বিস্ফোরণ: ‘মোয়াব’ ফাটার এই উপগ্রহ চিত্র প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর। রয়টার্স
প্রার্থনা শেষ করে সবে রাতের খাবার খেতে বসেছিলেন মহম্মদ শাহজাদা। প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে উঠল বাড়িঘর। প্রথমে ভেবেছিলেন, তাঁর বাড়িতেই বোমা পড়েছে! ভয়ে তখন কাঁপছেন বাড়ির বাকি সকলেই।
বৃহস্পতিবার সন্ধেয় শাহজাদার মতোই চমকে উঠেছিলেন আফগান-পাক সীমান্তের কাছে নানগড়হর প্রদেশের অধিকাংশ বাসিন্দারাই। ওই দিন সন্ধে ৭টা ৩২ নাগাদ ওই প্রদেশের অচিন জেলার পাহাড়ে অজস্র গুহা জুড়ে তৈরি সুড়ঙ্গ লক্ষ করে বোমা ফেলে আমেরিকা। ওই হামলায় এখনও পর্যন্ত অন্তত ৩৬ জন আইএস জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন ভারতীয়ও রয়েছে।
নানগড়হর প্রদেশের প্রায় গোটাটাই পর্বত-সঙ্কুল। ফলে আফগানিস্তানের ওই প্রদেশের অনেকটা এলাকাই বেশ দুর্গম এবং গুহা ও সুড়ঙ্গ পথে ভর্তি। সেগুলিকে হাতিয়ার করেই অচিন জেলাকে নিজেদের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে তুলেছিল জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট। এর আগেও বারবার আইএসের ওই সব ঘাঁটিতে আকাশপথে হামলা চালিয়েছে মার্কিন ও আফগান বাহিনী। তবে পুরোপুরি ভাঙা যায়নি জঙ্গি ঘাঁটি।
সূত্রের খবর, পরমাণু বোমা ছাড়া এর চেয়ে বড় এবং শক্তিশালী আর কোনও বোমা নেই মার্কিন অস্ত্রাগারে। বৃহস্পতিবার সেই বোমাটিই পূর্ব আফগানিস্তানের উপর প্রয়োগ করল আমেরিকা। জিপিএস পরিচালিত ৩০ ফুট লম্বা ও ১১ টন ওজনের বোমাটির ডাকনাম ‘মাদার অব অল বম্বস’ বা ‘মোয়াব’। পুরো কথাটা হলো, ‘জিবিইউ-৪৩ ম্যাসিভ অর্ডিন্যান্স এয়ার ব্লাস্ট’। ২০০২ সালে সাদ্দাম হুসেনকে ভয় পাওয়ানোর জন্য এই বোমা তৈরি করেছিল আমেরিকা। তবে ব্যবহার এই প্রথম।
আমেরিকার দাবি, আফগানিস্তানে এই মুহূর্তে অন্তত ৬০০ থেকে ৮০০ আইএস জঙ্গি রয়েছে। তাদের বেশির ভাগই রয়েছে নানগড়হর-সংলগ্ন এলাকায়। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবারের অভিযানকে অত্যন্ত সাফল্যজনক বলেই মনে করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
কালকের হামলায় এখনও পর্যন্ত কোনও সাধারণ নাগরিকের হতাহতের খবর মেলেনি। মার্কিন সেনার এই হামলায় খুশি অচিন জেলার বাসিন্দা হাকিম খান (৫০)। বললেন, ‘‘আমি চাই আইএস জঙ্গিদের উপর এর চেয়েও হাজার গুণ বড় বোমা পড়ুক।’’ তবে অচিনের মেয়র নওয়িদ শিনওয়ারি বলেন, ‘‘আইএস জঙ্গিরা ভয়ঙ্কর তাতে সন্দেহ নেই। তবু, এত বড় বোমায় সাধারণ মানুষ আরও ভয় পেয়ে গিয়েছে।’’