টেরেসা মে। ফাইল চিত্র।
সেটা ২০০২-এর কথা। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট দখল করে আছে লেবার পার্টি। টোরিদের জনপ্রিয়তা তলানিতে। কী ভাবে দল ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তাই নিয়ে বৈঠকে বসেছেন কনজ়ারভেটিভ নেতা-নেত্রীরা। টেরেসা মে ঢোকামাত্র সকলের চোখ চলে গেল তাঁর পায়ের দিকে। কালো ট্রাউজ়ার-স্যুট পরা নেত্রীর পায়ে চিতা-ছাপ হিলজুতো। গুরুগম্ভীর রাজনৈতিক সম্মেলনে এ ধরনের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট সে দিন নজর কেড়ে ছিল অনেকেরই।
শুধু জুতো নয়, টেরেসার মে-র আপাদমস্তক ফ্যাশনবোধ নিয়ে বহু চর্চা হয়েছে। বহু দিন আগে এক সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, জাহাজডুবির পরে যদি কোনও একা দ্বীপে আটকে পড়েন, কী কী জিনিস সঙ্গে রাখবেন? টেরেসার উত্তর ছিল— ‘‘ফ্যাশন পত্রিকা ‘ভোগ’!’’ উত্তরটা সেই পত্রিকা-কর্তৃপক্ষের এতই পছন্দ হয়েছিল যে, তাঁরা মাঝেমধ্যেই মলাটে টেরেসার ছবি ছাপেন।
হিলারি ক্লিন্টন বা আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মতো নেত্রীরা সাধারণত প্যান্ট-স্যুটেই নিজেদের ফ্যাশন-পরিচিতি সীমাবদ্ধ রাখেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিন্তু পছন্দ করেন অন্য পথে হাঁটতে। তাঁর জুতো, জ্যাকেট, ড্রেস এবং গয়নার নজরকাড়া ভান্ডার নিয়ে দেশে-বিদেশে চর্চা কম হয় না। তাঁর এই ফ্যাশন সচেতন ভাবমূর্তি নিয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল টেরেসা নিজেও। গত বছর নির্বাচনী প্রচারের সময়ে নিজেই রসিকতা করে জানিয়েছিলেন, তাঁর জুতো দেখেই নাকি অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতির জগতে পা দিয়েছেন এক ব্রিটিশ তরুণী। টেরেসার কথায়, ‘‘আমি সাজতে-গুজতে ভালবাসি। এ নিয়ে আমার কোনও রাখঢাক নেই। এক জন মহিলা যে নিজের কাজটা ঠিক মতো করেও ফ্যাশন সচেতনতা বজায় রাখতে পারেন, সেটাই দেখাতে চাই আমি।’’
শৌখিন: টেরেসার জুতোর সম্ভার। ছবি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে।
শুধু হরেক কিসিমের জুতো-জামা-গয়নাই নয়, ব্যতিক্রমী সাজ-পোশাকেও সাহসী কনজ়ারভেটিভ নেত্রী। ২০১৫-র ‘এশিয়ান বিজ়নেস অ্যাওয়ার্ডস’-এ সালোয়ার-কামিজ় পরে হাজির হয়েছিলেন তিনি। তারও আগে, ২০১০ সালে এশীয় মহিলাদের এক অনুষ্ঠানে হাত-কাটা ব্লাউ়জ় আর আকাশি রঙা শিফন পরেছিলেন তিনি। ২০১৬-তে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারত সফরকালে পরেছিলেন ক্রিম রঙের সাউথ সিল্ক।
তবে তাঁর ফ্যাশনবোধের জন্য সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে মে-কে। একবার ৯৯৫ পাউন্ড (প্রায় এক লক্ষ টাকা)-র ডিজ়াইনার ট্রাউজার্স পরার জন্য নিজের দলেরই এমপি নিকি মর্গ্যানের তোপের মুখে পড়েন টেরেসা। সেই পোশাক সম্বন্ধে নিকি মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘বিয়ের জামা ছাড়া কেউ যে এত দামি পোশাক পরতে পারেন, তা আমার কল্পনার বাইরে।’’ পরে অবশ্য টেরেসা জানান, ওই ডিজ়াইনার ট্রাউজার্সটি তিনি কেনেননি। একটি পোশাক নির্মাতা সংস্থার অনুরোধে কিছু ক্ষণ সেটি পরেছিলেন। দলীয় এমপি নিকিকে তারপর বেশ কয়েক মাস ১০ নম্বর ডাউনিংয়ে ঢুকতে দেননি প্রধানমন্ত্রী।