ঐতিহাসিক: সিঙ্গাপুরের ক্যাপিলা হোটেলে বৈঠক শুরুর আগে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
হাত মেলাতে গিয়ে তাঁর হাতে প্রায় কালশিটে ফেলে দিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। সেই ছাপ আর জি-৭ বৈঠকের যাবতীয় উত্তাপ নিয়েই সিঙ্গাপুরে এসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ‘কিমের পরশে’ মূহূর্তে যেন তা মিলিয়ে গেল আজ। আহ্লাদে গদগদ ‘বেঁটে রকেটম্যান’-ও। বৈঠকের আগেই ‘মোটা আর খ্যাপাটে’ বুড়োর হাতে হাত রেখে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন বললেন, ‘‘গোটা দুনিয়ার কাছে এই মুহূর্ত নির্ঘাত কল্পবিজ্ঞানের মতো। কিন্তু এটাই বাস্তব।’’
ঐতিহাসিকও বটে। আজ ট্রাম্প-কিমের বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক শেষে জানা গেল, পরমাণু অস্ত্র ছাড়তে রাজি উত্তর কোরিয়া। বিনিময়ে তাদের নিরাপত্তা দেবে আমেরিকা। ধাপে ধাপে চলবে অস্ত্র ছাড়ার কাজ। কোরীয় উপদ্বীপে স্থিতিশীলতা ফেরাতেও অঙ্গীকারবদ্ধ দুই রাষ্ট্রনেতা।
কিন্তু দর কষাকষির কী হল? উত্তর কোরিয়ার উপর থেকে এখনই নিষেধাজ্ঞা তোলার আশ্বাস দেয়নি আমেরিকা। তবু দুই রাষ্ট্রনেতা যে ভাবে পরস্পরের পিঠ চাপড়ালেন, তাতে অতীত ভুলে এগোনোর চেষ্টাটা আপাত স্পষ্ট। ট্রাম্প জানালেন, আগামী দিনেও আরও এমন বৈঠক হবে। শীঘ্রই হয়তো হোয়াইট হাউসেও!
আরও পড়ুন: ইতিহাস গড়ে উচ্ছ্বসিত সিঙ্গাপুর
বয়সে দ্বিগুণ ট্রাম্পকে সম্মান জানাতে আজ বৈঠক শুরুর মিনিট সাতেক আগেই ক্যাপিলায় পৌঁছে যান কিম। ৩৪-এর কিমের পরনে কালো মাও-স্যুট। কালো স্যুট ৭২ বছর বয়সি ট্রাম্পেরও। টাইটা শুধু লাল— উত্তর কোরিয়ার সব চেয়ে পছন্দের রং।
অঙ্গীকার: যৌথ বিবৃতিতে সই ট্রাম্প-কিমের। ছবি: এএফপি।
ঘড়িতে সকাল ৯টা। বৈঠকে ঠিক কী হতে চলেছে, গোটা দুনিয়াকে তার একটা ‘ট্রেলার’ দেখালেন দুই রাষ্ট্রনেতা। ১২ সেকেন্ডের করমর্দন। দু’-চার কথা। তার পরেই হাসিমুখে লাইব্রেরি লাগোয়া প্রাইভেট চেম্বারের দিকে এগিয়ে গেলেন দু’জনে। ট্রাম্প আগে বলেছিলেন, ‘এক মিনিটেই বুঝে যাব কিম কী চান’। আজ অবশ্য তাঁদের একান্তে কথা হল পাক্কা ৩৮ মিনিট। তার পরে নিজ-নিজ প্রতিনিধিদের নিয়ে আরও প্রায় সা়ড়ে ৪ ঘণ্টা। মাঝে লাঞ্চ টেবিল থেকে ঘোষণা হয়ে গেল— খানিক পরেই চুক্তিতে সই করবেন ট্রাম্প-কিম।
একটা সময় সই হয়েও গেল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, ‘‘সারা জীবন তো চুক্তি করেই এসেছি। তাই জানি, কে কখন কী চুক্তি চায়।’’ কিন্তু এটা কি আদৌ চুক্তি? অস্ত্র ছাড়ার সময়সীমা কোথায়! সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে— যৌথ বিবৃতি। আর কূটনীতিকেরা দাবি করছেন, এটা বৈঠকের নির্যাস। বড় জোর চুক্তির খসড়া বলা যায়।
প্রতিনিধি স্তরের বৈঠকে অন্তত তিন বার অস্ত্র ছাড়ার প্রসঙ্গ ওঠে। জবাবে কিম বলেন, ‘‘চ্যালেঞ্জ যে আসবে, সেটা বুঝছি। তবু আশা রাখছি, বৈঠক নিয়ে যাদের সন্দেহ আছে, অচিরেই তা মিটে যাবে।’’ উত্তর কোরিয়াকে সামাল দিতে এখনও ৩০ হাজার মার্কিন সেনা রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। বছর বছর মহড়াও চলে। ট্রাম্প আজ জানান, এই ‘যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা’ প্ররোচনামূলক এবং শান্তিভঙ্গকারী। তাই সোল-ওয়াশিংটন যৌথ মহড়া বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি সেনা প্রত্যাহারেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
আজ ট্রাম্প-কিমের বৈঠকের ভূয়সী প্রশংসা করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। কিম-ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের তাবড় নেতারা। রাশিয়াও কোনও বাঁকা মন্তব্য করেনি। আর বৈঠকের পরে বেজিংয়ের দাবি, উত্তর কোরিয়ার উপরে রাষ্ট্রপুঞ্জের চাপানো আর্থিক নিষেধাজ্ঞাও উঠে যাওয়া উচিত।