উত্তপ্ত: হলুদ বিক্ষোভের আঁচে জ্বলছে ট্রাক। শনিবার প্যারিসে। এএফপি
কারও মুখে জাতীয় সঙ্গীত। কেউ বা স্লোগান তুলছেন, ইস্তফা চাই প্রেসিডেন্টের। ঈষৎ সবজেটে উজ্জ্বল হলুদ জ্যাকেটে (পোশাকি নাম ইয়েলো ভেস্ট) কাতারে কাতারে মানুষ পেট্রল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এগিয়ে আসছিলেন প্যারিসের শঁ-ইলিসের দিকে। লুভ্যর জাদুঘর থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে প্লাস দে লা কনকর্ড-র দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল মিছিলটির। পুলিশও তৈরি ছিল। গার্ডরেল আর ব্যারিকেডে ঘিরে রেখেছিল পথ। অচিরেই বেড়া ভেঙে এগিয়ে আসে জনস্রোত। জলকামান আর কাঁদানে গ্যাসের গোলা ছুড়ে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে হয় পুলিশকে। তাতেও শান্ত হল না পরিস্থিতি। শনিবার দিনভর তপ্ত রইল ফ্রান্সের রাজধানী।
কিন্তু কেন? গত এক বছরে হু হু করে বেড়েছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। গত বছরের তুলনায় যা প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি! ২০০০-এর পর থেকে ফ্রান্সে জ্বালানির দাম এতটা বাড়ার নজির নেই। গত সপ্তাহ থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধিকিধিকি জ্বলছিল ক্ষোভের আগুন। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর বক্তব্য, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম চড়েছে। তাই দাম বেড়েছে দেশে। ১ জানুয়ারি থেকে আরও বাড়বে। বাস্তব হল, গত কয়েক দিনে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমেছে বেশ খানিকটা। কিন্তু ফ্রান্সে কমেনি। এটা ক্ষোভের আঁচ বাড়িয়েছে আরও।
এক সপ্তাহ আগে দেশ জুড়ে অন্তত ৩ লক্ষ মানুষ রাস্তা অবরোধ করেছিলেন। আজ প্যারিসে পথে নামেন অন্তত ৫ হাজার বিক্ষোভকারী। সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে শনিবার ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও বিক্ষোভকারীদের দাবি, তাঁরা শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিছিল করছিলেন। গত কাল অবশ্য গ্রেনেড হাতে এক জন গ্রেফতার হয়েছে। তাঁর দাবি ছিল, মাকরঁর সঙ্গে দেখা করতে দিতে হবে। বাকি প্রতিবাদকারীরা তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক অস্বীকার করেছেন।
সূত্রপাত স্যোশাল মিডিয়ার ডাকে। আপাত ভাবে কোনও নেতা নেই এই আন্দোলনের। ফেসবুকের ডাকে কত জন ট্রেনে ও সড়কপথে প্যারিসে আসছেন, তা-ও স্পষ্ট নয়। রবিবার সংখ্যাটা ৩০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। মাকরঁ সরকারের মন্ত্রী-কর্তাদের একাংশ দায়ী করছে বিরোধী দলনেত্রী মারিঁ ল্য পেনকে। অভিযোগ, তাঁর ন্যাশনাল র্যালি পার্টিই খেপিয়ে তুলেছে মানুষকে। মারিঁ সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন। মাকরঁ নীরব।