প্রতিবাদ: ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিবেশকর্মীদের। শুক্রবার লন্ডনের রাস্তায়। ছবি: রয়টার্স।
তাঁর মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিলেন আরও এক মন্ত্রী। যার জেরে আরও অস্বস্তিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক। মাস ছ’য়েক আগে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রিত্বের ভার নিয়েছেন ঋষি। এর মধ্যেই তাঁর পছন্দের তিন মন্ত্রীকে সরতে হল। তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন দেশের উপপ্রধানমন্ত্রী ডমিনিক রাব। তাঁর বিরুদ্ধে হেনস্থা, নিগ্রহ এবং দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনেছিলেন বেশ কিছু সরকারি আমলা। বর্ষীয়ান আইনজীবী অ্যাডাম টলি গত কাল প্রধানমন্ত্রী সুনককে একটি দীর্ঘ রিপোর্ট জমা দেন। তার পরে আজ সকাল ১০টা নাগাদ নিজেই ইস্তফার কথা জানান রাব।
রাবের পদত্যাগের কথা জানার পর থেকেই বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা একযোগে চাঁছাছোলা ভাষায় সুনককে আক্রমণ শুরু করেছেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, গত কাল রাবের বিরুদ্ধে রিপোর্ট পেশ হওয়ার পরেও কেন তাঁকে নিজে সরালেন না প্রধানমন্ত্রী? কেন একটা গোটা দিন টালবাহানার পরে অভিযুক্ত মন্ত্রী নিজেই ইস্তফা দিলেন? রিপোর্ট পাওয়ার পরে সুনক কাল বলেছিলেন, তিনি বিষয়টি দেখছেন। ব্যস, তার পরে আর কোনও পদক্ষেপ করতে দেখা যায়নি তাঁকে। বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, সুনক এক জন অতি দুর্বল প্রধানমন্ত্রী, তাঁর মতো তাঁর সরকারও ততটাই দুর্বল।
বস্তুত, রাবের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ এই প্রথম নয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের আমলেও তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। ২০২১-এ তালিবান যখন দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তানে ক্ষমতায় এল, সেই সময়ে ব্রিটেনের বিদেশমন্ত্রী ছিলেন রাব। আফগানিস্তানে ক্ষমতা বদলের সময়ে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, ওই রকম এক সঙ্কটকালে আফগানিস্তানে আটকে পড়া ব্রিটিশ নাগরিকদের উদ্ধারের কোনও ব্যবস্থাই করেননি তিনি। এমনকি এত বছর ব্রিটিশ সরকারকে সাহায্য করে আসা আফগান নাগরিকদের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়াননি।
রাব অবশ্য আজ ইস্তফা দিলেও ক্ষমা চাননি। শুধু বলেছেন, ‘‘তদন্তে আমার বিরুদ্ধে হেনস্থার প্রমাণ পাওয়া গেলে আমি পদত্যাগ করব বলেছিলাম। নিজের দেওয়া সেই কথাই রাখলাম।’’ তাঁর আরও দাবি, হেনস্থা বা দুর্ব্যবহারের যে ক’টা অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে জমা পড়েছিল, তার মধ্যে মাত্র দু’টির প্রমাণ মিলেছে।
বিরোধী লেবার পার্টির নেতা কায়ার স্টার্মার আজ বলেছেন, ‘‘যেখানে সুনকের উচিত ছিল রাবকে বরখাস্ত করা, সেখানে অভিযুক্ত মন্ত্রী নিজে পদত্যাগ করলেন।’’ ব্রিটিশ রাজনীতিতে যথেষ্ট দুর্নাম থাকা সত্ত্বেও রাবকে কেন সুনক উপপ্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছেছিলেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধীরা। স্টার্মারের বক্তব্য, ‘‘সরকারের যেখানে এনএইচএস বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এখন মাথা ঘামানো উচিত, সেখানে দেশের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্ব্যবহার নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’
সুনক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার মাসখানেকের মাথায় গত নভেম্বরে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে পদত্যাগ করেন তাঁর মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য গেভিন উইলিয়ামসন। গত ফেব্রুয়ারিতে আর এক মন্ত্রী নাদিম জ়াওয়াহিকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেন সুনক। বিরোধীদের বক্তব্য, তাঁকে প্রধানমন্ত্রী তথা কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেতা হতে সমর্থন করেছেন এমন সবাইকেই সরকারের শীর্ষ পদে রাখতে বাধ্য হয়েছেন সুনক। সেই সব বিতর্কিত ব্যক্তিত্বকে মন্ত্রিসভার সদস্য করার কুপ্রভাব এখন সরাসরি পড়ছে ব্রিটেনের রাজনীতির উপরে।
রাবের ইস্তফার পরপরই গোটা তদন্ত রিপোর্টটি প্রকাশ করেন আইনজীবী টলি। যেখানে বলা হয়েছে, শুধু হেনস্থাই নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহারও করেছেন রাব। রিপোর্টটি প্রকাশ্যে আসার পরে আজ প্রধানমন্ত্রী সুনক বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকেই আমি বলে এসেছি এই সরকার হবে সৎ, দায়িত্বশীল আর পেশাদার। রাব নিজের দেওয়া কথা রেখেছেন। তাঁকে ধন্যবাদ।’’