আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরুর আগে ঢাকায় পুলিশি তৎপরতা। ছবি: এক্স।
পদ্মাপারে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর রবিবার প্রথম কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ঢাকায় শহিদ নূর হোসেন চত্বর থেকে প্রতিবাদ মিছিল ডেকেছিল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। মিছিল শুরুর কথা ছিল ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটেয়। কিন্তু সেই মিছিল হতেই দিল না পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের দাবি, এই কর্মসূচির জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি।
শনিবার থেকেই শুরু হয়েছিল পুলিশি ধরপাকড়। ঢাকা থেকে আওয়ামী লীগের ১০ জন সমর্থককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি-সহ প্ল্যাকার্ডও পাওয়া গিয়েছিল তাঁদের থেকে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক নষ্টের অপচেষ্টা চালানো হচ্ছিল। যদিও ধৃতের নাম-পরিচয় উল্লেখ করেনি পুলিশ।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘বিডি নিউজ় ২৪’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে ঢাকা-সহ সে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ’ (বিজিবি)-র ১৯১টি প্ল্যাটুন মোতায়েন করা হয়েছিল।
১৯৮৭ সালে ১০ নভেম্বর মৃত্যু হয়েছিল আওয়ামী লীগের যুব সংগঠন যুবলীগ কর্মী নূর হোসেনের। সে দিন এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর দিন তাঁর পিঠে ও বুকে লেখা ছিল ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। রবিবার সেই নূর হোসেন চত্বর থেকেই বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে পুলিশ আগে থেকেই সতর্ক ছিল। হাসিনার দলের ওই মিছিল ‘অবৈধ’ বলে ব্যাখ্যা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিরাও।
মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম উপদেষ্টা সজীব ভুঁইয়া সরকারের অবস্থানও স্পষ্ট করে দেন। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “গণহত্যাকারী কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর ব্যবস্থা নেবে।”
সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুসারে, রবিবার সকালে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বেশ কয়েক জনকে মারধর করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী স্লোগান তুলতে তুলতে তাঁদের উপর চড়াও হন একদল উন্মত্ত জনতা। যাঁরা হামলা চালিয়েছিলেন, বা যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন— দু’পক্ষেরই কোনও রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। তবে হামলাকারীদের মুখে ‘জিয়ার সৈনিক এক হও’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধরে ধরে জবাই কর’ স্লোগান শোনা গিয়েছে। পরে ‘আক্রান্ত’ পক্ষেরই বেশ কয়েক জনকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচির পাল্টা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফেও গণজমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছিল রবিবার। আওয়ামী লীগ যেখান থেকে মিছিল শুরু করার কথা ছিল, তার থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরেই দুপুর ১২টা নাগাদ শুরু হয়েছিল গণজমায়েত। ভিড়ও হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সারিজস আলমেরা উপস্থিত ছিলেন সেখানে। হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠতে দেখা গিয়েছে গণজমায়েতের মঞ্চ থেকে।