আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। — ফাইল চিত্র।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নয়া দাবির কাছে মাথা নত করল না আমেরিকার অন্যতম অভিজাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। মার্কিন প্রশাসনের দাবি শিক্ষাঙ্গনের স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। হার্ভার্ডের এই সিদ্ধান্তের পরেই তাদের উপর ‘শাস্তির খাঁড়া’ নামিয়ে এনেছে ট্রাম্পের প্রশাসন। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হার্ভার্ডকে ২২০ কোটি ডলারের সহায়তা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। ‘নিউ ইয়র্ক টাইম্স’ জানিয়েছে, ওই ২২০ কোটি ডলারের সাহায্য বন্ধের পাশাপাশি পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ৬ কোটি ডলারের একটি চুক্তিও স্থগিত রাখা হয়েছে।
পশ্চিম এশিয়ায় হামাস-ইজ়রায়েল যুদ্ধের আবহে আমেরিকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্যালেস্টাইনের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ইহুদি-বিদ্বেষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ মার্কিন প্রশাসনের। একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সঠিক পদক্ষেপ করছেন না বলেও অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষ বন্ধ করার জন্য কী কী করণীয়, সে বিষয়ে কিছু শর্তাবলিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল সরকারের তরফে। বলা হয়েছিল, সেগুলি না-মানলে ‘শাস্তিস্বরূপ’ বিশ্ববিদ্যালয়কে আর্থিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করা হবে। এরই মধ্যে সোমবার বিকেলে (স্থানীয় সময় অনুসারে) প্রথম মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে আমেরিকার সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সন্ধ্যায় ট্রাম্প প্রশাসন হার্ভার্ডকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নয়া শর্তাবলির কড়া ভাষায় বিরোধিতা করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন এম গার্বার। তাঁর বক্তব্য, ওই শর্তগুলি মানলে শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতার সঙ্গে আপস করা হবে। ওই শর্তগুলি সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন অ্যালেন। তিনি লিখেছেন, “বিশ্ববিদ্যালয় নিজের স্বাধীনতাকে সঁপে দেবে না বা নিজের সাংবিধানিক অধিকারকেও ত্যাগ করবে না।”
ট্রাম্পের প্রশাসন হার্ভার্ডকে সর্বশেষ যে শর্তাবলি পাঠিয়েছিল, তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং অধ্যাপকদের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছিল। একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শে বিশ্বাসীদের প্রভাব যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর থেকে কমে, সে বিষয়েও পদক্ষেপ করতে বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ এবং পাঠ্যক্রমের ক্ষেত্রেও সরকারি ভাবনাকে গ্রহণ করতে বলা হয়েছে বলে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। এই শর্তগুলির মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কী পড়াবে, কাকে ভর্তি করবে, কাকে নিয়োগ করবে, তাঁরা কী বিষয়ে পড়বেন বা গবেষণা করবেন— সেগুলির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ অ্যালেনের। এই শর্তগুলি ট্রাম্প প্রশাসনের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না বলেও দাবি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের।