর তুষারপাতের জেরে রাস্তায় প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবারও যে হেতু ৮০০ উড়ান বাতিল এবং সাড়ে ৬ হাজার বিমানে দেরিতে চলাচল করছিল, দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে অনেকেই আটকা পড়েছেন বলে খবর মিলেছে। কেউ বর্ষবরণের উৎসবে পরিবারের সঙ্গে একজোট হতে চাইছেন। কেউ আবার নতুন বছরের প্রথম দিনেই অফিস কামাই হোক, চাইছেন না। কিন্তু উপায় কী! ডেকোটা, মিনেসোটা, কানসাস, লোয়ার বেশ কিছু রাস্তায় কালও বরফের পুরু স্তর দেখা গিয়েছে।
২০১৬-র জানুয়ারিতে এমনই ভয়ঙ্কর শীত-ঝড় দেশের পূর্ব প্রান্তকে লন্ডভন্ড করে দিয়ছিল। অচল হয়ে পড়েছিল নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটনও। ভুগতে হয়েছিল প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষকে। ১৫ জনের প্রাণ গিয়েছিল। রাস্তায়-রাস্তায় দু’-আড়াই ফুট বরফ। বর্ষবরণের প্রাক্কালে সেই ‘রেকর্ড’-টাই সিঁদুরে মেঘ দেখাচ্ছে আমেরিকাকে।