প্রায় জনমানবহীন ডালাসের একটি বিমানবন্দর। বৃহস্পতিবার। এপি
মৃতের সংখ্যা ৪০ ছুঁইছুঁই। আক্রান্ত প্রায় ১৩০০। নোভেল করোনাভাইরাসের চোখ রাঙানিতে বেশ কয়েকটি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে মার্কিন প্রশাসন। আরও এক ধাপ এগিয়ে ইউরোপ থেকে আমেরিকায় প্রবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একমাত্র ব্যতিক্রম ব্রিটেন।
কাল রাতে হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিস থেকে এক টিভি বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশে যাতে নতুন করে কেউ সংক্রমিত না-হন, সে জন্য ইউরোপ থেকে কাউকে আগামী ৩০ দিন আমেরিকায় আসতে দেওয়া হবে না। শুক্রবার মাঝরাত থেকে এই নতুন নিয়ম চালু হচ্ছে।’’ ট্রাম্পের দাবি, ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে ইউরোপের বেশ কিছু দেশ ব্যর্থ। তাই মার্কিন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়েই এই সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন। তবে মার্কিন নাগরিকেরা আপাতত ইউরোপ থেকে আমেরিকায় ঢুকতে পারবেন। সব ধরনের শারীরিক পরীক্ষা করে তবে তাঁদের দেশে ঢুকতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। কারও শরীরে সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে তাঁকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হবে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। একটি বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই এই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ইইউ-র প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল আজ টুইট করে বলেছেন, ‘‘নজর রাখতে হবে, এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে বাণিজ্য বা আর্থিক লেনদেনে যাতে বিঘ্ন না-ঘটে।’’ নিষেধাজ্ঞার আওতায় ট্রাম্প ব্রিটেনকে না রাখলেও বিষয়টি নিয়ে আজ মুখ খুলেছে ব্রিটেনও। ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক বলেছেন, ‘‘উড়ান পরিষেবা বন্ধ করলেই যে সংক্রমণ আটকানো যাবে, তার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না।’’ তবে ট্রাম্প সিদ্ধান্তে অনড়। অনেকেই বলছেন, পরিস্থিতির ঠিক মতো মোকাবিলা না করে উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করেছেন ট্রাম্প। আমেরিকায় লালারস পরীক্ষার ব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট ন। বলে অনেক সময়েই সংক্রমণ ধরা পড়ছে অনেক পরে। ফলে বিপদ বাড়ছে। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত, এখন সুস্থ হয়ে ওঠা এক মার্কিন তরুণী এলিজ়াবেথ শ্নাইডার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘যদি ঠিক সময়ে পরীক্ষা করানোর সুযোগ পেতাম, অনেকের মতো আমারও সংক্রমণ এত বেড়ে যেত না।’’ জাপানে অনুষ্ঠেয় ২০২০ অলিম্পিক্স-ও পিছিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেন ট্রাম্প।
আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে ইরান। কোভিড-১৯-এর মোকাবিলায় কার্যত দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে তেহরান। মৃতের সংখ্যা সেখানে ৪২৯। এই অবস্থায় আইএমএফের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ৫০০ কোটি ডলার ঋণ চেয়েছে ইরান সরকার।
ইটালিতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যুর হার ৩২ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। মোট ১০১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ আবার স্পেনের সাম্য মন্ত্রী আইরিন মন্তেরোর শরীরে করোনার সংক্রমণ মিলেছে। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। যদিও সংক্রমণের আশঙ্কায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে তাঁর পার্টনার, সে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রী পাবলো ইগলেসিয়াসকে।
চিনে অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। গোটা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। উহানে এই প্রথম সংক্রমিতের সংখ্যা নেমে এসেছে একক অঙ্কে। চিনে মৃতের সংখ্যা ৩,১৬৯। আক্রান্ত ৮০,৭৯৩ জন। গোটা বিশ্বে আক্রন্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,২৫,২৯৩। সব মিলিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪,৬০০ জনের।