রাসায়নিক চুল্লিতে দু’টি বিস্ফোরণ

আরকেমা নামে সেই রাসায়নিক চুল্লির ধোঁয়া শ্বাসে ঢুকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে এক ডেপুটি পুলিশ অফিসারকে। তিনি চুল্লির নিরাপত্তা ব্যবস্থার তদারকি করছিলেন।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

হিউস্টন শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৩৭
Share:

বন্যার ত্রাস তো ছিলই। এ বার সঙ্গে যোগ হল বিস্ফোরণের আতঙ্কও। বন্যার জলের তোড়ে টেক্সাসের কর্সবি-তে স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে একটি রাসায়নিক চুল্লিতে পর পর দু’টি বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে পুরু কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখে দ্রুত আতঙ্ক ছড়ায়। ফের বিস্ফোরণের আশঙ্কায় ওই চুল্লির আড়াই কিলোমিটারের মধ্যে থাকা সব বাসিন্দাকে তড়িঘড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

Advertisement

আরকেমা নামে সেই রাসায়নিক চুল্লির ধোঁয়া শ্বাসে ঢুকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে এক ডেপুটি পুলিশ অফিসারকে। তিনি চুল্লির নিরাপত্তা ব্যবস্থার তদারকি করছিলেন। সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আরও ন’জনকে। তবে টুইটারে হ্যারিস কাউন্টি শেরিফের দফতর জানিয়েছে, আপাতত মনে হচ্ছে ওই ধোঁয়া বিষাক্ত নয়। তবে চুল্লিতে কর্মরত অফিসারদের মতে, ‘‘ওই ধোঁয়া থেকে চোখ, চামড়া ও ফুসফুসে কিছুটা জ্বালা-যন্ত্রণা হতে পারে।’’

বোমন্ট এবং হিউস্টনের মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে এই চুল্লিটি। টেক্সাসে ঘূর্ণিঝ়ড় হার্ভের দাপটে বন্যার পরে এমনটা হতে পারে, আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল ওই চুল্লির অফিসারদের মনে। তাই ওই এলাকায় কড়া নজরদারি চালাচ্ছিলেন তাঁরা। জলের তোড়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে বড়সড় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে— ভেবেছিলেন তাঁরা।

Advertisement

এখন ওই অফিসাররা জানাচ্ছেন, সাধারণত ওই চুল্লির মধ্যে তাপমাত্রা শূন্যের নীচে রাখা প্রয়োজন। কিন্তু প্রচণ্ড বৃষ্টির পরে জল ঢুকে সেখানে তাপমাত্রা শূন্যের নীচে রাখা স্বাভাবিক ভাবেই আর সম্ভব হয়নি। হ্যারিস কাউন্টির তরফে বিস্ফোরণের খবর পাওয়ামাত্র আরকেমার তরফে আশপাশের বাসিন্দাদের বলা হয়, চুল্লির গোটা চত্বরে বিভিন্ন জায়গায় নানাবিধ রাসায়নিক সামগ্রী মজুত রয়েছে। ফলে যে কোনও মুহূর্তে ফের বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে। তাই ওই এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে চুল্লির অফিসাররা বলেছেন, ‘‘যে সব এলাকা খালি করে দেওয়া হয়েছে, সেখানে ফেরার কোনও চেষ্টাই করবেন না। যত ক্ষণ না কর্তৃপক্ষ এলাকাটিকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করছে, ফিরে আসার প্রশ্নই নেই।’’

গত সপ্তাহে হার্ভে আছড়ে পড়ার খবর আসতেই ওই চুল্লিটি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট অফিসাররা। তাঁরা জানিয়েছেন, জলের উচ্চতা পাঁচ ফুটের বেশি ছুঁতেই চুল্লির কর্মীদের এবং ওই চত্বরের বাসিন্দাদের সরানো শুরু হয়ে যায়। কিন্তু তার পরে হার্ভের টানা দাপটে বিদ্যুৎ এবং চুল্লির ভিতরে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ায় সব কিছু ধীরে ধীরে গরম হয়ে যায়। যার ফল হচ্ছে বুধবারের বিস্ফোরণ দু’টি। সংস্থার সিইও রিচ রো এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘বন্যার জল বেড়ে যাওয়ায় আর বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের আর কোনও উপায় ছিল না!’’ তাঁরা আরও জানিয়েছেন, ওই চুল্লির জৈব রাসায়নিক জলে মিশে যাওয়ার খুব সামান্য সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তা থেকে আগুন জ্বলে ওঠার কোনও আশঙ্কা অবশ্য নেই।

দক্ষিণ-পূর্ব টেক্সাসে বন্যায় আরও অনেক তৈল এবং রাসায়নিক চুল্লি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে সেই সব সংস্থা সাময়িক ভাবে ঝাঁপ ফেলতে বাধ্য হয়েছে। দেশের অন্যতম বড় তৈল শোধনাগার ‘কলোনিয়াল পাইপলাইন’ নামে সংস্থা যারা হিউস্টন, ইস্ট কোস্ট, ভ্যালেরো এবং মোটিভার মধ্যে পেট্রোল ও অন্য জ্বালানি সরবরাহ করে, তারাও বেশ কিছু শাখা বন্ধ করে দিয়েছে।

বৃষ্টি থামলেও টেক্সাসে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। ‘‘দক্ষিণ-পূর্ব টেক্সাসে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে’’, সাংবাদিক বৈঠকে বলছেন গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট। হার্ভের হানা এবং বন্যায় টেক্সাসে মৃতের সংখ্যা ছুঁয়েছে ৩৭।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement