সন্ত্রাসের শিকার: রাস্তায় পড়ে দেহ। ছবি: রয়টার্স।
ওজন কয়েক হাজার কিলোগ্রাম। সেই ভ্যান বা ট্রাকই এখন অস্ত্র জঙ্গিদের।
নিস, বার্লিন, স্টকহলম ও লন্ডনের পরে এ বার হামলা স্পেনের বার্সেলোনায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে শহরের ব্যস্ত ‘লা রামব্লা’ রাস্তায় একটি ভ্যান নিয়ে অসংখ্য মানুষকে পিষে দিল দুই জঙ্গি। সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে, মৃতের সংখ্যা ১৩। জখম পঞ্চাশেরও বেশি। দশ জনের অবস্থা গুরুতর। ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
‘লা রামব্লা’ রাস্তাটি শুধু পথচারীদের জন্য। রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য দোকান। গ্রীষ্মকালের পর্যটন মরসুমে হাজার হাজার মানুষ থিকথিক করে সেখানে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, এ দিন বিকেল পাঁচটা নাগাদ সেখানে ঢুকে পড়ে একটা ভ্যান। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বহু পথচারীকে পিষে দিয়ে বেশ কয়েক মিটার এগিয়ে যায় সেটি। তারপর ফুটপাথ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরে। ভ্যান থেকে এক জন নেমে সামনের রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়ে গুলি চালাতে শুরু করে। কয়েক মুহূর্ত তাণ্ডব চালিয়ে, কেউ কিছু করার আগেই, ভ্যান ফেলে রেখে ভ্যানচালক ও বন্দুকবাজ দৌড়ে পালিয়ে যায়।
আতঙ্ক: জঙ্গি হামলার পরে। বৃহস্পতিবার বার্সেলোনার ‘লা বামব্লা’য়। ছবি: এপি।
আর্তনাদ আর হাহাকার নিমেষে পাল্টে দেয় এলাকার চেহারা। ফুটপাথ ও রাস্তায় পড়ে অসংখ্য রক্তাক্ত দেহ, আতঙ্কে যে যে-দিকে পারে ছুটছে। বাচ্চাদের হারিয়ে চিৎকার করছেন মায়েরা, মা-বাবার হাত ছেড়ে কাঁদছে বাচ্চারা। ‘‘রাস্তা জুড়ে তখন যেন মানুষের ধস নেমেছে,’’ বললেন এক প্রত্যক্ষদর্শী। কয়েক মিনিট পরেই পুলিশ ও অ্যাম্বুল্যান্সে ভরে যায় রাস্তা। জখমদের সরিয়ে এলাকাটি সিল করে দেয় পুলিশ। দুষ্কৃতীদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি শুরু হয়। তাণ্ডবের সময়ে ঝাঁপ ফেলে দিয়েছিলেন বহু দোকানদার। সব দোকানের শাটার তুলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। রাতে জঙ্গিযোগ সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে খবর।
আরও পড়ুন: তীব্র সমালোচনা, তবু অবিচল ট্রাম্প
মার্কিন ও ব্রিটিশ পর্যটকদের অত্যন্ত প্রিয় স্পেনের এই শহর। হামলার পরেই ব্রিটিশ ও মার্কিন দূতাবাস থেকে বিবৃতি জারি করে তাদের দেশের নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে, যে যেখানে রয়েছেন যেন দূতাবাসে এসে বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়ে দেন যে, তাঁরা নিরাপদে। হামলার নিন্দা করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইট করেছেন— ‘‘শক্ত থাকুন। আমরা আপনার পাশে রয়েছি!’’ এফসি বার্সেলোনার খেলোয়াড়, ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন, ‘‘হিংসার কাছে আমরা কখনওই আত্মসমর্পণ করব না।’’ টুইট করে আক্রান্ত ও তাঁদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো-ও।