‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’...!
‘‘ভয়ে গা হিম হয়ে গিয়েছিল! মরার মতো পড়েছিলাম। একেবারে উপুর হয়ে হাত, পা ছড়িয়ে পড়ে ছিলাম মাটিতে। মা-ও একই করম ভাবে শুয়ে ছিলেন, পাশে। যাতে মনে হয়, দু’টি লাশ পড়ে রয়েছে, পাশাপাশি। মরার মতো মাটিতে পড়ে থেকেই শুনতে পাচ্ছিলাম, ঝাঁকে ঝাঁকে গুলির শব্দ। কিছু ক্ষণ থামার পরেই আবার গুলির শব্দ। চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্নাকাটি। ছুটোছুটি, দাপাদাপির শব্দ। পালাচ্ছে সকলে, যে যে ভাবে পারে। অনেকে চেয়ারের তলায় হামাগুড়ি দিয়ে জঙ্গিদের বন্দুকের নিশানা থেকে বাঁচতে চাইছে। কেউ পারছে। অনেকেই পারছে না। গুলি লেগে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। শুনতে পাচ্ছিলাম আর্ত স্বর। ‘ওহ গড’, ‘সেভ মি’, নানা রকমের মন্তব্য।’’
এখনও ভয় যায়নি। তাই পুরো নাম বলতে চায়নি। পদবিটা শুধু বলেছে-লুইস। বাতাক্লাঁ মিউজিক হলেই কাজ করে। মাকে নিয়ে মার্কিন রক গ্রুপের অনুষ্ঠান শুনছিল। পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
ভয়ে ভয়ে বলছিল, ‘‘অনেক কিছুই মনে রাখতে পারিনি। শুধু ভাবছিলাম, এই বুঝি আমাদের দেখতে পেয়ে গেল জঙ্গিরা! আর বেঁচে রয়েছি দেখে গুলি চালিয়ে মেরে ফেলে দিল! জঙ্গিরাও দৌড়চ্ছিল। কোথায়, কে বেঁচে রয়েছে, খুঁজছিল। মরার মতো শুয়ে শুয়েই জঙ্গিদের ভারী বুটের আওয়াজ শুনছিলাম। এই সব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ টের পেলাম, আমার ঘাড়ে কেউ বুটের ডগা দিয়ে ঘা মারছে। জুতো দিয়ে আমার পিঠে টিপে টিপে দেখছে, আমারা দেহে প্রাণ রয়েছে কি না। শুনলাম, ওই জঙ্গিটা বলছে, ‘‘এটা মরে গিয়েছে। অন্য দিকে চল।’’ বলে ওরা গটগট করে অন্য দিকে চলে গেল। ভাগ্যিস! আমি আর মা যেন ধড়ে প্রাণ ফিরে পেলাম। আমরা যেখানে মাটিতে শুয়েছিলাম, হলের সেই দিকটায় ছিল জমাট বাঁধা অন্ধকার। সেই অন্ধকারের মধ্যেই সেঁধিয়ে গিয়ে আমি আর মা তার পর হল ছেড়ে চুপিসাড়ে বেরিয়ে এলাম।’’