দুবাইয়ের প্রবল বৃষ্টিতে জলে ভেসে গিয়েছে বহু গাড়ি। ছবি: রয়টার্স।
মরুভূমি, বালির পাহাড়, প্রখর রোদ, অনাবৃষ্টি— সৌদি আরব কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি মনে পড়লে এ সবই ভেসে ওঠে চোখে। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে আবহাওয়া পুরোপুরি ভোল বদলে ফেলেছে। সপ্তাহখানেক আগে দুবাইয়ের প্রবল বৃষ্টি ও তার পরের বন্যাই এর প্রমাণ। সৌদি আরবেরও একই অবস্থা। দেশের একাংশ বন্যাকবলিত। রিয়াধের রাস্তা বানভাসি। জলে ভেসে গিয়েছে বহু গাড়ি। প্রকৃতির খামখেয়ালে স্তম্ভিত বাসিন্দারাও।
সৌদি কিংবা তার পড়শি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে বছরে বৃষ্টি হয় নামমাত্র। সেখানে এই বানভাসি দশার ব্যাখ্যা হিসেবে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও আইআইটি বম্বে আর্থ সিস্টেম-এর প্রাক্তন শিক্ষক রঘু মুরতুগুড্ডে বলেন, ‘‘বর্ষা যত এগিয়ে আসছে, আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর, ভারতীয় উপদ্বীপের উপরে বায়ুমণ্ডলের ঊর্ধ্ব স্তরে থাকা হাওয়া পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে যাচ্ছে। যা ইন্ডিয়ান ইস্টারলি জেট বা পুবালি জেট নামে পরিচিত। বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে একই রকম শক্তিশালী বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বেও আসে। উত্তর ভারতে আসা এই বায়ু ‘ওয়েস্টারলি জেট’ বা পশ্চিমা জেট নামে পরিচিত।’’ তিনি বলেন, “এই পুবালি জেটবায়ু এবং পশ্চিমা জেটবায়ু ‘অ্যান্টি সাইক্লোন’ পরিস্থিতি তৈরি করছে মার্চের মাঝামাঝি থেকে। অ্যান্টি সাইক্লোনের জেরে বাড়ছে গরম, তৈরি হচ্ছে তাপপ্রবাহ।’’
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, পশ্চিম এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে ভূমধ্যসাগর থেকে আসা পশ্চিমি ঝঞ্ঝা এবং অ্যান্টি-সাইক্লোন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মুরতুগুড্ডে বলেন, “অ্যান্টি-সাইক্লোনের দিকে ছুটে আসে ভূমধ্যসাগর থেকে আসা পশ্চিমি ঝঞ্ঝা। তার জেরে দুবাইয়ে প্রবল বৃষ্টি হয়। ধাপে ধাপে বোঝালে, অ্যান্টি-সাইক্লোনের জেরে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে থেকে নেমে আসা শুকনো বায়ু আরব সাগরের জল শুষে আর্দ্র হয়। এর পরে তা ভূমধ্যসাগর ও সৌদি আরবে তৈরি হওয়া ঘূর্নবাতের দিকে ধাওয়া করে। সেই ভারী ও আর্দ্র বায়ু থেকে প্রবল বৃষ্টি হয় সৌদি ও সংলগ্ন নানা প্রান্তে।’’ সৌদির বন্যারও একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়েছে সমাজমাধ্যমে। দেখা গিয়েছে, রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে ‘খরস্রোতা নদী’। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয় যে, স্কুল-কলেজ-অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়। এক জায়গা থেকে অন্যত্র পরিবহণে কড়াকড়ি হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌদি সরকারও আবহাওয়ার ভোলবদলের কারণ খুঁজতে শুরু করেছে।