Earthquake in Bangkok

ব্যাঙ্কক শহরটা রাস্তায় নেমে এসেছে

স্পষ্ট অনুভব করলাম, পায়ের তলায় মাটি নড়ছে। মিনিট পাঁচেক পর থেকে ফোনে স্রোতের মতো মেসেজ ঢুকতে লাগল। বুঝলাম, ভয়াবহ ভূমিকম্পের সাক্ষী হয়ে রইলাম আজ।

অনিতা বসু

শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৫ ০৭:১৬
Share:
ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ছে নির্মীয়মান বহুতল।

ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ছে নির্মীয়মান বহুতল। ছবি: পিটিআই।

ব্যাঙ্কক থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে সারাবুরিতে কয়েক দিনের জন্য রয়েছি আমরা। আজ দুপুরে দেড়টা নাগাদ একতলার ঘরে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। হঠাৎ মনে হল মাথাটা ঘুরছে। ভাবলাম, শরীরটা খারাপ করছে হয়তো। পরের মুহূর্তেই ভুল ভাঙল। মনে হল, চেয়ারশুদ্ধু আমায় ধরে কেউ নাড়া দিচ্ছে। শরীর জুড়ে একটা অদ্ভুত অস্বস্তি। স্পষ্ট অনুভব করলাম, পায়ের তলায় মাটি নড়ছে। মিনিট পাঁচেক পর থেকে ফোনে স্রোতের মতো মেসেজ ঢুকতে লাগল। বুঝলাম, ভয়াবহ ভূমিকম্পের সাক্ষী হয়ে রইলাম আজ।

ব্যাঙ্ককে আমরা যে বহুতলে থাকি, সেখানের ওয়টসঅ্যাপ গ্রুপে পরপর প্রতিবেশী আর বন্ধুদের মেসেজ ঢুকছিল। কেউ লিখেছে, রান্নাঘরের টাইলসে ফাটল ধরেছে। কেউ জানিয়েছেন, দেওয়াল থেকে ফটোফ্রেম পড়ে ভেঙে গিয়েছে। বহু বাড়ির দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ওখানে আমার বন্ধ ফ্ল্যাটের কী অবস্থা কে জানে! ভূমিকম্পের ঠিক পরেই ব্যাঙ্ককের প্রশাসন জরুরি অবস্থা জারি করেছে। ওখানের বন্ধুদের কাছে শুনলাম, সমস্ত বহুতল খালি করে সকলকে খোলা আকাশের নীচে নেমে আসতে বলা হয়েছে। সেই দুপুর থেকে সন্ধে নামার আগে পর্যন্ত সকলে আজ বাড়ির বাইরে কাটিয়েছেন। স্কুল, কলেজ এমনকি হাসপাতালেও ওই নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। এমনিতে এখানের প্রশাসন খুবই তৎপর। ছাদহীন, বিধ্বস্ত মানুষের জন্য সমস্ত পার্কগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। বসার
জন্য চেয়ার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা রেখেছে প্রশাসন। ফোনে সরকারি বার্তায় বারবার বোঝানো হচ্ছে, বাইরে পরিস্থিতি কেমন, কী কী করণীয়। ফলে সন্ধের মধ্যে প্রাথমিক ভয়টা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।

তবে গণপরিবহণে বিঘ্ন ঘটায় কাজের জন্য ব্যাঙ্ককে আসা বহু মানুষ আটকে পড়েছেন। এখানে রোজ পাতাল রেল আর স্কাই রেলে লক্ষ লক্ষ মানুষ যাতায়াত করেন। আজ ভূমিকম্পের পর থেকে সমস্ত ট্রেন বন্ধ। প্রবল যানজটে আটকে পড়েছেন মানুষ। আমার এক পরিচিত অধ্যাপক ব্যাঙ্কক বিমানবন্দরে নেমেছিলেন। ট্যাক্সির জন্য লাইন দিয়ে টোকেন পেয়েছেন ৮৭০ নম্বরে। আর এক বান্ধবী ফোনে জানালেন, দুই ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে আটকে রয়েছেন। ব্যাঙ্ককের রাস্তায় পেট্রোল পাম্পগুলিতে সব সময় পর্যাপ্ত খাবার, জল, জ্বালানি ও অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করা থাকে। যাতে পথচলতি মানুষের অসুবিধা না হয়। গোটা শহরটা কার্যত রাস্তায় নেমে আসায় আজ পেট্রোল পাম্পগুলিতেও পানীয় জল ফুরিয়ে যাচ্ছিল।

গত ১০ বছর ধরে তাইল্যান্ডে রয়েছি। এত ভয়াবহ কম্পনের মুখোমুখি হইনি কখনও। এর আগে ২০১৭ সালে এখানে যখন বড়সড় ভূমিকম্প হয়, তখন আমরা ব্যাঙ্ককেই ছিলাম। ২৯ তলার আবাসনে অনেকখানি দুলুনি টের পেয়েছিলাম। তবে এ বারের অভিজ্ঞতা সেই স্মৃতিকেও ছাপিয়ে গেল। আজ সারা রাত ‘আফটার শকের’ সতর্কতা জারি করেছে প্রশাসন। ফলে রাতটা খানিক দুশ্চিন্তা নিয়েই ঘুমোতে যাব আমরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন