ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। —ফাইল চিত্র।
পাঁচ কম্যান্ডারকে ‘শত্রুপক্ষের ডেরা’ থেকে উদ্ধার করে আনলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। গত বছর মারিয়ুপোলের সেনাঘাঁটি থেকে তাঁদের বন্দি করেছিল রাশিয়া। তুরস্কে আটকে রাখা হয়েছিল তাঁদের। যুদ্ধের ৫০০তম দিনে তুরস্কে গিয়ে সেখান থেকে পাঁচ কম্যান্ডারকে ইউক্রেনে ফিরিয়ে আনলেন জ়েলেনস্কি। ক্রেমলিনের অভিযোগ, আঙ্কারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছেন, আঙ্কারার পক্ষ থেকে তাদের কথা দেওয়া হয়েছিল, ওই ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের তুরস্কেই রাখা হবে। পেসকোভের অভিযোগ, কথা তো রাখা হয়ইনি, মস্কোকে এ বিষয়ে কিছু জানানো পর্যন্ত হয়নি।
কূটনৈতিক ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইউক্রেনের বন্দর শহর মারিয়ুপোল। গত বছর, যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে শহরটি দখল করে নেয় রাশিয়া। হাজার হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল মারিয়ুপোলের যুদ্ধে। বন্দি করা হয়েছিল ইউক্রেনীয় সেনাদের। রুশ বাহিনীর হামলার মুখে কোনঠাসা হয়ে আজভস্টল ইস্পাত কারখানার নীচে টানেলে আশ্রয় নিয়েছিল বাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে তাদের সঙ্গে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। শেষের দিকে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষের প্রাণের আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় মে মাসে কিভ সরকারের পক্ষ থেকে বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে তুরস্কের মধ্যস্থতায় কিছু ইউক্রেনীয় সেনাকে মুক্তি দেয় রাশিয়া। কিন্তু সে সময়ে আঙ্কারার সঙ্গে চুক্তি করে মস্কো, যুদ্ধ শেষ না হওয়া ইস্তক তুরস্কে থাকতে হবে ওই কম্যান্ডারদের।
জ়েলেনস্কি একটি এক মিনিটের ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে চেক বিমানে ওঠার আগে ওই কম্যান্ডারদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছেন তিনি, জড়িয়ে ধরছেন। গত শুক্রবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্ডোয়ানের সঙ্গে দেখা করেন জ়েলেনস্কি। তার পরেই এই ঘটনা। জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘তুরস্ক থেকে ঘরে ফিরছি। সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি দেশের হিরোদের।’’ কিন্তু কী ভাবে তিনি ওই সেনাদের দেশে ফেরানোর অনুমতি পেলেন, তুরস্কের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, তার ব্যাখ্যা দেননি জ়েলেনস্কি। তবে সমস্ত সহযোগিতার জন্য তিনি প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এর্ডোয়ানকে। তুরস্কের তরফে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
মুক্ত পাঁচ ইউক্রেনীয় সেনা কম্যান্ডার হলেন— ডেনিস প্রোকোপেনকো, শ্বেতোস্লাভ পালামার, সেরি ভলিনস্কি, ওলে কোমেনকো, ডেনিস শ্লেহা। সোশ্যাল মিডিয়ায় জ়েলেনস্কি লিখেছেন, ‘‘অবশেষে পরিবারের সকলের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন ওঁরা।’’ পূর্ব ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে লড়ছেন কম্যান্ডার ম্যাকসিম জোরিন। তিনি বলেন, ‘‘অবশেষে! একটা দারুণ ভাল খবর। ভাইদের শুভেচ্ছা।’’
এ ঘটনায় যারপরনাই ক্ষুব্ধ ক্রেমলিন। তাদের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, ‘‘ওই সেনাদের তুরস্ক থেকে ইউক্রেনে ফেরা, সরাসরি চুক্তিভঙ্গ। চুক্তির যা যা শর্ত ছিল, তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। ইউক্রেন এবং তুরস্ক, দু’পক্ষই সেটা করেছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ‘দলের এই পান্ডাদের’ তুরস্কে থাকার কথা ছিল। আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’’ পেসকোভের বক্তব্য, নিশ্চয়ই নেটোর জোটসঙ্গীরা তুরস্কের উপর চাপ দিয়ে এই কাজ করিয়েছে। সামনেই নেটোর সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে এই ঘটনায় নেটোর সদস্যপদ পাওয়া নিয়ে ফের আশাবাদী হয়েছে ইউক্রেন। যদিও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত কালই বলেছেন, ‘‘আমার মনে হয় না নেটোয় যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ইউক্রেন।’’