ঠগবাজ: ১৯৫৮-র মার্কিন টিভি সিরিজে ওয়াল্টার ট্রাম্প।
টেক্সাসের এক অনামী শহরের চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প। ঢাক পিটিয়ে লোক জড়ো করে বলছে, ‘‘শুধু আমিই পারি আপনাদের বাঁচাতে। আস্থা রাখুন। আমি এমন দেওয়াল তুলে দেব, যাতে বাইরে থেকে কোনও আঘাত না আসে।’’
সত্যি নয়, গল্প। ১৯৫৮ সালে আমেরিকায় তৈরি টিভি সিরিজ ‘ট্র্যাকডাউন’-এর একটা এপিসোড। চরিত্রটাও কাল্পনিক। পুরো নাম, ওয়াল্টার ট্রাম্প। ফেলুদার গল্পে জটায়ুর মতো মাথাজোড়া টাক। যদিও মুখের ভাব তেমন মোলায়েম নয়। জ্বলজ্বল করছে চোখদু’টো। কিসের একটা যেন ফিকির খুঁজছে সর্বদা! গল্পের একেবারে শেষে জানা গেল, লোকটা ধাপ্পাবাজ। দেওয়ালের গল্প ফেঁদে আসলে পুরো শহরটাই লুটে নেওয়ার ছক কষেছিল ট্রাম্প!
চেহারায় মিল নেই, তবু এই টিভি চরিত্রটির সঙ্গে তুলনায় বারবার উঠে আসছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামই। কিন্তু কেন? ফেসবুক চ্যাটে ক্যালিফর্নিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্র বব রবার্টসন বললেন, ‘‘তুলনা হবে না? মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তোলা নিয়ে প্রেসিডেন্ট যে ভাবে ইগোর লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন, তাতে কারও ভাল হওয়ার নয়। ভাবতে খারাপ লাগে, আমরাই এঁকে ভোট দিয়েছিলাম।’’
অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তুলতে মরিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বলছেন, ডেমোক্র্যাটরা বাধা দিলেও ৫৭০ কোটি ডলার আদায় করে ছাড়বেন তিনি। প্রয়োজনে জরুরি অবস্থা জারি করার হুমকি দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি তিনি ঘুরে এসেছেন টেক্সাস থেকেও।
আর তার পর থেকেই নতুন করে ছড়াতে শুরু করেছে ওই ষাট বছর আগেকার টিভি এপিসোড। ২০১৬-র নভেম্বরে প্রথম এর একটা ক্লিপ ছড়ায় ইউটিউবে। ২০১৭-র জানুয়ারিতে পুরো এপিসোড। যা এখন সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া— প্রায় সবার মোবাইলে। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক প্রচার ও খবরকে ‘ভুয়ো’ বলে সংবাদমাধ্যমকে নিশানা করেছেন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু এই টিভি-এপিসোডে যে কোনও কারিকুরি নেই, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে দেশের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম।
গত বুধবার টেক্সাসে যাওয়ার আগে, ডেমোক্র্যাটদের হাত করতে ট্রাম্প একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন। বিশেষ বৈঠকে ডেকেছিলেন হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসিকে। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে টেবিল চাপড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট। টিভি-এপিসোডের ক্লিপ দেখে ক্যালিফর্নিয়ার লেখক-পরিচালক মার্ক ভিসেন্ট বললেন, ‘‘টিভি এপিসোডে ঠগী ট্রাম্পের হাভভাবও তো একই দেখলাম। আমাদের সোনালি চুলের প্রেসিডেন্ট ভয় দেখাচ্ছেন, অভিবাসী মানেই দুষ্কৃতী। আর টাকমাথা ট্রাম্প বলেছিল— সেই রাতেই নাকি পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ধেয়ে আসছে উল্কাবৃষ্টি। সে সাহায্য না করলে, শহরের একটা লোকও বাঁচবে না। ওই লোকটাকেও দেখেছি, টেবিল চাপড়ে মামলা করার হুমকি দিচ্ছে।’’
নেটিজেনদের একাংশ বলছেন, টিভির ট্রাম্প তবু ছাতার বাঁটে ‘বিশেষ ধাতু’ বেঁধে গল্প ফেঁদেছিলেন। প্রেসিডেন্ট তো এখনও ঠিকই করে উঠতে পারলেন না— প্রাচীর কংক্রিটের হবে, না কি ইস্পাতের!
ছাতা-পিছু থেকে ৫০ ডলার করে চেয়েছিল ‘ত্রাতা’ ওয়াল্টার ট্রাম্প। সেই অর্থ জোগাড় করতে গিয়ে শহরবাসী কী ভাবে ব্যাঙ্ক-লুটে মেতে ওঠে, তা-ও দেখানো হয় টিভি-সিরিজে। রেকর্ড শাটডাউনের জেরে দেশের অবস্থাও এখন তেমনই বলে ফেসবুকে মুখ খুলছেন অনেকে। গত সপ্তাহে সরকারি কর্মচারীদের একাংশকে নিয়ন সবুজ জ্যাকেট পরে হোয়াইট হাউস অভিযানে নামতে দেখা গিয়েছিল।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তবু নাছোড়ই। কিন্তু এর শেষ কোথায়? এপিসোডের শেষে দেখা যায়, ভণ্ড ট্রাম্পের (অভিনয়ে লরেন্স ডবকিন) সব জারিজুরি ফাঁস করে দিচ্ছেন টেক্সাসের রেঞ্জার হবি গিলম্যানের চরিত্রে অভিনয় করা রবার্ট মার্টিন কপ।
২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাতি চিহ্নে ভোট দিয়ে হাত কামড়াতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রবার্টসন এখন বলছেন, ‘‘সব মিলে যাচ্ছে। শুধু একটাই আক্ষেপ, এখন আর একটা গিলম্যান পাওয়া যাচ্ছে না। যিনি ওই টিভি-সিরিজের মতোই শেষ কথা বলতে পারতেন— ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট ট্রাম্প।’’