ছবি: রয়টার্স।
সিটবেল্ট বেঁধে বসে পড়তেই আপনা থেকে চলতে শুরু করল গাড়ি...।
কোনও কল্পবিজ্ঞানের গল্প নয়, হলিউডের কোনও ফিল্মও নয়, একেবারে সত্যি ঘটনা। এ মাসেই আমেরিকার রাস্তায় দেখা মিলবে এ হেন ‘স্বয়ংক্রিয়’ গাড়ির। এশিয়া, ইউরোপকে অপেক্ষা করতে হবে আরও ক’টা দিন।
খুব শিগগিরি যে এমন কিছু ঘটতে চলেছে, আগেই তা শোনা গিয়েছিল। কানাঘুষো খবর ছিল ফোনের পর এ বার ‘স্মার্ট-কার’-এ হাতেখড়ি করতে চলেছে ‘অ্যাপল’। কিন্তু সে সব জল্পনা উড়িয়ে অ্যাপলকে টেক্কা দিয়ে তাদের আগেই অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় গাড়ি আনছে টেসলা।
সিলিকন ভ্যালিতে এ নিয়ে চর্চাও চলছে প্রভূত। নিন্দুকেরা অনেকেই বলছেন, আসলে অ্যাপলের লোক ভাঙিয়ে নিয়ে গিয়েছে টেসলা। প্রমাণ হিসেবে তারা দেখাচ্ছে, গত কয়েক মাসে কত জন কর্মী অ্যাপল থেকে টেসলায় গিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কিন্তু এ সব বিতর্ককে পিছনে ফেলে দিয়েছে টেসলার নয়া গাড়ির ‘গ্ল্যামার’।
পুরোপুরি ‘অটোমেটিক’ ও ‘ডিজিট্যাল’!
কী রকম?
গন্তব্য কোথায়, গাড়িকে সেটা জানিয়ে দিলেই হল..., সিটবেল্ট লাগিয়ে স্টিয়ারিং-এ হাত দিয়ে বসে পড়লেই গাড়ি চলতে শুরু করবে। স্টিয়ারিং-এর অবশ্য কোনও ভূমিকা নেই। তবু হাত রাখতেই হবে তাতে। টেসলা-র চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার এলন মাস্কের কথায়, ‘‘নতুন প্রযুক্তি, এ অবস্থায় একটু সতর্ক থাকতে চেয়েছি আমরা। তাই স্টিয়ারিং-এ হাত রাখার কথা বলছি... যদি কোনও বিপদ ঘটে।’’
এ-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন মাস্ক, কেউ পরীক্ষা করে দেখতে চাইলেও স্টিয়ারিং থেকে হাত তুলতে পারবে না। সেটা করলেই গাড়ির ড্যাশবোর্ডে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে কতগুলি লেখা, ‘স্টিয়ারিং হুইলে হাত রাখুন!’’ না মানলে গাড়ি থেমে যাবে।
তবে তাদের আবিষ্কার যদি সফল হয়, সে ক্ষেত্রে কালে কালে যে রাস্তাঘাটে এমন গাড়িই চলতে দেখা যাবে, যেখানে কোনও চালক-আসনই নেই, সে বিষয়ে নিশ্চিত তিনি।
আরও বেশ কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে ‘এস সেডান’ মডেলের গাড়িটিতে। কেউ বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালালেই বিপদসঙ্কেত দেখাতে শুরু করবে সে। চালক সতর্ক না হলে ধীরে ধীরে গাড়ির গতি কমে যাবে। শেষে একেবারে থেমে যাবে। মাস্ক বলেন, ‘‘স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিচ্ছি, গাড়ি স্বয়ংক্রিয় বলে দুর্ঘটনার দায় এড়ানো যাবে না... একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে গাড়িটি।’’ গাড়ির মালিককে বারবার করে বলে দেওয়া হবে, ‘অটোস্টিয়ার’ হলেও সব সময় স্টিয়ারিং হুইলে হাত রাখতে হবে।
আরও বেশ কিছু চমক রয়েছে এই স্মার্ট গাড়িতে। টেসলার প্রতিটি গাড়ি একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকবে একটি নেটওয়ার্কের সাহায্যে। মাস্ক বলেন, ‘‘সব ক’টা গাড়ি একটা নেটওয়ার্কের মতো কাজ করবে। একটা গাড়ি যখন নতুন কিছু শিখবে, অন্য গাড়িগুলোও আপনা থেকে তা শিখে ফেলবে।’’ অর্থাৎ ধীরে ধীরে যত বেশি লোক ‘অটোপাইলট’-এ ঝুঁকবে, ততই গাড়ি চালানো, রাস্তাঘাট, পথনির্দেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে স্মার্ট কার। আর এই সবটাই হবে ওই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। আইফোন কিংবা ব্ল্যাকবেরিতে যেমন রয়েছে নিজেদের নেটওয়ার্ক, ‘আই-মেসেজ’ বা ‘বিবিএম’, অনেকটা তেমনই। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা।
মাস্ক জানালেন, টেসলার তরফে প্রস্তুতি শেষ। এ বার শুধু বাজারে আসার অপেক্ষা। উৎকণ্ঠায় দিন গুনছেন তাঁরা।
আর গাড়ি-প্রেমীরাও...।