—প্রতীকী চিত্র।
তাঁর বদ্ধমূল ধারণা ছিল, বাবা বিশ্বাসঘাতক এবং দেশদ্রোহী। সেই আক্রোশে নিজের বাবাকে মাথা কেটে নৃশংস ভাবে খুন করলেন পুত্র! তার পর কাটা মাথা হাতে ঝুলিয়ে ভিডিয়ো রেকর্ড করে ইউটিউবে পোস্ট করে দিলেন। সমাজমাধ্যমে ৫ ঘণ্টা ধরে জ্বলজ্বল করল সেই ভিডিয়ো।
ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, জাস্টিন মোন নামে ৩২ বছর বয়সি ওই যুবক ইউটিউবে ১৪ মিনিট দৈর্ঘ্যের একটি ভিডিয়ো আপলোড করেছিলেন। তাতে দেখা গিয়েছে, বাবার কাটা মুন্ডু হাতে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। মৃত বাবার নাম করে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর বাবা মাইকেল মোন এক জন সরকারি কর্মী ছিলেন যিনি দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মাইকেল সরকারি কর্মীদের উপর হামলার ঘটনাকে উৎসাহ দিয়েছেন। ভিডিয়োতে তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি যেন কোনও চিত্রনাট্য পড়ছেন!
মঙ্গলবার মাইকেল মোনের স্ত্রী ডেনিস মোন বাড়িতে এসে সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ মুণ্ডহীন দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন। তিনিই খবর দেন থানায়। ডেনিস তদন্তকারীদের জানান, তাঁর স্বামীর সাদা রঙের গাড়িটি এবং তাঁর পুত্র জাস্টিনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। বাথরুম থেকে মাইকেলের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। দেহের পাশ থেকে একটি ছুরি এবং রাবারের রক্তাক্ত গ্লাভস উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, জাস্টিন বেশ কয়েক বছর আগে অনলাইনে হিংসাত্মক ভাবনাচিন্তা প্রকাশ করেছিলেন। ২০২০ সালের অগস্টে তিনি একটি অনলাইন প্যামফ্লেট প্রকাশ করেছিলেন যাতে তিনি দাবি করেন, ১৯৯১ বা তার পরে জন্মগ্রহণকারীদের প্রত্যেকের উচিত ‘রক্তাক্ত বিপ্লব’-এ অংশ নেওয়া। একটি আইনি লড়াইতে হেরে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করে জাস্টিন পরিবারের সদস্য এবং সরকারি কর্তাদের খুন করার ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খুন করার পরে পোস্ট করা ভিডিয়োতে জাস্টিন জানিয়েছেন, তাঁর বাবা গত ২০ বছর ধরে এক জন ফেডারেল কর্মচারী হিসাবে কাজ করে আসছেন। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অভিযুক্ত যুবক অভিবাসন এবং সীমান্ত, আর্থিকনীতি, শহরে ঘটা অপরাধ এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ সম্পর্কেও ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন। মিডলটাউন টাউনশিপ থানার আধিকারিক পিট ফিনি বলেন, জাস্টিন তাঁর বাবার গাড়ি নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার গভীর রাতে লেভিটাউনের বাড়ি থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে ফোর্ট ইন্ডিয়ানটাউন গ্যাপ থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর কাছ থেকে একটি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে।
জাস্টিনের বিরুদ্ধে ফার্স্ট-ডিগ্রি খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁকে বুধবার আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাঁকে জামিন দেননি। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
ঘটনার পর একটি বিবৃতিতে ইউটিউব জানিয়েছে, ভিডিয়োটি লাইভস্ট্রিম করা হয়নি, শুধু আপলোড করা হয়েছিল। ‘গ্রাফিক হিংসার নীতি’ লঙ্ঘনের জন্য সেটি সরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযুক্তের চ্যানেলটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে যে, ভিডিয়োটি প্রায় পাঁচ ঘন্টা অনলাইনে ছিল।