Israel-Hamas Conflict

গাজ়ায় ‘গণহত্যা’ হচ্ছে না, বিতর্ক বাইডেনের দাবিতে

করিমের দাবি, ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর থেকে হামাস ও গাজ়ার সংঘর্ষে মানবতা বিপন্ন। নির্বিচারে প্রাণ হারাচ্ছেন গাজ়ার নারী-পুরুষ-শিশু। ত্রাণটুকুও পৌঁছচ্ছে না। তাই, প্রয়োজন গ্রেফতারি পরোয়ানার।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

দ্য হেগ শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৪ ০৫:৩৮
Share:

আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। —ফাইল চিত্র।

গাজ়ায় নিজেদের হামলা ও দখলদারি যতই হামাস-বিরোধী আন্দোলন বলে দেখাতে চাক ইজ়রায়েল, আসলে তা যুদ্ধ ও গণহত্যা। এই বার্তা দিয়ে সম্প্রতি ইজ়রায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদন জানিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি)-র চিফ প্রসিকিউটর করিম খান। কিন্তু সেই দাবির বিরোধিতা করে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘‘গাজ়ায় যা হচ্ছে তা কিছুতেই গণহত্যা নয়।’’ যদিও বাইডেন-বিরোধীদের দাবি, গাজ়ার ব্যাপারটিতে কার্যত চোখ বুজে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট। ‘গণহত্যাকারী জো’ তকমাও জুটেছে তাঁর। আইসিসি-র দাবির বিরোধিতা করে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকও বলেছেন, করিমের এই আবেদন মধ্য এশিয়ায় শান্তি আনতে পারবে না।

Advertisement

করিমের দাবি, ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর থেকে হামাস ও গাজ়ার সংঘর্ষে মানবতা বিপন্ন। নির্বিচারে প্রাণ হারাচ্ছেন গাজ়ার নারী-পুরুষ-শিশু। ত্রাণটুকুও পৌঁছচ্ছে না। তাই, প্রয়োজন গ্রেফতারি পরোয়ানার।

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে মূলত গণহত্যা, মানবতাবিরোধী ঘৃণ্য অপরাধ, যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়। ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে সেখানে মামলা করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, মামলা করেন গাজ়ায় আক্রান্তদের আইনজীবীরাও।

Advertisement

গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠেন নেতানিয়াহু ও গ্যালান্ট। সুর মেলান ইজ়রায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ়্যাক হারজ়গও। আপত্তি জানিয়েছে আমেরিকা ও ব্রিটেন। আর হঠাৎ করে সুর বদলে আইসিসিকে সমর্থন করে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম। গাজ়ার সরকারি গণমাধ্যম দফতর ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজ়েশনও করিমের আবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে।

নেতানিয়াহুর দাবি, আসলে করিম ফের ইহুদি-বিদ্বেষ জাগিয়ে তুলতে চাইছেন। তিনি ‘আধুনিক যুগের অন্যতম প্রধান ইহুদি-বিদ্বেষী’। তিনি বলেন, “দ্য হেগের আইনজীবী কী ভাবে গণতান্ত্রিক ইজ়রায়েলের সঙ্গে রক্তপিপাসু হামাসের তুলনা করছেন! ইজ়রায়েলি বাহিনী স্রেফ আত্মরক্ষার খাতিরে লড়াই করছে। আর হামাস নির্বিচারে অপহরণ করে খুন ও ধর্ষণ করেছে আমার ইজ়রায়েলি ভাই-বোনেদের।” প্রায় একই সুরে গ্যালান্টের দাবি, ইজ়রায়েলের হকের লড়াইকে অন্যায় ভাবে প্রভাবিত করতে চাইছেন করিম।

করিম যে দিন এই গ্রেফতারি পরোয়ানার দাবি জানান, সে দিনই হোয়াইট হাউসে ‘ইহুদি ঐতিহ্য মাস’ সংক্রান্ত একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘‘আমি স্পষ্ট ভাবে একটা কথাই বলতে চাই। ইজ়রায়েল রাষ্ট্র আর হামাসের মধ্যে কোনও তুলনাই হয় না। আমরা আইসিসি-র প্রস্তাব সম্পূর্ণ খারিজ করে দিচ্ছি।’’ ইজ়রায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজ়ালেল স্মোট্রিচও বলেন যে, ইহুদিদের প্রতি এই ধরনের তীব্র বিদ্বেষ দেখা গিয়েছে একমাত্র নাৎসি জার্মানিতেই। হামাসের পাল্টা দাবি, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়টিতে বেশ দেরি করে ফেলল আন্তর্জাতিক আদালত। তবে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই।

ফ্রান্স ও বেলজিয়াম অবশ্য এক বিবৃতি প্রকাশ করে করিমকে সমর্থন জানিয়েছে। ফ্রান্সের মতে, ইজ়রায়েলের ‘আত্মরক্ষা’র খাতিরে বহু নিরপরাধ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর বিচার প্রয়োজন। একই সুর বেলজিয়ামের। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলিও। করিম ও তাঁর সহযোগীদের দাবি, হামাস মৌলিক মানবাধিকারকে খর্ব করেছে। ইজ়রায়েলও আত্মরক্ষার নামে আন্তর্জাতিক মানবতার আইন না মেনে নির্বিচারে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ঠিক এই কারণেই গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রয়োজন।

গত অক্টোবর থেকে প্রায় ৩৬ হাজার মৃত্যু ঘটেছে গাজ়ায়। হামলা এখনও অব্যাহত। গ্রেফতারি পরোয়ানার অস্বস্তির মধ্যেও নেতানিয়াহুর তীব্র ঘোষণা— তাঁর জীবদ্দশায় আলাদা রাষ্ট্র হবে না প্যালেস্টাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement