Prince Harry

সংবাদমাধ্যম ফোনে আড়ি পেতে খবর ছাপত: হ্যারি

এই মামলা সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেই। মামলাকারী স্বয়ং হ্যারি। তাঁর অভিযোগ, সেই ছেলেবেলা থেকে সংবাদমাধ্যম আর পাপারাৎজ়িরা তাঁর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে।

Advertisement

শ্রাবণী বসু

লন্ডন শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩ ০৯:০৭
Share:

লন্ডনের হাই কোর্ট চত্বরে রাজকুমার হ্যারি। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স।

ব্রিটেনের হাই কোর্টে একটি মামলায় সাক্ষ্য আজ উপস্থিত হয়েছিলেন রাজকুমার হ্যারি। গত ১৩০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম রাজপরিবারের কোনও সদস্য কাঠগড়ায় উঠে সাক্ষ্য দিলেন। বিষয়টি নিয়ে ব্রিটেনবাসীর মধ্যে কৌতূহল ছিলই। আজ কোর্টের বাইরে সংবাদমাধ্যম আর সাধারণ মানুষের জমায়েতে তার আঁচ মিলল।

Advertisement

এই মামলা অবশ্য সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেই। মামলাকারী স্বয়ং হ্যারি। তাঁর অভিযোগ, সেই ছেলেবেলা থেকে সংবাদমাধ্যম আর পাপারাৎজ়িরা তাঁর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। ফোনে আড়ি পেতে, ছলে-বলে-কৌশলে হ্যারির একান্ত ব্যক্তিগত এবং স্পর্শকাতর তথ্য হাতিয়ে তারা একের পর এক খবর ছেপেছে কাগজে। এক জীবন ধরে যার মাসুল দিতে হয়েছে হ্যারিকে।

আজ ছিল এই মামলার দ্বিতীয় শুনানি। প্রথম দিনে মেয়ের জন্মদিন থাকায় হাজির হতে পারেননি রাজকুমার। তাঁর অভিযোগ মূলত ‘ডেলি মিরর’ গোষ্ঠীর প্রাক্তন সম্পাদক পিয়ার্স মর্গানের বিরুদ্ধে। আদালতে হ্যারি জানান, ট্যাবলয়েডে প্রকাশিত একের পর এক খবরের আঘাতে এক সময় মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সমস্ত প্রতিবেদনে হ্যারির যে চরিত্র চিত্রণ করা হয়েছিল, তাঁর আশপাশের মানুষেরা রাজকুমারকে সেই চোখেই দেখতে চাইতেন। স্কুলে সহপাঠীরা, সেনা বিভাগের সহকর্মীরা, সাধারণ মানুষ— সকলেই মনে করতেন হ্যারি হয়তো তেমনই একটি মানুষ। ট্যাবলয়েডে তাঁকে নিয়ে যে সব বলা হয়েছে, সে সবই হয়তো সত্যি। হ্যারি নিশ্চয় তেমনই কাজকর্ম করে বেড়ান।

Advertisement

রাজকুমার জানান, যখনই তিনি অচেনা মানুষের ভিড়ে যেতেন, ভয় পেতেন যে সকলেই তাঁকে নিয়ে এ বার আলোচনা করবেন। তাঁর চরিত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া করবেন।

পাশাপাশি, মা ডায়ানার ফোনে আড়ি পাতার বিষয়টিও আজ উল্লেখ করেছেন হ্যারি। মৃত্যুর আগে তিন মাস প্যারিসে প্রচণ্ড আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়েছিলেন যুবরানি। তাঁর ফোনে আড়ি পেতে নানা ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর তথ্য জেনে ফেলেছিলেন এক দল সাংবাদিক। হ্যারির দাবি, বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে সরব হওয়ার পরে তাঁকে নিশানা করেন পিয়ার্স মর্গান। হ্যারি বলেছেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে আমি যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি, যে প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করেছি, তা সবটুকু জানার পরেও বিষয়টি নিয়ে ছেলেখেলা করেছে পত্রিকাগুলি। ব্যক্তিগত তথ্য ছেপেছে শুধুমাত্র নিজেদের ফায়দার কথা ভেবে। এটা অপরাধের শামিল।’’

পাপারাৎজ়িদের নজর এড়াতে কী কী করতে হয়েছে তাঁকে, সেই অভিজ্ঞতাও আজ আদালতে বলেছেন রাজকুমার। পাপারাৎজ়িদের ক্যামেরা এড়াতে এক বার গাড়ির মাল রাখার জায়গায় লুকিয়ে পড়তে বাধ্য হন তিনি। অভিযোগ, ছবি শিকারিদের কোনও সৌজন্যবোধের বালাই ছিল না। নাগালে পেলেই মুখের সামনে হামলে পড়ে একের পর এক ফ্ল্যাশের ঝলকানি দিয়ে শ’য়ে শ’য়ে ছবি তুলে যেতেন তাঁরা। এমনই এক ঘটনায় এক বার হকচকিয়ে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ রাজবাড়ির কনিষ্ঠ রাজপুত্র। বিরক্ত হয়ে সজোরে মুখের উপরে ধেয়ে আসা ক্যামেরাটিকে সরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিষয়টিতে তাঁকে খলনায়ক প্রতিপন্ন করে খবর ছাপল পত্র-পত্রিকাগুলি। শুধু ফোনের কথপোকথন নয়, হ্যারির দাবি, সেই স্কুলবেলা থেকে তাঁর ভয়েসমেল হ্যাক করতেন সাংবাদিকেরা। এই অভিযোগের সাপেক্ষে হ্যারির আইনজীবী ‘ডেলি মিরর, সানডে মিরর, দ্য পিপল নিউজ়পেপার’-এ প্রকাশিত ৩৩টি প্রতিবেদন জমা করেছেন কোর্টে। তাঁর দাবি, ফোনে আড়ি পাতা না হলে, এমন ব্যাক্তিগত তথ্য জানা কখনওই সম্ভব নয়।

অভিযোগ উড়িয়ে দ্য মিরর গ্রুপের আইনজীবী বলেন, তাঁরা বিশেষ সূত্রের মাধ্যমে ওই খবর জোগাড় করেছেন। আড়িপাতার অভিযোগ মিথ্যে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement