কুমারিত্ব ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করলে এখন থেকে তা অপরাধ বলে গণ্য করা হবে ব্রিটেনে। একটি চিকিৎসা বিল এনে এ সংক্রান্ত যে কোনও ধরনের চিকিৎসাকে বেআইনি বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারের বক্তব্য, কুমারিত্ব ফিরে পাওয়ার চিকিৎসাকে যদি মান্যতা দেওয়া হয়, তবে পরোক্ষে কুমারিত্ব রক্ষা করার দাবিকেও মেনে নেওয়া হচ্ছে।
ক্যাথলিক প্রভাবাধীন ব্রিটেনে এক শ্রেণির মানুষ এখনও বিয়ে হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের শারীরিক কৌমার্য্য বজায় রাখার ধারণায় বিশ্বাসী। যদিও আধুনিকপন্থীদের দাবি কুমারিত্ব রক্ষা করার ধারণাটিই অবমাননাকর।
নারীবাদীদের দাবি, ‘কুমারিত্ব’ ধারণাটি তৈরিই করা হয়েছে মেয়েদের দমিয়ে রাখার একটি সামাজিক অস্ত্র হিসেবে। এমন ধারণার সঙ্গে মানিয়ে নিতে বহু মহিলাকেই মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়।
কুমারিত্ব সংক্রান্ত যে সংস্কারটি বিভিন্ন দেশের গোঁড়া সমাজে চালু, তা হল এক জন নারীকে বিবাহিত হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর দেহের কৌমার্য্য রক্ষা করতে হবে।
বিয়ের পরে স্বামীর সঙ্গে প্রথম মিলনে স্ত্রী-র যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হওয়াকেই এ ক্ষেত্রে কুমারিত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
ইরাক-ইরানের মতো পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলিতে এই ধারণার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। ইরানে বিষয়টিকে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, সে দেশের শিয়া ধর্মের এক ধর্মগুরু ফতোয়া জারি করে মেয়েদের কুমারিত্ব ফিরে পাওয়ার চিকিৎসাকে বৈধ ঘোষণা করেছেন।
এ ছাড়া আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, পশ্চিম ইউরোপ এবং পশ্চিম এশিয়ার অন্য দেশগুলিতেও এই চিকিৎসা চালু রয়েছে। এমনকি ভারতেও এই সংক্রান্ত চিকিৎসা করা হয়।
স্ত্রী-রোগের মূল ধারার চিকিৎসার অধীন নয়। বরং একে প্লাস্টিক সার্জারি বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। খরচও প্রচুর। তবে এই চিকিৎসার চাহিদা রয়েছে।
ব্রিটেনে ক্লিনিকে এই চিকিৎসার জন্য ৩ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত খরচ পড়তে পারে। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার সমান।
এই চিকিৎসার অনেকগুলি ভাগ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হাইমেনোপ্লাস্টি বা হাইমেন প্রতিস্থাপন। ব্রিটেনের নতুন হেল্থ এবং কেয়ার আইনে এই হাইমেন প্রতিস্থাপনকেই অপরাধ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, যে সমস্ত ক্লিনিকে এই ধরনের চিকিৎসা করা হবে বা যে চিকিৎসক এই চিকিৎসা করবেন, তাঁদেরও সমান দোষী বলে গণ্য করা হবে। ধরে নেওয়া হবে তাঁরা এ কাজে মদত দিচ্ছেন। আর অপরাধ প্রমাণ হলে জেল হবে পাঁচ বছর পর্যন্ত।
ব্রিটেনের কোনও বাসিন্দা যদি এই চিকিৎসা করাতে দেশের বাইরেও যান, তবুও তাঁকে অপরাধী বলেই গণ্য করা হবে।
ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্ত অধিকাংশ মহলেই প্রশংসা পেয়েছে। তবে একই সঙ্গে মৌলিক অধিকার রক্ষা নিয়ে আন্দোলনকারীরা প্রশ্ন তুলেছে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে।
তাঁরা জানতে চেয়েছে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে কারও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে কি? কেউ নিজে শরীরে কোনও অঙ্গ প্রতিস্থাপন করবেন কি করবেন না, তা কি সরকার ঠিক করে দেবে?