এ যেন গেছোদাদা! এটাই ধাঁধা, তিনি কোথায় আছেন এবং কোথায় নেই। ঠিক যেমন সঞ্জয়বাবু।
যিনি ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি (আরআইও)-র শিক্ষক-চিকিৎসক, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ২০১-এর সেপ্টেম্বরে এমসিআই পরিদর্শনের সময়ে তাঁকেই তড়িঘড়ি মুর্শিদাবাদে বদলি করে আনা হয়েছিল। কিন্তু নথি বলছে, ওই সময়ে মাত্র তিন দিন তিনি মুর্শিদাবাদে কাজ করেছেন। তার পরে ফিরে এসেছেন কলকাতায়। সরকারি ভাবে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক থাকা অবস্থায় তিনি আউটডোর করেছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের আরআইও-তে। অস্ত্রোপচার করেছেন। এমনকী বেতনও তুলেছেন কলকাতার হাসপাতাল থেকেই। টানা চার মাস এমনই চলেছে। মুর্শিদাবাদে ওই সময়ে তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজেছেন রোগীরা।
ফের মুর্শিদাবাদে পরিদর্শনে আসতে চলেছে এমসিআই। তার ঠিক আগেই সম্প্রতি স্বাস্থ্য ভবনে এ বিষয়ে যাবতীয় নথি সমেত একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগকারীর বক্তব্য, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে দিনের পর দিন রোগীরা ওই চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। তাঁর অধীনে রোগী ভর্তি করা যায়নি, জমতে থেকেছে না হওয়া অস্ত্রোপচারের সংখ্যাও।
রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র পরিদর্শনের সময়ে ডাক্তারদের উপস্থিতি নিয়ে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। অভিযোগ, কুমির ছানা দেখানোর মতো করে ডাক্তারদের এক মেডিক্যাল কলেজ থেকে আর এক মেডিক্যাল কলেজে ঘোরানো হয়, যাতে এমসিআই-এর পরিদর্শকেরা ডাক্তারের সংখ্যা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন। কিন্তু তাতে আদতে পরিষেবার হাল কী দাঁড়ায়, এ বার হাতেনাতে তার নমুনা জমা পড়ল স্বাস্থ্য ভবনে।
কিন্তু কীসের ভিত্তিতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ সব জেনেশুনেও সঞ্জয়বাবু অর্থাৎ সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে মাসের পর মাস অন্যত্র কাজ করার অনুমতি দিলেন? কীসের ভিত্তিতেই বা আরআইও কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিলেন? আরআইও-র কর্তারা এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মুর্শিদাবাদের অধ্যক্ষ অজয় রায় বলেছেন, ‘‘বিষয়টা আমার খেয়াল নেই। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।’’
কী বলছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক সঞ্জয়বাবু? তিনি প্রথমে বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ বাজে কথা। কে এ সব মিথ্যা রটাচ্ছে?’’ কিন্তু যাবতীয় প্রমাণ সমেত তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে জানার পরে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এমসিআই আসবে বলে এক দিনের নোটিসে আমাকে বদলি করা হয়েছিল। আমার কাজগুলো তো কাউকে বোঝাতে হবে। তাই কলকাতায় গিয়ে কাজ বোঝাচ্ছিলাম।’’
তাতে এত মাস লাগল? সঞ্জয়বাবুর জবাব, ‘‘সরকার যেমন বলেছে তেমন করেছি। এ সব ক্ষেত্রে এই রকমই হয়। সবাই সব জানে।’’ স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন। দিল্লিতে এমসিআই-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এক সদস্য সচিব বলেন, ‘‘একটু-আধটু লুকোচুরি হয়, সেটা আমরাও জানি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা খুব বড় ধরনের মিথ্যাচার। মিথ্যা কথা বলে স্বীকৃতি আদায় করতে গিয়ে আখেরে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। আমাদেরও এ বার এই মিথ্যাচার ধরার জন্য কোনও বিকল্প পদ্ধতির কথা ভাবতে হবে।’’