Pakistan

এক লিটার দুধ ২১০ টাকা! প্রায় দেউলিয়া পাকিস্তানে ৮০০ টাকার বিদেশি কফি খেতে লম্বা লাইন

গত কয়েক মাস ধরেই আর্থিক সঙ্কটে ন্যুব্জপ্রায় পাকিস্তান। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তার সঙ্গে প্রতিদিনই অন্তত ৩০-৪০টাকা করে লাফ দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে খাবারের দাম।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

লাহোর শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:১৯
Share:

কফির সুরভী অনুযায়ীই বদলে যায় দাম। তবে লাহোরবাসীরা সেই চড়া দামের পরোয়া করছেন না মোটেই। ছবি : টুইটার থেকে।

দুধ কিনতে হাহাকার পড়েছে পাকিস্তানে। প্যাকেটজাত নয়, এমন দুধের প্রতি লিটারের দাম এখন ২১০ টাকা। অর্থাৎ ভারতে দুধের এখন যা দাম, তার প্রায় পাঁচ গুণ। অর্থসঙ্কটে ঝুঁকে পড়া পাকিস্তানে অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম যেখানে আকাশছোঁয়া, সেখানে শিশুদের খাওয়ার জন্য এই মহার্ঘ দুধ কিনতেও নাকাল হচ্ছেন আম নাগরিকেরা। সেই পাকিস্তানেই এক ঝকঝকে বিদেশি কফির ক্যাফেটেরিয়ায় বাইরে দামি কফি খেতে লাইন দিতে দেখা গেল দেশের উচ্চবিত্তদের।

Advertisement

দিন কয়েক আগেই সরকারি ভর্তুকি দেওয়া আটা-ময়দা কিনতে লাইনে দাঁড়িয়ে ধাক্কাধাক্কিতে জখম হয়েছিলেন পাকিস্তানের মানুষ। সেই দেশে বিদেশি কফি খাওয়ার এই লাইন দেখে তাই প্রশ্ন উঠেছে— এটা ওই একই পাকিস্তান তো? না কি এই পাকিস্তানে আর্থিক সঙ্কট বলে কিছু নেই। মূল্যবৃদ্ধিতে এই পাকিস্তানের কিছু যায়-আসে না! জিনিসপত্রের দাম বাড়ুক বা কমুক এই পাকিস্তান তা নিয়ে চিন্তিত নয়, কারণ দেশ সঙ্কটাপন্ন হলেও এই পাকিস্তানের ভাঁড়ারে অঢেল অর্থ মজুত আছে!

গত কয়েক মাস ধরেই আর্থিক সঙ্কটে ন্যুব্জপ্রায় পাকিস্তান। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তার সঙ্গে প্রতিদিনই অন্তত ৩০-৪০টাকা করে লাফ দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে খাবারের দাম। মঙ্গলবার যেমন মুরগির মাংসের দাম প্রায় ১৩০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজিতে হয়েছে ৭০০-৭৮০ টাকা। হাড় ছাড়া মাংসের দাম আরও চড়া। মঙ্গলবার ১০০০-১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। দুধের দামও দু’দিনে লিটারে বেড়েছে ৩০ টাকা তবে পাকিস্তানের ডেয়ারি ব্যবসায়ীদের সংগঠন জানিয়েছে, দুধ বিক্রেতা হোলসেলাররা যদি দাম না কমান তবে দুধের দাম বুধবার বেড়ে প্রতি লিটারে ২২০ টাকা হতে পারে। এমন যখন পরিস্থিতি তখনই প্রকাশ্যে এসেছে সেই ছবি। সেখানে দেখা যাচ্ছে লাহোরে সদ্য খোলা একটি বিদেশ ব্র্যান্ডের ক্যাফেটেরিয়ার আউটলেটে কফি খেতে রাস্তা ছাড়িয়ে লাইন পৌঁছে গিয়েছে পাশের তিন-চারটি বহুতল পেরিয়ে। ক্যাফেটেরিয়ার ভিতরে চূড়ান্ত ব্যস্ততা সুগন্ধী কফি তৈরির। যার ছোট এক এক কাপের দাম ৩৫০টাকা থেকে শুরু হয়ে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। বড় কাপের কফির দাম ৪৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। কফির সুরভী অনুযায়ীই বদলে যায় দাম। তবে লাহোরবাসীরা সেই দামের পরোয়া করছেন না মোটেই।

Advertisement

গত ১০ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে প্রথম দোকান খুলেছে কানাডার নামি কফি প্রস্তুতকারী সংস্থা টিম হর্টন। সেই বিদেশি ক্যাফেটেরিয়ার লাহোরে তাদের দরজা খোলার পর থেকেই নাকি সেখানে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বক্ষণই ক্যাফের বাইরে দেখা যাচ্ছে কফির জন্য অপেক্ষমান জনতার দীর্ঘ লাইন। যার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে। এমনকি, একটি পরিসংখ্যানে এমনও জানা গিয়েছে যে, টিম হর্টন দুনিয়ার অন্যান্য শহরে নতুন দোকান খোলার পর প্রথম দিন যা ব্যবসা করেছিল, লাহোরের ওই ক্যাফের প্রথম দিনের ব্যবসা তাদের টেক্কা দিয়েছে। ওই ছবি আর এই পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আসতেই ক্ষোভ আর রাগের বহিঃপ্রকাশ দেখা গিয়েছে সমাজমাধ্যমে। বক্তব্য একটাই, দেশের অর্থনীতির এই হাল এই আকাশপাতাল বিভাজনের জন্যই। দেশের সম্পদ একটি অংশের কুক্ষিগত। তারা ধনী হয়েই চলেছে। অন্য অংশটি পরিস্থিতির পাকে দুর্ভোগ সহ্য করে চলেছে।

টিম হর্টন ক্যাফের সামনের দীর্ঘ লাইনের ছবি ভিডিয়ো পোস্ট করে কেউ লিখেছেন, ‘‘টিম হর্টনের ছোট এক কাপ কফির দাম ৬৫০ টাকা। সেই কফি খাওয়ার লাইন দেখুন। আর আমাদের নাকি টাকা নেই। বিশ্বের কাছে আমরা ভিক্ষে চেয়ে হাত পাতছি। এই অক্ষম সরকার আর তাদের অক্ষম আর্থিক নীতির জন্য লজ্জা হওয়া উচিত।’’ কেউ আবার আটা কেনার লাইনের ছবি আর কফির লাইনের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘‘পাকিস্তানের দুই মুখ। আটা এবং কফির লাইন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement