ব্রিটিশ প্রতিরক্ষাসচিব মাইকেল ফ্যালন।
ব্রেক্সিট ভুলে পার্লামেন্ট এখন সরগরম ওয়েস্টমিনস্টার কেলেঙ্কারি নিয়ে।
অভিযোগটা পাকছিল গত কয়েক দিন ধরে। এ বার তাতে নতুন মাত্রা যোগ করলেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষাসচিব মাইকেল ফ্যালন। তিনি নিজেই মেনে নিলেন বছর পনেরো আগে এক মহিলা সাংবাদিকের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছিলেন। হলিউড প্রযোজক হার্ভি ওয়াইনস্টেইনের যৌন কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পরে ঢেউ লেগেছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও। এখানেও যৌন হেনস্থার ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠছিল। তা থেকেই ওয়েস্টমিনস্টার কেলেঙ্কারির সূত্রপাত। যার জেরে নড়েচড়ে বসতে হয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-কে। অভিযুক্ত ওই মন্ত্রীদের কাণ্ডকারখানায় টেরেসাকে মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটাতে হতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলেছিল।
এই অবস্থায় টেরেসার মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য মাইকেল ফ্যালনের স্বীকারোক্তিতে হইচই পড়ে গিয়েছে। কয়েক দিন আগেই টেরেসার কাছে অভিযুক্তদের নামের তালিকা পৌঁছে গিয়েছে। তাতে নয় নয় করে ৩৭ জন কনজারভেটিভ এমপি-দের নাম উঠেছে। প্রতিরক্ষাসচিব মাইকেল ফ্যালনের নাম রয়েছে সবার আগে। তবে তিনি যে ঘটনার কথা বলেছেন, তা ২০০২ সালের। এক ব্রিটিশ দৈনিকের দাবি, জুলিয়া হার্লে ব্রুয়ার নামে এক সাংবাদিকের সঙ্গে নৈশভোজে অশালীন আচরণ করেছিলেন ফ্যালন। যদিও ওই সাংবাদিকের বক্তব্য, ঘটনা নিয়ে তাঁর মাথাব্যথা ছিল না। ফ্যালন-ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির দাবি, ‘‘জুলিয়া ওঁর ভাল বন্ধু। ফ্যালন সেই সীমা পেরিয়ে জুলিয়ার হাঁটুতে হাত দিয়েছিলেন। জুলিয়া সাফ জানান, বিষয়টা তাঁর ভাল লাগছে না। ফ্যালন তৎক্ষণাৎ ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন।’’ সাংবাদিক হার্লের দাবি, ওই ঘটনা নিয়ে এখন ফ্যালনকে দোষারোপ করার কোনও মানে হয় না। জুলিয়ার কথায়, ‘‘২০০২ সালের ঘটনা। হেনস্থার শিকার হয়েছি, এমনটা আমি বলব না। আমার হাঁটু ঠিকই আছে! ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এই কেলেঙ্কারির (যাকে এখন কেউ কেউ বলছেন ‘ওয়েস্টমিনস্টার উইচ হান্ট’) মধ্যে নিজেকে জড়াতে চাই না।’’
যদিও হাউস অব কমন্সের নেত্রী অ্যান্দ্রেয়া লেডসম বলেছেন, অভিযুক্তদের শাস্তি না দিয়ে ছাড়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে সোমবার পার্লামেন্টে বিতর্কও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসে লেডসম জানিয়েছেন, এর পর থেকে একটা হেল্পলাইন চালু করা হবে যাতে কমন্সের সদস্য-কর্মীরা অভব্য আচরণ নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। থাকবে সহায়ক গোষ্ঠী। যারা প্রয়োজনমতো আক্রান্ত মহিলার পাশে থাকবে। এমপি-দের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এলে পরিস্থিতি বুঝে তাঁকে বরখাস্তও করা হতে পারে।
গত সপ্তাহে ব্যবসাসচিব মার্ক গার্নিয়ার, প্রাক্তন পেনশনসচিব স্টিফেন ক্রাব যৌন হেনস্থার কথা স্বীকার করেন। প্রবীণ কনজারভেটিভ এমপি হ্যারিয়েট হারম্যানের বক্তব্য, ‘‘কাউকে লিঙ্গ বিদ্বেষী, যৌন উস্কানিমূলক পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য করা যায় না। কোনও এমপি বিষয়টিকে ঠাট্টার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাববেন না।’’ হারম্যানের ইঙ্গিত ছিল পরিবেশসচিব মাইকেল গোভ-এর দিকে। যিনি ওয়েস্টমিনস্টার কেলেঙ্কারি নিয়ে বিদ্রুপ করায় তাঁকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়।