দিল্লির হয়ে বেনজির লড়াইতে ওয়াশিংটন ডিসি। ভারতকে এনএসজি-র সদস্য পদ পাইয়ে দিতে চিনের সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছে আমেরিকা। মার্কিন বিদেশ সচিব জন কেরি পুরোদস্তুর প্রতিনিধি দল নিয়ে বেজিং-এ এই বৈঠকে বসছেন। চিনের তরফেও বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি বা নন-প্রলিফারেশন ট্রিটিতে (এনপিটি) সই না করা পর্যন্ত বারতকে এনএসজি-র সদস্য হতে দিতে রাজি নয় চিন। এই অবস্থান থেকে চিনকে সরিয়ে আনার জন্য বেজিং-এ আজ প্রবল চেষ্টা চালাবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।
শুধুমাত্র ভারতের ব্যাপারে আলোচনার জন্য অবশ্য জন কেরি সদলবলে চিনে যাননি। চিন-আমেরিকা প্রতি বছরই কৌশলগত ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে। এ বারও তাতে বিভিন্ন বিষয় রয়েছে। তিব্বতকে চিনের অঙ্গরাজ্য হিসেবে মান্যতা দেওয়া হবে কি না, তাইওয়ানের সঙ্গে চিন ও আমেরিকার সম্পর্ক— এই দু’টি বিষয়ও আজকের বৈঠকে যথেষ্ট গুরুত্ব পাবে। তবে এনএসজি-তে ভারতের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টিও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। তিব্বত, তাইওয়ান এবং ভারতকে নিয়ে আলোচনাই এই মার্কিন-চিন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
এনএসজি-তে ৪৮টি দেশ রয়েছে। আমেরিকা চাইছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির অন্যতম হিসেবে ভারও এনএসজি-র সদস্য হোক। প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজেই ভারতকে দায়িত্বশীল পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু চিন বলছে ভারত এনপিটি সই না করা পর্যন্ত তাকে এনএসজি-তে ঢুকতে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এএসজি-র বর্তমান সদস্যদের প্রত্যেকেই ওই চুক্তিতে সই করেছে।
আরও পড়ুন:
আমেরিকাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ, প্রায় যুদ্ধের হুঙ্কার চিনা নৌসেনার
ভারত অবশ্য স্পষ্টই জানিয়েছে, এনপিটি-তে সই করা হবে না। ওই চুক্তি আসলে একটি বৈষম্যমূলক চুক্তি, দীর্ঘ দিন ধরেই নয়াদিল্লি এ কথা বলছে। এখনও সেই অবস্থানেই অনড়। আমেরিকাও এখন ভারতকে এনপিটি সই করতে এখন আর কোনও চাপ দিচ্ছে না। বরং পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়া ভারত মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর) এবং নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপের (এসএসজি) সদস্য হওয়ার সব যোগ্যতা রাখে বলে গোটা বিশ্বেই জনমত তৈরি করতে শুরু করেছে প্রেসিডেন্ট ওবামার দেশ।
এক সময়ে যে আমেরিকা ভারতের ঘোর বিরোধী অবস্থানে থেকে পাকিস্তানকে সাহায্য করত, সেই আমেরিকা এখন ভারতকে যোগ্য মর্যাদা পাইয়ে দিতে চিনের সঙ্গে বৈঠকে বসছে, এটা সত্যিই আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে খুব বড় পরিবর্তন বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা। বিল ক্লিন্টন এবং অটলবিহারী বাজপেয়ীর হাত ধরে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নতুন মোড় নিতে শুরু করেছিল। দুই দেশের পরবর্তী সরকারগুলিই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে একই পথ ধরে এগিয়েছে। বর্তমান সময়ে ভারত-আমেরিকা যতটা কাছাকাছি এসেছে, নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটনের মধ্যে ততটা ঘনিষ্ঠতা আগে কখনও ছিল না। ভারতের দাবি আদায় করাকে নিজেদের অন্যতম প্রধান ইস্যু হিসেবে তুলে ধরে মার্কিন বিদেশ সচিব চিনা বিদেশ মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন, এমনটা আগে কখনও হয়নি। ভারতীয় কূটনীতিকরা আমেরিকার এই পদক্ষেপে উচ্ছ্বসিত।